বনগাঁও গ্রামের সূর্য-সন্তান বাংলাদেশের সাবেক গভর্নর সেগুফতা চৌধুরী আর নেই
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ নভেম্বর ২০২০, ১:৫৪ পূর্বাহ্ণতত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর সেগুফতা বখত চৌধুরী আর নেই (ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন)। তিনি এসবি চৌধুরী নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাতির এই সূর্যসন্তান শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি মতে, বাদ মাগরিব রাজধানীর গুলশান আজাদ মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে পিতার কবরে তাকে সমাহিত করা হয়েছে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বাংলাদেশের ব্যাংক পরিবারসহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের তরফে তার বিদায়ে শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এক বার্তায় বলেন সুচিন্তক, মেধাবী, সততা ও দক্ষতায় অনন্য এস. বি চৌধুরী দেশের আর্থিক খাতের সংস্কার সাধনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গেছেন।
তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ গোটা ব্যাংক পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। ঢাকাস্থ জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি ড. একে আব্দুল মুবিন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন আহমেদ পৃথক বিবৃতিতে বলেন, ঢাকায় বসবাসকারী সিলেটীদের অন্যতম মুরব্বি ছিলেন এস. বি চৌধুরী। তার মৃত্যুতে সিলেট তো বটেই জাতি তার একজন কৃতী সন্তানকে হারালো। অভিন্ন বার্তায় জালালাবাদ ভবন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ চৌধুরী, সদস্য সচিব আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, জালালাবাদ শিক্ষা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন এবং সদস্য সচিব জালাল আহমেদ মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
যৌথ বিবৃতিতে তারা শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। এস. বি চৌধুরী বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কাজ করেছেন দেশের প্রভাবশালী দুই অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এবং আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে। যদিও বয়স এবং পড়াশোনায় তিনি তাদের উভয়ের সিনিয়র ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দ্যুতি ছড়ানো ছাড়াও দীর্ঘ সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সচিব হিসেবে তিনি সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান ট্যাক্সেশন সার্ভিস (পিটিএস)এর মধ্যে দিয়ে কর্ম জীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ হিসেবে বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন তিনি।
১৯৩১ সালে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বনগাঁওয়ের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেয়া সেগুফতা বখত চৌধুরীর বাবা ছিলেন দেওয়ান মামুন চৌধুরী। দাদা খান বাহাদুর ওয়াসিল চৌধুরী। তিনি বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাগ্নে এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, রাজনীতিবিদ মাহবুবুর রব সাদীর (বীর প্রতীক) বড় ভাই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবৃতি মতে, পেশাগত জীবনে ধীরস্থির, মেধা, দক্ষতা ও মননশীলতায় অনন্য ব্যক্তিত্ব এস. বি চৌধুরী বাংলাদেশের আর্থিক খাতের কর্ণধার হিসেবে সেই সময়ের উদ্ভূত সমস্যাদি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের চতুর্থ গভর্নর। ১৯৮৭ সালের ১২ই এপ্রিল থেকে ’৯২ সালের ১৯শে ডিসেম্বর অবধি গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে (৯৬ সালে) তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, পাট এবং বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে একই বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনকারী এস. বি চৌধুরী একাত্তরে মহান স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানি ব্যুরোর চিফ কন্ট্রোলারের দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে তিনি অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং পেট্রোলিয়াম বিভাগে বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।