ইউক্রেন দখলেই কী থামবেন পুতিন?
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১:১৫ পূর্বাহ্ণইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে রাখার চেষ্টা কম করেনি পশ্চিমা দুনিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে মস্কো ছুটে গেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ থেকে শুরু করে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের মতো নেতারা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যাবতীয় কূটনীতিকে ব্যর্থ করে দিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইউক্রেন দখলেই কী থামবেন পুতিন? বিশেষ করে সাবেক সোভিয়েত ইউনিভুক্ত দেশগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে এরইমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শেষ না হতেই অন্যদেরও হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করেছে রাশিয়া। শুক্রবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা প্রকাশ্যেই বলেছেন, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দিতে চাইলে তাদেরও জবাব দেবে মস্কো।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া তার এই ভাষণের একটি অংশ এরইমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে শুরু করেছে; যেখানে তিনি ‘গুরুতর সামরিক-রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার’ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এটি তিন লাখের বেশি ভিউ হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের নিরাপত্তার ভিত্তি যেন অন্য দেশের নিরাপত্তার ক্ষতি না করে না।’ তিনি বলেন, ন্যাটো একটি সামরিক জোট। স্পষ্টতই সেখানে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের যোগদানের গুরুতর সামরিক-রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হবে।’
সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ইউক্রেনকে সমর্থন দিচ্ছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বিষয়টি নিশ্চিত করার পরই এমন প্রকাশ্য হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে রাশিয়া। এ ঘটনা ইঙ্গিত দেয়, পুতিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এক ইউক্রেনেই থামবে না। বরং এই উদ্বেগ মাথায় রেখেই চলতে হবে পশ্চিমাদের।
পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আগে থেকেই পশ্চিম বলকান অঞ্চলে রাশিয়ার সম্ভাব্য কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে গভীর নজর রাখছেন।
যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ইউক্রেন দখলের পর ভ্লাদিমির পুতিন পূর্ব ইউরোপে আরও অগ্রসর হতে চাইবেন। পুতিন ইউক্রেনের বাইরে অগ্রসর হতে চান; এমন গোয়েন্দা তথ্য আছে কি না?
বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যম সিবিএসের এমন প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন যে ঠিক এটাই চান সেটি বলার জন্য গোয়েন্দা তথ্যের প্রয়োজন পড়ে না। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি সোভিয়েত সাম্রাজ্য পুনর্গঠন করতে চান। তিনি প্রতিবেশী দেশগুলোর চারপাশে একটি প্রভাব বলয় পুনরুদ্ধার করতে চান যেগুলো এক সময় সোভিয়েত ব্লকের অংশ ছিল।’
স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, বেলারুশিয়ান শহর ব্রেস্ট-এ পোলিশ সীমান্তের মাত্র ১০ মাইল পূর্বে রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি দেখা গেছে। এরপরই পুতিনের সোভিয়েত সাম্রাজ্য পুনর্গঠনের বাসনা নিয়ে কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পেন্টাগনের জাতীয় নিরাপত্তা প্রতিবেদক জ্যাক ডেটশের মতে, মস্কো শহরটির কাছাকাছি একটি প্রশিক্ষণ এলাকায় ভারী সরঞ্জাম পরিবহনকারী অর্ধশত জনকে জড়ো করেছে। ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের সংবাদদাতা জানিয়েছেন, কাছাকাছি একটি রেলইয়ার্ডে আরও সরঞ্জাম যুক্ত করা হয়েছে। ঠিক কেন রাশিয়া এই সেনাসমাবেশ ঘটাচ্ছে সেটি স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা, ইউক্রেনের বাইরেও পুতিনের লক্ষ্য থাকতে পারে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিঙ্কেনের মতে, ইউরোপ জুড়ে রাশিয়ার অগ্রসর হওয়ার পথে ‘খুব শক্তিশালী কিছু একটা দাঁড়িয়ে আছে’।
অ্যান্টনি বিঙ্কেন বলেন, ন্যাটোর প্রতিষ্ঠাকালীন চুক্তির পঞ্চম অনুচ্ছেদের অর্থ দাঁড়ায়, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি বা রোমানিয়ায় আক্রমণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা এবং অন্যান্য সদস্যদের সংঘাতের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। ন্যাটোর একটি সদস্য রাষ্ট্রের ওপর হামলা মানে এই জোটের সব সদস্যদের ওপর হামলা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন খুব স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, আমরা ন্যাটো অঞ্চলের প্রতিটি ইঞ্চি ভূখণ্ড রক্ষা করবো। ইউক্রেনের বাইরে রুশ বাহিনীর সম্প্রসারণে পুতিনের জন্য এটিই হবে ‘সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিবন্ধক।’
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, পুতিন বিচারশক্তি সম্পন্ন মানুষ নন। ইউক্রেনের পরই হয়তো তিনি থেমে যাবেন না। তিনি বাল্টিক অঞ্চলের দেশগুলোতে আধিপত্য বিস্তার করতে চান, যেগুলোকে তিনি ‘সত্যিকারের দেশই’ বলেই মনে করেন না। তার বিরুদ্ধে সবাইকে দাঁড়াতে হবে।
পুতিন অবশ্য বেলারুশের ওপর তার সুসংহত নিয়ন্ত্রণের জন্য গর্ব করতে পারেন। এই দেশটি রুশ সেনাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য সেখানে থাকার অনুমতি দিয়েছে। ইউরোপের একটি দেশে তিনি রুশ বাহিনী মোতায়েন করেছেন যখন পুরো দুনিয়ার চোখ ছিল অন্যটির (ইউক্রেন) দিকে।
সমালোচকদের মতে, সোভিয়েত ইউনিয়ন পুনর্গঠন করতে চান পুতিন। পুতিনের দৃষ্টিতে বলশেভিকরা ইউক্রেনের কৃত্রিম প্রজাতন্ত্র তৈরি করেছিল। তিনি যা পুনর্নির্মাণের স্বপ্ন দেখেন সেটি সোভিয়েত ইউনিয়ন নয়, বরং ১৯১৭-এর আগের রুশ সাম্রাজ্য। নিউজউইক, সিএনএন, মেট্রো অবলম্বনে।