দিনারপুরে পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের নির্দেশ

জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৩৪ অপরাহ্ণ
সংবাদ প্রকাশের জের ধরে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুরে পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে চার সপ্তাহের মধ্যে আইনগত পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেন। এদিকে দিনারপুরের পাহাড় কাটার বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে নিয়ে আসায় পথিতযশা আইনজীবি মনজিল মোরসেদ-এর প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল।
জানা যায়- বছরের অধিকাংশ সময় নবীগঞ্জের দিনারপুর পরগণার পানিউমদা, গজনাইপুর ও দেবপাড়া ইউনিয়নে পাহাড় ও টিলা কাটা চলছে। দিনে কিংবা রাতের আধাঁরে অতি সু-কৌশলে পাহাড় কেটে উজার করে নিয়ে যাচ্ছে একটি সংঙ্ঘবদ্ধ চক্র। গত কয়েকদিন ধরে দিন-দুপুরে এবং রাতভর দেবপাড়া ইউনিয়নের দেবপাড়া বাজারের পাশ্ববর্তী ইয়াওর মিয়ার বাড়ির উঁচু পাহাড় কেটে স্থানীয় একটি পুকুর ভরাট করছেন মাঠ বনগাঁও গ্রামের ওয়াহাব মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়া। মাটি কাটায় জড়িত সেলিম ইতিপূর্বে পাহাড় কাটার মামলায় অভিযুক্ত। ‘টু ব্রাদার’ নামক বাহিনী তৈরি করে ওয়াহাব মিয়ার দুই ছেলে সেলিম ও সিরুল দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পাহাড় ও টিলা কেটে মাটি বিভিন্নস্থানে বিক্রি করে আসছিল।
অন্যদিকে গত এক সাপ্তাহ পূর্বে স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার যোগসাজসে গজনাইপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল আলী ও সনর মিয়া গজনাইপুর গ্রামের হাছন মিয়ার ছেলে অলি মিয়া, তাজুল ইসলামের ছেলে সিরাজ মিয়ার মালিকানাধীন উঁচু একটি টিলা এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে কেটে সমতল করছেন। এছাড়াও দেওপাড়া গ্রামের জামাল মিয়া আরেকটি টিলা কেটে নিকটবর্তী একটি স্থান ভরাট করেছে এই আব্দুল আলী ও সনর চক্র। অব্যাহতভাবে পাহাড় কাটার ফলে ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে আশপাশের ঘরবাড়ি। এসব বসতভিটা ভারি বর্ষণ হলে ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এনিয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
গত বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রিপন বাড়ৈ ও নাছরিন আক্তার। পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমাতুল করিম।
এ প্রসঙ্গে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া চা বাগানের ভেতর দিয়ে রাস্তা নির্মাণে টিলা কাটা ও হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুরে পাহাড় কাটার খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে এ বিষয়ে একটি সম্পূরক আবেদন দাখিল করে হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। এতে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হয়।
তিনি বলেন, এইচআরপিবির আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট আজ মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি), পরিবেশ অধিদফতরের বিভাগীয় পরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে পাহাড়/টিলা কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ১৫ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতেও বলা হয়েছে।
আদালতের শুনানিতে এইচআরপিবির পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় কাটা বন্ধে দায়ের করা রিট আদালতে চলমান থাকা অবস্থায়ও বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসনের নাকের ডগায় পাহাড় ও টিলা কাটা হচ্ছে। পরিবেশ আইনের ৬ (খ) ধারা অনুসারে পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ। যদি কেউ পাহাড় কাটে তাহলে পরিবেশ আইনের ধারা ১৫ অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তিনি আরও বলেন, আইন থাকলেও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। যার কারণে পাহাড় কেটে পরিবেশের ক্ষতি সাধন করা হচ্ছে। শুনানি শেষে আদালত এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেন। আইনজীবি মনজিল মোরসেদ আরও জানান- পরিবেশ আইনের ধারা ১৫ অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের পূর্বক গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
এ নিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন- হবিগঞ্জের দিনারপুরে দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কাটা চলে আসছিল, এনিয়ে গণমাধ্যমে অগণিত সংবাদ প্রকাশিত হলেও প্রশাসন যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ বিষয়টি দেশের পথিতযশা আইনজীবি মনজিল মোরসেদ হাইকোর্টের নজরে এনেছেন। তাই হবিগঞ্জের প্রকৃতি-পরিবেশ ও সচেতন মানুষের পক্ষ থেকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা প্রত্যাশা করছি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে কর্তৃপক্ষ পাহাড় কাটা বন্ধ করবে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

