কারাগারে বন্দিদের খাবারের তালিকায় যা থাকে
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুন ২০২১, ২:৩৭ অপরাহ্ণইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে শুরু হওয়া খাবারের মেন্যু এখন আর নেই কারাগারে। দিনে দিনে বন্দিদের খাবারের তালিকায়অনেক পরিবর্তন এসেছে। বন্দিদের খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনও নানা অভিযোগ শোনা গেলেও এখন আর তাদের খাবারেরকোনও কষ্ট নেই, এমনটাই মনে করেন কারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলেন, এখন বাংলাদেশ সরকারের জেল কোড অনুযায়ীবন্দিদের খাবার দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে বন্দিদের সঙ্গে আলোচনা করেও খাবার সরবরাহ করা হয়। কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়াখাবারের বাইরেও বন্দিরা চাইলে কারা ক্যান্টিন থেকে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন খাবার কিনে খেতে পারেন। তাছাড়াঈদসহ বিশেষ দিনগুলোতে সরবরাহ করা হয় মোরগ–পোলাও কিংবা গরুর মাংস ও খিচুড়িসহ উন্নত মানের খাবার।
কারা অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, কারাকর্তৃপক্ষের দেওয়া খাবার ছাড়াও বন্দিদের স্বজনরা যাতে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয়জিনিসপত্র সরবরাহ করতে পারেন, সেজন্য প্রত্যেক কারাগারে একটি করে ক্যান্টিন ও দোকান চালু করা হয়েছে। এতে করে বাইরেথেকে কারাগারে অবৈধ কোনও জিনিস প্রবেশ করতে পারে না। স্বজনরাও বন্দিদের পছন্দের খাবার বা পণ্য কিনে সরবরাহ করতেপারেন। এছাড়া প্রতিটি কারাগারে প্রিজনার ক্যাশ (পিসি) বা ব্যক্তিগত তহবিল নামে একটি পদ্ধতি চালু আছে। সেখানে বন্দিদেরনামে টাকা জমা রাখার সুযোগ রয়েছে। পিসিতে বন্দির আত্মীয়–স্বজনরা টাকা জমা রাখতে পারেন। সেই টাকা দিয়ে বন্দিরানিজেদের পছন্দের খাবার বা পণ্য কিনে ব্যবহার করতে পারেন।
দেশের সব কারাগারেই বন্দিদের খাবারের মেন্যু একই। তবে কারা কর্মকর্তারা কারাগাভিত্তিক খাদ্য তালিকায় সামান্য পরিবর্তনকরেন। হাজতি ও কয়েদি বন্দিদের খাবারের মেন্যু প্রায় একই। তবে হাজতিদের চেয়ে কয়েদিদের জন্য খাদ্য তালিকায় সামান্য কিছুবেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কারণ, তাদের বেশিরভাগই সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি। সেজন্য কয়েদিদের অনেককেই কারাগারে কাজকরতে হয়। ডিভিশন বা শ্রেণিপ্রাপ্ত বন্দিদের খাবার একটু উন্নতমানের, সেক্ষেত্রে মেন্যুর কিছুটা পরিবর্তন হয়ে থাকে। ২০১৯সালের জুনে সকালের নাস্তায় বন্দিদের জন্য খিচুড়ির ব্যবস্থা উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
জেল কোডে সরকারের একটি খাদ্য তালিকা রয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী বন্দিদের খাবার সরবরাহ করা হয়। জেল কোডেসকালের খাবারের তালিকায় রয়েছে— রুটি, পাউরুটি, চিনি, গুড়, ডাল, দুধ, জেলি, ডিম, ঘি, মাখন, কলা ও চা। দুপুরেরখাবারের তালিকায় রয়েছে— ভাত কিংবা রুটি, মাছ বা মাংস, শাক–সব্জি ও ডাল। রাতের খাবার— ভাত কিংবা রুটি, মাছ বামাংস, শাক–সব্জি ও ডাল।
সকালের নাস্তায় যেদিন খিচুড়ি দেওয়া হয়, সেদিন কয়েদির জন্য ১২টাকা, আর হাজতির জন্য ১০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। সবজি–রুটি যেদিন দেওয়া হয়— সেদিন কয়েদির জন্য ১০ টাকা, আর হাজতি বন্দির জন্য ৯ টাকা বরাদ্দ আছে। যেদিন হালুয়া–রুটিদেওয়া হয়— সেদিন কয়েদির ১৬ টাকা আর হাজতি বন্দির জন্য ১৫ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আর দুপুর ও রাতের খাবারে কয়েদিবন্দির জন্য ৫৮ টাকা ও হাজতির জন্য ৫৩ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এই টাকা দিয়েই কারাকর্তৃপক্ষ বন্দিদের সকালের নাস্তা, দুপুর ওরাতের খাবারের ব্যবস্থা করে থাকে। ভিআইপি বা ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের সকালের নাস্তার জন্য ৪০ টাকা, দুপুর ও রাতেরখাবারের ৯৬ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
বন্দি মায়েদের সঙ্গে যেসব শিশু কারাগারে থাকে, তাদের জন্য সরকারিভাবে কোনও বরাদ্দ নাই। কারা কর্তৃপক্ষের হিসাবে তারাবন্দির তালিকায় নেই। তবে হাসপাতালে যেসব খাবার সরবরাহ করা হয়, সেখান থেকে বাঁচিয়ে শিশুদের খাবার সরবরাহ করাহয়। একেবারে ছোট শিশু হলে দুধ, কিংবা কলা সরবরাহ করা হয় সকালে। আর দুপুরে মায়ের জন্য যে খাবার সরবরাহ করা হয়, সেখান থেকেই শিশুকে খেতে দেওয়া হয় বলে জানান একজন ঊর্ধ্বতন কারা কর্মকর্তা।
জেল কোডের ১১০৩ নম্বর বিধিতে বলা আছে— মায়ের সঙ্গে যেসব শিশু সন্তান কারাগারে থাকে, তাদেরকে মেডিক্যালঅফিসারের নির্দেশ অনুযায়ী খাবার দেওয়া হবে। ১২ মাসের কম বয়সের শিশুদের মায়ের বুকের দুধের অভাব হলে গরুর দুধপানিতে মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে। ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সের শিশুদের ৬ ছটাক দুধ, দুই ছটাক চাল এবং আধা ছটাক ডালদেওয়া যেতে পারে। ১৮ থেকে ২৪ মাস বয়সের শিশুদের চার ছটাক দুধ, চার ছটাক চাল ও আধা ছটাক ডাল দেওয়া যেতে পারে।তবে ১১০৪ নম্বর বিধিতে বলা হয়েছে— খাবারের ধরনস পরিবর্তন হতে পারে।
কারা অধিদফতরের এআইজি প্রিজন্স (প্রশাসন) মাইন উদ্দিন ভুঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ীসারাদেশের কারাগারগুলোতে খাবার সরবরাহ করা হয়ে থাকে।’
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহাবুবুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত খাবারের তালিকাটাই বহালআছে। যেমন– কোনও এক সময়ে সকালে শুধু রুটি আর গুড় বা চিনি দেওয়া হতো। এখন আর সেটা নেই। বর্তমানে সকালেখিচুড়ি দেওয়া হয় দু’দিন, আবার হালুয়া–রুটি দেওয়া হয় দু’দিন। রুটি–সবজি দেওয়া হয় তিন দিন। দুপুরে ভাত, সবজি, ডালথাকে। রাতের খাবারে ভাত, সবজি, ডাল, মাছ বা মাংস থাকে। হাজতিদের যে খাবার দেওয়া হয়, সেটা কয়েদিদেরও দেওয়া হয়েথাকে। তবে কয়েদিদের ক্ষেত্রে বরাদ্দটা একটু বেশি। যেহেতু সে কাজ করে খায়। যেমন– দুপুরে একজন হাজতি বন্দির জন্য চালবরাদ্দ আছে ২৪৭ গ্রাম। আর কয়েদির জন্য চাল বরাদ্দ আছে ২৯১ গ্রাম। তবে মাছ, মাংস বা অন্য খাবার সবই এক। শুধু চালটাএকটু বেশি। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরাও কয়েদিদের মতোই খাবার খেয়ে থাকেন। এর বাইরে বন্দিরা নিজেদের টাকা দিয়েকারাকর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যেকোনও খাবার কিনে খেতে পারবেন। ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের মেন্যুটা একটু ভিন্ন। তাদের জন্যসরকারের যে বরাদ্দ সেটা তারা নিজেরাই ঠিক করেন যে, সকালে কী খাবেন, দুপুর বা রাতে কী খাবেন। সেই হিসেবে তাদের খাবারসরবরাহ করা হয়।’
কারা অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের সাবেক ডিআইজি প্রিজন্স মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারি বরাদ্দ তো একটা আছে। সেই অনুযায়ী কারাকর্তৃপক্ষ সারাদেশের কারাগারে বন্দিদের খাবার সরবরাহ করে।’ তবেমাঝে মধ্যে খাবার নিয়ে যেসব অভিযোগ পাওয়া যায়, সেসম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইন সব সমান, কারাগারও সবএকই রকম। যে কারাগারের জেলার ও সুপার ভালো হবে, সেই কারাগারের বন্দিরাও ভালো থাকবে, ভালো খাবে। এটাই মূলকথা।’
খবর: বাংলা ট্রিবিউন এর।