সিলেটে পশুর হাট : মানছে না স্বাস্থ্যবিধি
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জুলাই ২০২০, ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণআর মাত্র একদিন, (১ আগস্ট) পবিত্র ঈদুল আজহা। করোনাভাইরাসের মহমারী পরিস্থিতির জন্য এবারে সিলেট নগরীর ভেতরে একটি এবং শহরতলিতে বসেছে আরেকটি পশুর হাট। এরমাঝে একটি স্থায়ী এবং অপরটি অস্থায়ী। করোনার সংক্রমণ রোধেই এমনটি করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রাণঘাতি ভাইরাস ঠেকাতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য বেঁধে দিয়েছেন জরুরি নিয়ম।
কিন্তু সিলেটের দু’টি হাটের কোনোটিতেই মানা হচ্ছে না সরকার কর্তৃক নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি। এমনকি মুখে মাস্কবিহীন শিশুদের নিয়ে অনিরাপদ দূরত্বে পশুর হাটে লোকজনকে ঘুরোঘুরি করতে দেখা গেছে। এতে সিলেটে করোনার সংক্রমণ আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট নগরীর কাজিরবাজারের স্থায়ী পশুর হাট এবং দক্ষিণ সুরমার পারাইরচকস্থ অস্থায়ী পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির পশুর চারপাশে শুধু ক্রেতা-বিক্রেতার জটলা। বেশিরভাগ মানুষের মুখেই মাস্ক নেই। কেউই সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। ক্রেতাদের সঙ্গে বেশ কিছুসংখ্যক শিশুরও দেখা মেলে। এভাবে অবাধে ঘুরে বেড়ানোর কারণে সিলেটে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গতকাল বুধবার (২৯ জুলাই) কাজিরবাজার হাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ছোট, মাঝারি ও বড় আকারের কয়েক শ গরু বিক্রির জন্য সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারা কোনো সামাজিক দূরত্ব না মেনেই গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে দর-দাম করছেন। অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতারই মুখে মাস্ক নেই। বেশ কিছু ক্রেতার সঙ্গে এসেছে তাঁদের শিশুসন্তানেরাও। এসব শিশুর মুখেও মাস্ক নেই। কয়েকজন ক্রেতাকে হাত ধরাধরি করেও ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে।
একপর্যায়ে কথা হয় গরু কিনতে আসা নগরীর সুবিধবাজার এলাকার আতিক মিয়া নামের একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, কোরবানির জন্য পশু পছন্দ করতে বুধবার প্রথম আসছেন কাজিরবাজার হাটে। তিনি বলেন, হাটে ক্রেতা কম। বাজারে ছোট গরুর চাহিদা বেশি। তবে দেশি গরু কম, ফার্মের গরুই বেশি। ঈদের দু-একদিন আগে ক্রেতা সমাগম ঘটতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নগরীর শিবগঞ্জ এলাকার আবদুল মতিন নামের এক চাকরিজীবি তাঁর দুটি অল্প বয়সী ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে হাটে এসেছেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘গরু কিনার লাগি সকাল থাকিও ঘুরাইরাম। একটার দরদাম করছি। দাম কয় ৭০ হাজার টেখা। দামটা একটু বেশিই মনও অর। আরেকটু ঘুরাঘুরি করিয়া দেখি কিতা করা যায়।’ ছেলেদের কেন নিয়ে এসেছেন, করোনাকে ভয় পান না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এমনিতেই গরু দেখার লাগি তারারে লইয়া আইছি। তারর একটা খুশি আছেনানি? আর সিলেট তো এখন করোনার তেজ কমিযার।’
সিলেটের বিশ্বনাথ থেকে বিক্রির জন্য গরু নিয়ে আসা নুর মিয়ার নামের একজন জানান, হাটে বিক্রির জন্য ১০টি গরু নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে দুটি গরু বিক্রি হয়েছে। বেশির ভাগ ক্রেতাই দর কষাকষি করে চলে যান। করোনার কারণে এবার হাটে ক্রেতার সংখ্যাও কম।
তবে তিনি মনে করেন, ঈদের আগের দুইদিন ক্রেতার সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা আছে।
হাটের পরিস্থিতি ভয়াবহ উল্লেখ করে মো. ওয়াদুদ নামের একজন বলেন, ‘কোরবানির গরু কিনতে ওই হাটে এসেলাম। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে বুকে ভয় ঢুকে গেছে। দূরত্বের বালাই নাই। ক্রেতা-বিক্রেতারা গা–ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়াচ্ছে। অনেকের মুখেই মাস্ক নাই। কেউ কেউ মাস্ক পরলেও ঝুলিয়ে রাখছে। জটলা করে মানুষ গরুর দরদাম করছে। এতে সিলেটে করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়ছে।’
এ বিষয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি