Logo

কোথায় যাচ্ছে অসহায়দের ভাতার টাকা !

ছনি চৌধুরী
জাগো নিউজ : রবিবার, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২

image_pdfimage_print

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় বিকাশ অ্যাকাউন্টে পাঠানো বিধবা,বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতার টাকা গায়েব হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৯ মাসের বেশি সময় ধরে ভাতার টাকা পাচ্ছেন না উপজেলার দেবপাড়া ও গজনাইপুর ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক ভাতাভোগী। প্রশ্ন উঠেছে কোথায় যাচ্ছে গরীব অসহায়দের ভাতার টাকা।

জানা যায়- দীর্ঘদিন ধরে বয়স্কভাতার টাকা পাচ্ছেননা মিঠাপুর গ্রামের কমলা বিবি, দেবপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ দৌলতপুর গ্রামের মিনা বেগম, সিট ফরিদপুর গ্রামের লেবু বকস, গজনাইপুর ইউনিয়নের মিরাশী বিবি, মৌরশী বিবি, ছমদ উল্ল্যাহ, আনর মিয়া, ছনর মিয়া, সুন্দর মিয়া, সকিনা বিবি, আব্দুল আজিজ, প্রতিবন্ধী নানু মিয়া ও জুহুরা বিবিসহ দুইটি ইউনিয়নে প্রায় অর্ধশতাধিক ভাতাভোগী ভাতার টাকা পাচ্ছেন না। এছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়নে ভাতা না পাওয়ার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। বঞ্চিত এসব ভাতাভোগীরা বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা না পেয়ে প্রতিনিয়তই ঘুরছেন সমাজসেবা অফিসে। কিন্তু মিলছেনা প্রতিকার।

মিঠাপুর গ্রামের মৃত তৈয়ব উল্লাহর স্ত্রী কমলা বিবি বলেন, ‘ব্যাংকে নিয়মিত বয়স্ক ভাতার টাকা পেতাম। মোবাইলে বিকাশ খোলার পর থেকে আর টাকা পাই না। এই টাকাই আমার একমাত্র ভরসা।’ তিনি বলেন, তার বয়স্ক ভাতার টাকা অন্যের মোবাইলে চলে যায়।

গজনাইপুর ইউনিয়নের কায়স্থগ্রামের মৌরশী বিবি বলেন- ব্যাংকের মাধ্যমে যখন টাকা দেয়া হত, তখন টাকা পেয়েছি, কিন্তু বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার পর আর টাকা পাইনি।

দেবপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ দৌলতপুর গ্রামের মিনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর তার ভাতার কার্ড আগের মেম্বার নিয়ে গেছেন। দুই বছর হয়ে গেছে আমি কোনো টাকা পাইনি। জানি না মেম্বার সাব কার নম্বর দিয়েছেন।’

সিট ফরিদপুর গ্রামের লেবু বকস বলেন, ‘আমি প্রায় এক বছর ধরে বয়স্ক ভাতা পাইনি। বিকাশ চালু হওয়ার পর কোনো টাকা পাইনি।

দেবপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মুকিত বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে প্রায় ২০ জনের মতো লোক বিকাশ চালু হওয়ার পর কোনো টাকা পায়নি। টাকা যায় কোথায়, এই প্রশ্ন এখন আমাদের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।

আউশকান্দি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার সিজিল ইসলাম সেজলু বলেন, ‘আমার আগের মেম্বার সেট করেছেন। আমি কিছুই জানি না। তবে এক নারী আমার কাছে আসার পর আমি বিষয়টি সমাজসেবা অফিসকে জানিয়েছি। তারা বলছেন ব্যবস্থা নেবেন। এখানে কারচুপি হয়ে থাকলে সেটাও দেখবেন।’

আউশকান্দি সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার অমর দাশ তালুকদার বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা অবস্থায় সঠিকভাবে ভাতার টাকা পেয়েছেন। এখন টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যায়। এ দায়িত্ব আমাদের নয়।

নবীগঞ্জ বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত নারী ভাতা প্রকল্পের ইউনিয়ন সমাজকর্মী চিত্ত মজুমদার বলেন, ‘আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। যদি কোনো প্রতারক ভুয়া মোবাইল নম্বর দিয়ে টাকা নিয়ে থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কীভাবে মোবাইল নম্বর ভুল হলো সে বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সঙ্গে কথা বলব। প্রতারকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, আগের মেম্বারের সঙ্গে কথা বলেই ভাতার নম্বর দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিকাশ এজেন্ট বলেন, সমাজসেবা কার্যালয় তাদের যে নম্বর দিয়েছে, তারা সেই বিকাশ নম্বরেই টাকা পাঠিয়েছেন। সম্পূর্ণ নম্বর ভুল অথবা ডিজিট ভুলের দায় স্থানীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের লোকজনের। এখানে তাদের কোনো ভুল নেই।

আউশকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিলাওয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার আগের চেয়ারম্যানের আমলে এমন হয়েছে। ভাতাভোগীদের পরিবর্তে কার নম্বর দেওয়া হলো, তা দেখছি আমরা।’

নবীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার জহিরুল ইসলাম বলেন, ভাতাভোগীদের নম্বর না দিয়ে অন্য লোকের নম্বর দিয়ে একটি প্রতারক চক্র টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহি উদ্দিন বলেন, কেউ একবার ভাতার টাকা পেয়ে থাকলে পরে বিকাশে টাকা না পাওয়ার কথা নয়। এখানে কোনো প্রতারণা হয়ে থাকলে তার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

অন্যান্য সংবাদ
Theme Created By ThemesDealer.Com
x
error: কপি করা নিষেধ !
x
error: কপি করা নিষেধ !