২০০৪ সালের চেয়েও ভয়াবহ এবারের বন্যা !
![](https://jago.news/images/icon.png)
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুন ২০২২, ১০:৩৩ অপরাহ্ণ![](https://jago.news/wp-content/uploads/2022/06/16-06-2022.jpg)
পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ইতিমধ্যেই জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ৪ উপজেলার। সেই সাথে দ্রুতই বেড়ে চলছে নদ-নদী পানি। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ৯০ শতাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়নের বোর্ডের দেয়া সর্বশেষ তথ্যনুযায়ী, সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
সরজমিনে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের মধ্যবাজার, আরপিন নগর, নবীনগর, পশ্চিম বাজার, পূর্ব নতুন পাড়া মরাটিলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, গেল বন্যাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে এবারের বন্যা। যে সড়কে বুধবার পর্যন্ত গাড়ি চলছিল সেই রাস্তায় এখন চলছে নৌকা। এছাড়া পানিবন্দি হয়ে আশেপাশের বিদ্যালয়গুলো আশ্রয় স্থানীয়রা। এবারের বন্যাকে ২০০৪ সালের বন্যার সাথে তুলনা করছেন অনেকে।
অন্যদিকে, উজানের ঢলে তাহিরপুর বিশ্বম্ভপুর উপজেলার সাথে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে একই সাথে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা সাথেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সদর উপজেলার।
পৌর শহরের মরাটিলা এলাকা বাসিন্দা তন্ময় সেন বলেন, এতো দ্রুত পানি বাড়তে এর আগে কখনও দেখি নাই। গতকাল সকালে বাসা থেকে বের হবার সময় রাস্তায় একটুও পানি ছিলো না৷ বিকালে এসে দেখি হাটু পানি। এখন কোমর পানি, শহরের হাতে গুনা কিছু জায়গা ছাড়া প্রত্যেকটা পাড়া মহল্লায় পানি। এই ধারায় পানি বাড়লে রাত অব্দি ভয়ানক অবস্থা হতে চলছে।
আরপিন নগর এলাকার বাসিন্দা ইমামুল হোসেন বলেন, পানিতো বাড়ার উপরেই আছে এটা দেখে মনে হচ্ছে ২০০৪ সালের বন্যার কথা। এরকম ভয়াবহ বন্যা এর আগে আমি কখনো দেখিনি।
নবীনগর এলাকার রিতা বেগম বলেন, রাত থেকে পানি বাড়ছে এখন রান্নাঘরে পানি সকাল থকি আমরা উপাস আছি বাইরে গিয়া যে কিচ্ছু কিনিয়া আনতাম ছেলে মেয়ে নিয়া কিতা করতাম এরকম পানি আমি জীবনেও দেখছি না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহুরুল ইসলাম বলেন, সুনামগঞ্জের বৃষ্টি আর উজানের বৃষ্টিপাত দুটোই সুনামগঞ্জের পরিস্থিতি খারাপ করে দিচ্ছে। সুরমা নদীর পানি এখন বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, রাতে তা আরও বাড়তে পারে এবং বন্যা পপরিস্থিতি অবনতি হবে।
“২৫৮ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা ’’
বন্যায় বাসাবাড়ি পাশাপাশি সুনামগঞ্জের ১২ টি উপজেলা ২ শতাধিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করেছে ইতিমধ্যেই সেই বিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষনা করেছে কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুর রহমান বললেন, পানি বিদ্যালয়ে ঢুকে গেলে পাঠদান স্থগিত করে এলাকাবাসীকে আশ্রয় দেয়ার জন্য উপজেলা অফিসারদের নির্দেশনা দেয়া আছে। তারা তাদের প্রধান শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত প্রাথমিকে ২৫৮ টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে।
ত্রাণ নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন মেয়র ডিসি
শহরের বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে নৌকা নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন ও পৌর মেয়র নাদের বখত।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পৌর শহরের তেঘরিয়া বড়পাড়া এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের মধ্যে ত্রান সহায়তা পৌছে দেন তারা। এছাড়া বন্যার্তদের জন্য জরুরী সেবা দিতে কন্ট্রোল রুম ও পৌর কাউন্সিলদের সজাগ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন তারা।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়া বন্যার্তদের মধ্যে শুকনা খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেয়া হচ্ছে। সকল ইউএনওদের নির্দেশনা দেয়া আছে যেন তারা বন্যার্তদের পাশে থাকেন এবং যেকোন প্রয়োজনের দ্রুত ব্যবস্থা নেন।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, দ্বিতীয় দফা বন্যায় সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে, আমরা তাদের শুকনা খাবার পৌছে দিচ্ছি এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়া হচ্ছে। আমার কাউন্সিলরদের বলা আছে তারা যেন সবদিকে খোজ রাখেন এবং ত্রানের কোন অভাব নেই যথেষ্ট পরিমাণ খাবার আমাদের কাছে রয়েছে।
![](https://jago.news/wp-content/uploads/2024/02/WEB.png)