সুনামগঞ্জের বন্যায় যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা !
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুলাই ২০২০, ২:০২ অপরাহ্ণউজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে দু’দফা বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়ে বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে । এতে সুনামগঞ্জ শহরের সাথে বিভিন্ন উপজেলায় সরাসরি গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে।
অনেকে জরুরি প্রয়োজনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জেলা শহর থেকে পণ্য পরিবহন করছেন। অনেক সড়কে আটকে যাচ্ছে গাড়ি। পরে সেখান থেকে মালামাল নামিয়ে ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয় গন্তব্যস্থলে। এভাবেই চলছে সুনামগঞ্জের সাথে জেলার প্রায় ১০টি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ। সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন উপজেলার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা।সুনামগঞ্জ জেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)’র অধীনে থাকা প্রায় সাড়ে ৬শ কিলোমিটার সড়ক বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সাথে জেলার সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলার ১৯টি পয়েন্টের সংযোগ সড়ক ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অংকে আনুমানিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩শ ৮০ কোটি টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন বিভিন্ন ব্রিজ কালর্ভাট ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম ‘জাগো নিউজকে’ বলেন, জুন ও জুলাই মাসের দু’দফা বন্যায় সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগের ব্যাপক-ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানিতে জেলার সবকটি উপজেলার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২২টি মূল সংযোগ সড়ক পুরোপুরি ভেঙ্গে গেছে। আমাদের মোট সড়ক ৪ হাজার ৬৯৫ কিলোমিটারের মধ্যে ৬৫০ কিলোমিটার ভেঙ্গে গেছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩শ ৮০ কোটি টাকা।
তিনি আরও বলেন, সুনামগঞ্জ জেলা শহরের সঙ্গে চারটি উপজেলা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের শক্তিয়ারখোলা-আনোয়ারপুর নামক স্থান ভেঙ্গে যাওয়ায় তাহিরপুর উপজেলার সঙ্গে জেলা শহরের সড়ক যোগযোগ বিচ্ছিন্ন। সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্বর সড়কের রাধানগর, লালপুর এলাকায় ভেঙ্গে যাওয়ায় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সঙ্গে জেলা শহরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের জামলাবাজ এলাকায় ভেঙ্গে গিয়ে বিচ্ছিন্ন উপজেলা হিসেবে আছে জামালগঞ্জ। সুনামগঞ্জ-ছাতক সড়কের নোয়াগাঁও ও দোহালিয়া এলাকায় ভাঙ্গনে জেলা শহরের সঙ্গে সুনামগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।তিনি আরও বলেন, এগুলো মেরামতের জন্য বালু ফেলে দ্রুত ঠিক করে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দুই তিন দিনের মধ্যে সড়ক আপাতত চলাচলের উপযোগী করে দেয়া হবে। পরে বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে মূল কাজ করা হবে। ক্ষতি-ক্ষতির পুরো হিসেব পাওয়া গেলে আমরা মন্ত্রণালয়ে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামতের জন্য প্রস্তাব পাঠাবো।
এদিকে সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের ৩০ কিলোমিটার সড়ক খুব বেশি পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা টাকার অংকে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোকে আপাতত ইট ও বালির বস্তা দিয়ে ঠিকিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সাথে যাতে যান চলাচলও কিছুটা স্বাভাবিক রাখা যায় সে সাময়িকভাবে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পরে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পুরো হিসেব পাওয়া গেলে মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে দ্রুত সড়ক গুলো মেরামত করা হবে।সুনামগঞ্জ যাত্রী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, বন্যার পর মানুষজন সব চেয়ে ভোগান্তিতে পড়বে ভাঙ্গাচোরা সড়কের কারণে। জেলার সঙ্গে চারটি উপজেলার উপজেলার সড়ক যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে, বর্ষা মৌসুম হওয়ায় সাধারণ মানুষকে নৌকায় চলাচল করতে হচ্ছে। দ্রুত সড়কগুলো মেরামত করা না হলে ভোগোন্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছাবে।বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রনজিত চৌধুরী রাজন বলেন, জেলা শহর থেকে আমার ইউনিয়নের আবুয়া নদী পর্যন্ত সড়কটি এমনিতেই খানাখন্দে ভরপুর ছিল। দুই দফা বন্যায় সড়কের অনেক স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যান চলাচল লের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নের লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম ‘জাগো নিউজ’কে বলেন, চলতি দু’দফা বন্যা আমাদের ২২৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৩০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অঙ্কে তা প্রায় ২৫-৩০ কোটি হবে। ক্ষয়ক্ষতির হিসেব পাওয়ার পর বরাদ্দ পাওয়ার সাথে সাথে কাজ শুরু করা হবে।