নারী নির্যাতনের বিচার চায় – সারা

জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ অক্টোবর ২০২০, ২:৫৪ অপরাহ্ণ
“আমার ওপর নির্মম নির্যাতন হয়েছে। শারীরিক নির্যাতন সহ্য করেছি, এখন মানসিক নির্যাতন চলছে। এর চেয়ে আমাকে মেরে ফেললেও ভালো হতো। ফেসবুকে আমাকে ‘চরিত্রহীন’ প্রমাণ করার জন্য যুবায়ের আদনান ও তাঁর সহযোগীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। এতে আমি বিষণ্নতায় ভুগছি। আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছাটুকু ফিকে হয়ে যাচ্ছে।” গতকাল শুক্রবার কষ্ট আর ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন ঝালকাঠির ‘স্বর্ণকিশোরী’ খেতাপপ্রাপ্ত কলেজছাত্রী নাছরিন আক্তার সারা।
প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় গত ২ অক্টোবর দুপুরে ঘরে ঢুকে সারার ওপর হামলা চালান যুবায়ের আদনান নামের এক যুবক। নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য যে তরুণী আন্দোলন করে যাচ্ছেন, তিনিই এখন নির্যাতনের শিকার।
কালের কণ্ঠ’র শুভসংঘের সদস্য ও ঝালকাঠি আকলিমা মোয়াজ্জেম ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সারা বলেন, ‘বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে মেয়েদের মুক্ত করতে আন্দোলন করে যাচ্ছিলাম, সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে মিশে নারীদের উন্নয়নে নানা কর্মসূচি পালন করেছি। আজ নিজেই তার শিকার হচ্ছি। আমি ভাবিনি জীবনে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।’
গতকাল দুপরে ঝালকাঠি শহরের ফকিরবাড়ী এলাকায় সারার বোনের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে কাঁদছেন সারা। চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। বোন আখিনুর আক্তার শহরের একটি বিউটি পার্লারে কাজ করেন। ফলে বোনের দুই সন্তানকে দেখাশোনা করেন সারা। এ কারণে বোনের বাসায় থাকেন তিনি।
অভিযোগে জানা যায়, ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের একটি মসজিদের ইমাম জাকির হোসেনের ছেলে জুবায়ের আদনান বেশকিছু দিন ধরে নাছরিন আক্তার সারাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। সারা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে আদনান ক্ষিপ্ত হন। প্রায়ই পথেঘাটে সারাকে উত্ত্যক্ত করেন। গত ২ অক্টোবর দুপুর ১টার দিকে আদনান ফকিরবাড়ী সড়কের সারার বোন আখিনুরের ভাড়া করা বাসার দরজায় নক করেন। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে আদনান সারার ওপর হামলা চালান। মারধর ও গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে সারা জ্ঞান হারালে আদনান পালিয়ে যান। খবর পেয়ে বড় বোন ও প্রতিবেশীরা সারাকে ঝালকাঠি সদর থানায় নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ব্যাপারে ওই দিন রাতে ঝালকাঠি থানায় সারা একটি মামলা করেন। এরপরই শুরু হয় ফেসবুকে সারাকে নিয়ে আদনানের সহযোগীদের স্ট্যাটাস। কল্পকাহিনি জুড়ে সারাকে হেয় প্রতিপন্ন করে তারা। এতে অসুস্থ সারা মানসিকভাবে আরো ভেঙে পড়েন। হাসপাতাল থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে বোনের বাসায় ফেরেন। কিন্তু মামলা তুলে নিতে একের পর এক চাপ আসে তাঁর পরিবারের কাছে। মীমাংসায় বসতে তাদের বিভিন্ন মহল থেকে হুমকি দেওয়া হয়। কিন্তু নিজের ওপর নির্যাতনের বিচারের দাবিতে অটল সারা।
এদিকে ঘটনার এক সপ্তাহ পরও আসামিকে ধরতে পারেনি পুলিশ। এতে সারা ক্ষুব্ধ হয়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝালকাঠি থানার সামনে অনশনে বসেন। প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সারা। সেখানে ভিড় করে অসংখ্য মানুষ। খবর পেয়ে সারার বোন ও ভগ্নিপতি গিয়েও কান্নায় ভেঙে পড়েন। ঘটনার বিচারের দাবি জানান। পরে পুলিশ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অনশন ভাঙেন সারা।
সারা বলেন, ‘আমি তাঁকে (আদনান) বলেছি, যদি পারেন আমার বাসায় গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন। আমাদের পরিবার থেকেও তাঁর বাবাকে বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু ওর পরিবার বিয়েতে রাজি না।’
সারার বোন আখিনুর আক্তার বলেন, ‘সারার ওপর হামলার সময় আমার ছোট দুই সন্তান ছিল। তারা খুব ভয় পেয়েছে। আজকে যদি সারাকে মেরে ফেলত, তাহলে সাক্ষী হিসেবে আমার দুই সন্তানকেও সে মেরে ফেলত। আপস নয়, আমরা বিচার চাই।’
সদর উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার বলেন, ‘আমরা সারার পাশে আছি। তাঁকে সব ধরনের সহযোগিতা করব। দোষীকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’
ঝালকাঠির ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. হাবীবুল্লাহ বলেন, ‘সারার মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক এনামুল তদন্ত করছেন। বৃহস্পতিবার রাতে আমি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ সারাদের বাসায় গিয়ে তাঁকে সঠিক বিচারের আশ্বাস দিয়েছি। মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ার জন্য সাহস জুগিয়েছি। আশা করি, অল্পসময়ের মধ্যেই আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবে পুলিশ।’

