নবীগঞ্জে প্রবাসী দুই ভাইয়ের স্ত্রীর পরকীয়ার বলি মোস্তাকিন !
ছনি আহমেদ চৌধুরী
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণহবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় দুই ভাবীর সঙ্গে রায়হানের পরকীয়ার ঘটনা দেখে ফেলায় কিশোর মোস্তাকিনকে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার প্রধান আসামী রায়হান উদ্দিন। রায়হানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাসলিমা আক্তার (২০) ও রোজিনা বেগম (২৮) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের আদালতে ১৬৪ ধারায় মোস্তাকিন হত্যা মামলার প্রধান আসামী রায়হান উদ্দিনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
এরআগে গত বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে র্যাব-৯ সিলেট ও শায়েস্তাগঞ্জ ক্যাম্পের যৌথ অভিযানিক দল সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর মোস্তাকিন হত্যা মামলার প্রধান আসামী রায়হান উদ্দিন (২২) কে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর নবীগঞ্জ থানায় রায়হানকে হস্তান্তর করে র্যাব। পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে রায়হান। রায়হানের দেয়া তথ্যমতে একটি জমি থেকে তালা-চাবি ও রায়হানের বসতঘরের একটি প্যান্ট থেকে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়- উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের পুরানগাঁও গ্রামের মৃত জফর মিয়ার ৫ ছেলে। এদেরমধ্যে নিহত মোস্তাকিনের ১ম বড় ভাই ফজলু মিয়া দুবাই প্রবাসী, ২য় ভাই সজলু মিয়া ওমান প্রবাসী, ৩য় ভাই সজল মিয়া মৌলভীবাজারের সরকার বাজার এলাকায় একটি ব্রিক ফিল্ডে কাজ করে, চতুর্থ নিহত মোস্তাকিন ও সবার ছোট তামিম। মোস্তাকিন তার মা ফুলবানু বিবি, ছোট ভাই তামিম, প্রবাসী ভাই ফজলু মিয়ার স্ত্রী রোজিনা বেগম, সজলু মিয়ার স্ত্রী তাছলিমা বেগমকে নিয়ে চার বেডরুমের বসতঘরে বসবাস করে আসছিলো। মোস্তাকিনের ভাই সজল মিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে তাদের বাড়িতে একই গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে ও মামলার প্রধান আসামী রায়হান মিয়ার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। যাতায়াতের সুবাদে মোস্তাকিনের ঘরের ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের পাসওয়ার্ডসহ রাউটারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল রায়হানের হাতে। সজল মিয়া সিলেট কাজে যাওয়ার পরও তাদের বাড়িরে রায়হানের যাতায়াত অব্যাহত ছিল।
আদালতে রায়হান উদ্দিনের দেয়া জবানবন্দির তথ্য অনুযায়ী জানা যায়- নিহত মোস্তাকিনদের বাড়িতে অবাধ যাতায়াতের সুবাধে প্রথমে মোস্তাকিনের ২য় বড় ভাই ওমান প্রবাসী সজলু মিয়ার স্ত্রী তাছলিমা বেগম ও পরে ১ম বড় ভাই দুবাই প্রবাসী ফজলু মিয়ার স্ত্রী রোজিনা বেগমের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ায় রায়হান। এক পর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হলে প্রায় প্রায় দুই/তিন মাস পূর্বে এ বিষয়ে শালিস বিচার বসে। শালিসে উভয় পক্ষকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। অভিযুক্ত রায়হানকে মোস্তাকিনদের বাড়িতে আসতে নিষেধ এবং রায়হানকে দ্রুত বিয়ে করানোর জন্য তার পরিবারকে নির্দেশ দেয়া হয়। শালিসের রায় মেনে সম্প্রতি রায়হানকে বিয়েও করায় তার পরিবার। শালিস ও বিয়ের পরও মোস্তাকিনের বাড়িতে রায়হানের যাতায়াত অব্যাহত ছিল।
গত রবিবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মোস্তাকিনের নানী অসুস্থ হওয়ার খবর আসলে বসত ঘরে প্রবাসী দুই ছেলের স্ত্রী রোজিনা বেগম, তাছলিমা বেগম ও ছেলে মোস্তাকিম মিয়া এবং তামিমকে রেখে মোস্তাকিনের মা ফুলবানু বিবি পিত্রালয়ে তিমিরপুর গ্রামে চলে যান। ওইদিন রাত প্রায় ৮টার দিকে মোস্তাকিনদের বাড়িতে যায় রায়হান উদ্দিন। ঘরে প্রবেশের পর রায়হান উদ্দিন প্রথমে মোস্তাকিনের মেজো ভাবী তাছলিমা বেগমের সঙ্গে অবৈধ অভিসারে জড়ায়। পরে বড় ভাবী রোজিনা বেগমের শয়নকক্ষে যাওয়ার সময় নিহত মোস্তাকিন দেখে ফেলে। এক পর্যায়ে মোস্তাকিন তাদের বাড়িতে গোপনে রায়হান আসার ঘটনা মা ফুলবানু বিবি বাড়িতে আসলে বলে দিবে বলে রায়হানকে হুমকি দেয়। ভয় পেয়ে তাসলিমা আক্তার ও রোজিনা বেগমকে নিয়ে মোস্তাকিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে রায়হান। পরিকল্পনা অনুযায়ী স্থানীয় ইমামবাড়ি বাজার হতে ১টি ছুরি ও দুইটি তালা কিনে আনে রায়হান। পরে মোস্তাকিনের শয়নকক্ষে প্রবেশ করে মোস্তাকিনের দুই পা তাছলিমা বেগম ও দুই হাত শরীর রোজিনা বেগম চেপে ধরে রাখে। এক পর্যায়ে রায়হান বাম হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে ও ডান হাত দিয়ে মোস্তাকিনের গলা ছুরি দিয়ে জবাই করে মোস্তাকিনকে হত্যা করে। পূর্ব পরিকল্পনা এ ঘটনার পর নিহত মোস্তাকিনের দুই ভাবী চিৎকার ও কান্না করতে থাকে। এসময় তাদের চিৎকার শোনে আশপাশের মানুষ ছুটে আসে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনার সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে কিশোর মোস্তাকিন হত্যার ঘটনায় ভাবীর পরকীয়ার গুঞ্জনের ঘটনা সামনে আসলেও নিহত রায়হানের মা ফুলবানু বিবি ছেলের বউদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি মানতে কড়া আপত্তি জানান। পরে (২৫ নভেম্বর) নবীগঞ্জ থানায় ওয়াই-ফাই নিয়ে বিরোধের জের ধরে মোস্তাকিনকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করে রায়হান উদ্দীনসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ফুলবানু বিবি ।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন- মোস্তাকিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার প্রধান আসামী রায়হান হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
কিশোর হত্যা, সামনে আসছে ভাবীর পরকীয়ার গুঞ্জন !