চলন্ত বাসে ধর্ষণচেষ্টা: বাসের জানালা দিয়ে লাফিয়ে বাঁচলেন তরুণী

জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ ডিসেম্বর ২০২০, ২:৪০ অপরাহ্ণ
গ্রেফতার হয়নি কেউ
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে চলন্ত বাসে এক কলেজ শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। নিজেকে রক্ষা করতে চলন্ত বাস থেকে লাফ দেন ওই শিক্ষার্থী (২০)। এতে গুরুতর আহত হন তিনি।
শনিবার সন্ধ্যায় দিরাই মদনপুর সড়কের সুজানগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত কলেজছাত্রীকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে সুজানগর গ্রামের দুই যুবক তাকে উদ্ধার করে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। মাথা ও হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত ওই কলেজছাত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে প্রেরণ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা পৌরশহর। সন্ধ্যার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা থানা পয়েন্টে রাস্তা অবরোধ করেন।
জানা গেছে, সিলেট থেকে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে চলাচলকারী ফাহাদ অ্যান্ড মাইশা পরিবহনের একটি চলন্ত বাসে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ওই গাড়ির চালক ও হেলপাররা। এ সময় দিরাই পৌর এলাকার বাসিন্দা ওই কলেজছাত্রী সম্ভ্রম বাঁচাতে দিশেহারা হয়ে গাড়ি থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন।
মেয়েটির চাচা বলেন, আমার ভাতিজি দিরাই সরকারি কলেজে ডিগ্রিতে অধ্যয়নরত। সিলেটের লামাকাজি এলাকায় তার বোনের বাড়িতে গিয়েছিল। তার বোনজামাই অজিত দাস তাকে (সিলেট-জ-১১-০৭২৩) সিরিয়ালের লোকাল বাসে তুলে দেয় দিরাইয়ে ফেরার জন্য। সে একাই ফিরছিল।
পথিমধ্যে গাড়ির যাত্রীরা একে একে নেমে গেলে গাড়িটি একপর্যায়ে ফাঁকা হয়ে যায়। লোকাল বাস হলেও নতুন যাত্রী উঠানো থেকে বিরত থাকে গাড়ির স্টাফরা। চালক হেলপার মিলে আমার ভাতিজিকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। উপায়ন্তর না পেয়ে সে সুজানগর এলাকায় গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে আহত হয়।
এ ঘটনায় চালক ও হেলপারসহ তিনজনের নামে মামলা করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় বাসটি জব্দ করা হলেও এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। শনিবার রাতে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে দিরাই থানায় মামলাটি করেন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন দিরাই থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, দিরাই বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি রেখে চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে। গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।
এদিকে, আক্রান্ত তরুণীকে রোববার (২৭ ডিসেম্বর) ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) স্থানান্তর করা হয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের অল্প সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘গতকাল অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনা ঘটেছে। মামলা করার আগেই আমরা কাজ শুরু করি। আগামীকাল দিরাই পৌরসভা নির্বাচন। তারপরও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার করা হবে।’
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, মেয়েটি হাতে ও মাথায় আঘাত পেয়েছে। তবে আঘাত তেমন গুরুতর নয়। তাকে আজ ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। এরআগে তার মাথার সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। সেখানে মারাত্মক কিছু পাওয়া যায়নি।
মেয়েটির সাথে সকালে কথা বলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বুদ্ধিমত্তা ও সহাসীকতার কারণে মেয়েটি রক্ষা পেয়েছে। মেয়েটি জানিয়েছে, বাসের ড্রাইভার তার চুল ও হাত ধরে যখন টেনে ধরেছিলেন তখনই সে বুদ্ধি করে জানালা দিয়ে লাফ দেয়।
উপ পরিচারক বলেন, আমার খুব ভালো লেগেছে মেয়েটি এখনও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েনি। সে মানসিকভাবে শক্ত আছে।
মেয়েটির মানসিক কাউন্সিলং ও নিরাপত্তার জন্য তাকে ওসিসিতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের এক জন দিরাই পৌর শহরের বাসিন্দা শেখ আলী হোসেন।
তিনি বলেন, ‘দিরাই উপজেলায় এমন ঘটনা প্রথম। একটি মেয়ে যদি নিরাপদে বাসে চলাচল করতে না পারে তাহলে কীভাবে হবে? ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেয়া হোক।’
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল আহাদ বলেন, ‘ভিকটিমের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর আমরা রাখছি।’ তিনি আরও জানান, এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে জন্য আরও কঠোর অবস্থান নেয়া হবে।
কলেজছাত্রীর বাবার ভাষ্য, শনিবার সন্ধ্যায় সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ফাহাদ অ্যান্ড মাইশা পরিবহনের একটি বাসে দিরাই যাচ্ছিল ওই কলেজছাত্রী। পৌরসভার সুজানগর এলাকায় তিনি ছাড়া বাকি যাত্রীরা নেমে গেলে বাস ফাঁকা হয়ে যায়। এ সময় বাসটির চালক ও হেলপার তাকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই জন ধর্ষণের চেষ্টা চালালে আত্মরক্ষার্থে চলন্ত বাস থেকে লাফ দেন কলেজছাত্রী। এতে সড়কের পাশে পড়ে আহত হন তিনি।
পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় দিরাই হাসপাতালে নেন ওই ছাত্রীকে। সেখানে চিকিৎসক তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। শনিবার মধ্যরাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা।

