হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা পাহাড় কাটা চলছেই। গত তিন মাসে অন্তত পাঁচটি পাহাড় কাটা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের দেওপাড়া গ্রামে একটি পাহাড়ের অংশবিশেষ কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এতে ফুল মিয়া নামের এক ব্যক্তির বাড়ি ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পাহাড় কাটা বন্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ করেন ফুল মিয়া। এই পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উত্তম কুমার দাশ। তিনি পাহাড় কাটা বন্ধ রাখতে এবং সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের নির্দেশ দেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ফুল মিয়ার বসতবাড়ির পাশে প্রায় ২০ ফুট উঁচু একটি পাহাড় ছিল। পাশের বাড়ির অলিদ মিয়া ও সাজ্জাদ মিয়া হঠাৎ রাতের আঁধারে খননযন্ত্র দিয়ে কেটে পাহাড়ের প্রায় ১০ হাত অংশের মাটি বিক্রি করে দেন। এতে ফুল মিয়ার বাড়িটি ঝুঁকিতে পড়েছে। যেকোনো মুহূর্তে এই বসতঘর ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদস্যরা সমাধানের চেষ্টা করেন। তাঁরা ব্যর্থ হলে ফুল মিয়া প্রতিকার চেয়ে ইউএনওর কাছে লিখিত দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন যুবক আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুধু ফুল মিয়ার বাড়ির কাছে পাহাড় কাটাই নয়, কয়েক মাস ধরেই এলাকায় বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির নেতৃত্বে পাহাড়ের মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।

একটি চক্র নির্বিচারে বিভিন্ন এলাকার পাহাড় ও টিলার মাটি কাটছে। এ সব কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বড় একটি অংশ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের শক্ত ভূমিকা নেই বলেই চক্রটি পরিবেশবিরোধী ও ধ্বংসাত্মক এই কাজ প্রকাশ্যে করতে পারছে।

হবিগঞ্জ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, প্রশাসন মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেলজরিমানা করছেন। তবুও পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না। পাহাড় কাটা নিয়ে গত পাঁচ বছরে নবীগঞ্জে কোনো মামলা হয়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেলজরিমানার পাশাপাশি পরিবেশ ধ্বংসে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করা হলে এবং নজরদারি বাড়ালেই পাহাড় কাটা বন্ধ করা সম্ভব হবে।

গজনাইপুর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুব আলী নুরু বলেন, ‘এখানে একটি পাহাড় কাটা হচ্ছিল, খবর পেয়ে বিষয়টি আপস মীমাংসা করা হয়েছে। আসলে ফুল মিয়ার বসতঘরের পাশে এভাবে পাহাড় কাটা ঠিক হয়নি।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পাহাড় কাটার সত্যতা পাওয়া গেছে। অলিদ মিয়াকে বলা হয়েছে দ্রুত ফুল মিয়ার বাড়ির পাশে সীমানাপ্রাচীর তৈরি করে দেওয়ার জন্য। অন্যথায় তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’