কিশোর হত্যা, সামনে আসছে ভাবীর পরকীয়ার গুঞ্জন !
ছনি আহমেদ চৌধুরী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ৬:৪২ পূর্বাহ্ণহবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পুরানগাঁও গ্রামে গলা কেটে মোস্তাকিন নামে এক কিশোরকে হত্যাকান্ডের ঘটনায় রায়হান মিয়াকে প্রধান আসামী ৩ জনের নাম উল্লেখ করে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার এজাহার ও হত্যাকান্ডের মূল রহস্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত মোস্তাকিনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরানগাঁও গ্রামের ৪/৫ এ প্রতিবেদককে জানান- উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের পুরানগাঁও গ্রামের মৃত জফর মিয়ার ৫ ছেলে। এদেরমধ্যে নিহত মোস্তাকিনের ১ম বড় ভাই ফজলু মিয়া দুবাই প্রবাসী, ২য় ভাই সজলু মিয়া ওমান প্রবাসী, ৩য় ভাই সজল মিয়া সিলেটে ব্রিক ফিল্ডে কাজ করে, চতুর্থ নিহত মোস্তাকিন ও সবার ছোট তামিম। মোস্তাকিন তার মা ফুলবানু বিবি, ছোট ভাই তামিম, প্রবাসী ভাই ফজলু মিয়ার স্ত্রী রোজিনা বেগম, সজলু মিয়ার স্ত্রী তাছলিমা বেগমকে নিয়ে বাড়িতে বসবাস করে আসছিলো। মোস্তাকিনের ভাই সজল মিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে তাদের বাড়িতে একই গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে ও মামলার প্রধান আসামী রায়হান মিয়ার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। যাতায়াতের সুবাদে মোস্তাকিনের ঘরের ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের পাসওয়ার্ডসহ রাউটারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল রায়হানের হাতে। সজল মিয়া সিলেট কাজে যাওয়ার পরও তাদের বাড়িরে রায়হানের যাতায়াত অব্যাহত ছিল। অবাধ যাতায়াতের সুবাদেই সজলু মিয়ার স্ত্রী তাছলিমার সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্কের অভিযোগ ওঠে রায়হানের বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রায় দুইমাস পূর্বে এ বিষয়ে শালিস বিচার বসে। এতে স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আমীনসহ গণ্যমান্য মুরুব্বীয়ান উপস্থিত ছিলেন। শালিসে উভয় পক্ষকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। অভিযুক্ত রায়হানকে মোস্তাকিনদের বাড়িতে আসতে নিষেধ এবং রায়হানকে দ্রুত বিয়ে করানোর জন্য তার পরিবারকে নির্দেশ দেয়া হয়। শালিসের রায় মেনে সম্প্রতি রায়হানকে বিয়েও করায় তার পরিবার। শালিস ও বিয়ের পরও মোস্তাকিনের বাড়িতে রায়হানের যাতায়াত অব্যাহত ছিল।
গত রবিবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মোস্তাকিনের নানী অসুস্থ হওয়ার খবর আসলে বসত ঘরে প্রবাসী দুই ছেলের দুই স্ত্রী রোজিনা বেগম, তাছলিমা বেগম ও ছেলে মোস্তাকিম মিয়া ও তামিমকে রেখে মোস্তাকিনের মা ফুলবানু বিবি পিত্রালয়ে তিমিরপুর গ্রামে চলে যান। মোস্তাকিনের ভাবী তাছলিমা বেগম জানান- প্রতিদিনের ন্যায় সন্ধ্যা ৬টার দিকে নিজ বসতঘরের খাটে মোস্তাকিন মিয়া ঘুমিয়ে পড়েন। ঘরের এক রুমে তাছলিমা বেগম ও অন্যরুমে ফজলু মিয়ার স্ত্রী রোজিনা তামিমকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
রাত ১০টার দিকে মোস্তাকিনের রুমের দরজার বিকট আকারে শব্দ শোনে মোস্তাকিনকে ডাকাডাকি করে তাছলিমা। এস ময় মোস্তাকিনের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ফজলুর স্ত্রী রোজিনাকে ডেকে এক পর্যায়ে দুজন পৃথক রুম থেকে বের হয়ে ঘরের প্রধান ফটকে তালাবদ্ধ দেখতে পায়। এক পর্যায়ে তারা চিৎকার-চেঁচামেচী করলে আশপাশের স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে এসে মোস্তাকিনের গলাকাটা লাশ দেখতে পান। পরে খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেনসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মোস্তাকিন মিয়ার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় সোমবার নিহত মোস্তাকিনের মা ফুলবানু বিবি বাদী হয়ে একই গ্রামের
আব্দুল খালিকের ছেলে রায়হানকে প্রধান আসামী করে তিনজনের নাম উল্লেখ করে নবীগঞ্জ হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায়- ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে বলে বাদী দাবী করলেও রায়হান ও তাছলিমার পরকীয়ার বলি মোস্তানিক এমন গুঞ্জন এলাকার মানুষের মুখে-মুখে। হত্যাকাণ্ডে আসামীদের পাশাপাশি নিহত মোস্তাকিনের ভাইয়ের স্ত্রী তাছলিমা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটিত হবে বলে ধারণা স্থানীয়দের।সোমবার বাদ আছর মোস্তাকিনের জানাযার নামাজ শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। এদিকে রাতে হবিগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ বদরুলের নেতৃত্বে ক্রাইমসিনের টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরে নিহতের দুই ভাবীকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছে।
এ প্রসঙ্গে কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- নিজ বসতঘরে মোস্তাকিন নামে এক কিশোরকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, ঘরে তখন শুধুমাত্র দুই ভাইয়ের দুই স্ত্রী ছিল। তিনি বলেন- নারী সংক্রান্ত গোপন কোনো ঘটনাকে কেন্দ্রে করে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হতে পারে।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান- জড়িতদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।