নবীগঞ্জে ২ বছর পর প্রশাসনের প্রচেষ্টায় বাওয়ানি চা বাগানে ফিরলো শিক্ষার আলো

ছনি আহমেদ চৌধুরী
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫৬ অপরাহ্ণ
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের বাওয়ানি চা বাগানে দীর্ঘ দুই বছর বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু হলো বাওয়ানি চা বাগান বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
রবিবার (১২ অক্টোবর) সকালেই বিদ্যালয়ের দরজা খুলতেই চা শ্রমিক পরিবারের শিশুদের মুখে ফুটে ওঠে আনন্দের হাসি, দীর্ঘ নীরব প্রাঙ্গণ আবারও মুখরিত হয়ে ওঠে শিশুদের কোলাহলে।
দীর্ঘদিন ধরে বাগানটির মালিকানা জটিলতার কারণে বিদ্যালয়টি বন্ধ ছিল। বেতন-ভাতা না পেয়ে শিক্ষকরা কাজ ছেড়ে দিলে শিক্ষা কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে স্থবির হয়ে পড়ে। এতে শতাধিক শ্রমিক পরিবারের সন্তানরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছিল।
সম্প্রতি হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান সরকারি তত্ত্বাবধানে বাওয়ানি চা বাগানটির মালিকানা গ্রহণের পর বাগানটি পরিদর্শন করেন। সেখানে গিয়ে তিনি বিদ্যালয়টি বন্ধ দেখতে পান এবং বিষয়টি স্থানীয় চা শ্রমিকদের কাছ থেকে শুনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
চা শ্রমিকদের আকুতি শুনে জেলা প্রশাসক ঘোষণা দেন, বিদ্যালয়টি পুনরায় চালু করা হবে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন অস্থায়ীভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম পুনরায় শুরু করার জন্য।
জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ইউএনও নিজস্ব উদ্যোগ ও অর্থায়নে একজন অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ দেন এবং বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করেন। রবিবার সকালে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিনের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আবারও পাঠদান শুরু হয়।
বিদ্যালয় খুলতেই শিশুদের আনন্দের উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে চারপাশ। কেউ বইয়ের গন্ধে মুগ্ধ, কেউ আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখছে পড়াশোনা নিয়ে। অভিভাবকদের চোখে জল, মুখে কৃতজ্ঞতার হাসি।
চা শ্রমিকরা বলেন, “দুই বছর ধরে আমাদের সন্তানরা স্কুলে যেতে পারছিল না। আজ তারা আবার বই হাতে নিচ্ছে—এটা আমাদের জন্য পরম আনন্দের দিন। জেলা প্রশাসক ও ইউএনও স্যারকে ধন্যবাদ, তারা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ ফিরিয়ে দিয়েছেন।”
স্থানীয় সুধীজনরা প্রশাসনের এ উদ্যোগকে “শিক্ষা ও মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত” বলে অভিহিত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন জানান, “তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যালয়টি চালু করা হলেও শিগগিরই স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে।”
দীর্ঘ দুই বছরের অন্ধকার কাটিয়ে যখন বাওয়ানি চা বাগান বিদ্যালয়ে আবারও বাজল পাঠশালার ঘণ্টা, তখন সেই সুরে মিশে গেল শত শিশুর হাসি আর স্বপ্ন— যেন শিক্ষার আলোয় ভরে উঠলো বাওয়ানির চা বাগান।

