নবীগঞ্জের ইব্রাহিম-জান্নাত দম্পতির তিন মেয়ের মেডিকেল সাফল্য

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫২ অপরাহ্ণ
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার ১১নং গজনাইপুর ইউনিয়নের কায়স্থগ্রাম থেকে উঠে আসা একটি পরিবার এখন আলোচনার কেন্দ্রে। ইব্রাহিম–জান্নাত দম্পতির পরিবার শিক্ষাক্ষেত্রে যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা শুধু স্থানীয় নয়—সমগ্র এলাকার জন্যই গর্বের বিষয়।
একই পরিবারের পরপর তিন সন্তান সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়ে প্রমাণ করেছে, সঠিক দিকনির্দেশনা ও অধ্যবসায় থাকলে গ্রাম থেকেই গড়ে উঠতে পারে দেশের ভবিষ্যৎ চিকিৎসক।
মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও কোহিনুর আক্তার জান্নাত দম্পতির বড় মেয়ে নুসরাত জাহান তাকিয়া ২০২০ সালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে বর্তমানে সেখানে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর সাফল্যের ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় মেয়ে ইশরাত জাহান তাহিয়া রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর মাইগ্রেশন করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত আছেন এবং বর্তমানে তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন তৃতীয় মেয়ে মুসরাত জাহান তাসফিয়া, যিনি চলতি বছরের সরকারি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, বগুড়ায় মেধা তালিকায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
এখানেই থেমে নেই এই পরিবারের অগ্রযাত্রা। চতুর্থ সন্তান ইফফাত জাহান তাযকিয়া বিএএফ ঢাকা শাহীন কলেজে সপ্তম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে ভবিষ্যতের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ধারাবাহিক এই সাফল্য যেন প্রমাণ করে দিয়েছে, এটি কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়—বরং দীর্ঘদিনের পরিকল্পিত অধ্যয়ন ও পারিবারিক অনুশাসনের ফল।
স্থানীয়রা জানান, শিক্ষানুরাগী এই পরিবারের মূল শক্তি বাবা-মায়ের সচেতন ভূমিকা। সন্তানদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী করে তোলা, সময়মতো সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় ত্যাগ স্বীকারের মধ্য দিয়েই ইব্রাহিম–জান্নাত দম্পতি এই অবস্থানে পৌঁছেছেন। গর্বিত পিতা মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে রিলিজিয়াস কাউন্সিলিং অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। নৈতিকতা, শৃঙ্খলা ও মানবিক মূল্যবোধ—এই তিন ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে সন্তানদের গড়ে তুলেছেন বলেই মনে করছেন এলাকাবাসী।
উল্লেখ্য, এই পরিবারের নানাবাড়ি বাহুবল উপজেলার হাফিজপুর গ্রামে। নানার নাম আব্দুস সালাম এবং দাদার নাম ক্বারী বাহার উল্লাহ। ফলে নবীগঞ্জ ও বাহুবল—উভয় এলাকাতেই পরিবারটির সাফল্য ঘিরে তৈরি হয়েছে আনন্দ ও গর্বের আবহ।
শিক্ষানুরাগীদের মতে, ইব্রাহিম–জান্নাত দম্পতির পরিবার বর্তমান প্রজন্মের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তাঁদের সাফল্য স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে—পরিকল্পিত অধ্যয়ন, পারিবারিক সমর্থন ও নিরলস অধ্যবসায় থাকলে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও উঠে আসতে পারে দেশের গর্ব, ভবিষ্যতের সেরা চিকিৎসক।



