কাঁঠাল নিলাম নিয়ে তুলকালাম: তিন খুনের ঘটনায় আটক ৬
করেসপন্ডেন্ট, সুনামগঞ্জ
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জুলাই ২০২৩, ১১:১২ অপরাহ্ণমসজিদের কাঁঠাল নিলাম নিয়ে বিরোধের জেরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলশ ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামের দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে তিন জন নিহত হয়েছেন।
সোমবার (১০ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে নরুল হক(৪৫),আব্দুস সুফির ছেলে বাবুল মিয়া(৫০)এবং আব্দুল বাসিরের ছেলে শাহজাহান মিয়া (৫৫)। নিহতের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন শান্তিগঞ্জ থানার ওসি মো. খালেদ চৌধুরী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ গ্রামের মালদার ও সরাই মরলের গোষ্ঠীর মধ্যে গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিনে বিরোধ চলে আসছিল। গত শুক্রবার হাসনাবাদ গ্রামের মসজিদের একটি কাঁঠাল নামাজ চলাকালীন সময়ে ৩০০ টাকা নিলামে বিক্রি করে মালদার গোষ্ঠীর লোকেরা। নামাজ শেষ হলে উল্লেখিত নিলামে কাঁঠাল বিক্রিতে বাঁধ প্রদান করে সরাই মরল গোষ্ঠীর দ্বীন ইসরলামের লোকেরা।
এসময় মালদার গোষ্ঠীর শেখ ফরিদ কাঁঠালে লাথি মারলে বিষয়টি নিয়ে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন দুই গোত্রের লোকেরা। রবিবার সরাই মরল গোষ্ঠীর জাহাঙ্গীর নামের এক যুবককে মালদার গোত্রের পক্ষ থেকে গ্রামের রাস্তা চলাচলে বাঁধা দিলে বিষয়টি নিয়ে ফের বিরোধের জড়িয়ে পড়েন দুই গোষ্ঠীর লোকেরা। রাতভর দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র সংগ্রহ করতে থাকেন উভয়পক্ষ।
ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ শালিস ব্যক্তিরা সোমবার সকাল ৯ টার দিবে মধ্যস্থতা করতে হাসনাবাদ গ্রামে গেলে উভয় পক্ষের আশ্বাসে বিচার সালিশের পরিবেশ সৃষ্টি করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার ঘন্টা সময়ের মধ্যে উভয় গোত্রের লোকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় দুই পক্ষের লোকেরা দেশীয় ও দাড়ালো অস্ত্র নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে ঘটনাস্থলে সরাই মরল গ্রুপে নুরুল হক ও বাবুল মিয়া নিহত হন।
দফায় দফায় সংর্ষে উভয় গ্রুপের গুরুতর জখমসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। অপরদিকে মালাদার গ্রুপের গুরতর আহত শাহজাহান মিয়া নামে আরেকজন কৈতক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এই ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। উভয় পক্ষের নিহতের ঘটনায় পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে পুরো গ্রাম। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে উভয় পক্ষের ৬ জনকে আটক করেছে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ।
সরেজমিনে হাসনাবাদ গ্রামে গেলে জানা যায়, উভয় গোত্রের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসায় গ্রামের দাঙ্গাবাজ গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত মালদার ও সরাইমরল গোষ্ঠী। ২০০৭ সালের পর থেকে উভয়ে গোষ্ঠীর মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে এই দুই গোত্রের মধ্যে। এসব ঘটনায় আদালতে ৭-৮টি মামালা বিচারাধীন রয়েছে। বিগত সময়ে ঈদের জামাতে সংর্ষের ঘটনায় পুলিশ এসল্ট মামলাও রয়েছে দাঙ্গাবাজ এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। এলাকার আইনশৃংখলা সমন্নত রাখতে দাঙ্গাবাজ অপরাধীদের কঠোর হস্তে ধমন করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষজন।
সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত নুরুল হকের চাচা আলী হোসেন বলেন, মসজিদ একটি কাঁঠাল নিলাম নিয়ে বিরোধের উৎপত্তি। গতকাল আমাদের এক ছেলেকে প্রতিপক্ষের লোকের রাস্তায় পথ রোধ করে। এতে নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি হয়। রাতে শুনি মালদার গোষ্ঠীর লোকেরা লাঠিসোটা ঝড়ো করছে। আমরা বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানাই। সকালে চেয়ারম্যান এসে বিষয়টি নিষ্পত্তির আশ্বাস দিলেও তারা মানেনি। সংঘবন্ধভাবে আমাদের লোকদের উপর হামলা করে। আমারদের দুইজন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। অনেকেই আহত আছেন।
প্রতিপক্ষ সরাই মরলের গোষ্ঠীর লোকদের দাঙ্গাবাজ আক্ষা দিয়ে মালদার গোষ্ঠীর প্রদান মালদার মরল বলেন, মারামারিতে আমাদের অনেক লোক আহত হয়েছে। শাহজাহান মিয়া মারাগেছে। আরও কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
জয়কলস ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল বাসিত সুজন বলেন, হাসনাবাদ গ্রামের বিরোধের ঘটনার কথা শোনার পরে সোমবার সকালে গিয়ে পৃথকভাবে দুই গোত্রের লোকদের নিয়ে বসে শালিসের আহ্বান জানিয়েছি। দুই গোত্রের লোকেরা মারামারি করবেন না বলে আশ^াস দিলেও পরিবেশ শান্ত করে উপজেলায় আসার পথে জানতে পারি গ্রামে সংঘর্ষ চলছে। ঘটনাস্থলে আবার গেলেও রক্ষা হয়নি। এমন ঘটনাকে মধ্যযুগিয়ে বরর্বতা বলে উল্লেখ করেন এই জনপ্রতিনিধি।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপরাধ) রাজন কুমার দাশসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এসময় আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কঠোর অবস্থার কথা জানান তিনি। সংঘর্ষের সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।
শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. খালেদ চৌধুরী বলেন, দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে পুলিশ ঘটনাস্থলে যেতে সময় লেগেছে। পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখন পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে উভয় পক্ষের ৬ জন আটক করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। তবে অভিযোগ না পেলে পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুতই একশন নেয়া হবে বলে জানান তিনি।