লুঙ্গি পরার যত উপকারিতা
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৫:১৩ অপরাহ্ণশহরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে লুঙ্গি পরার রেওয়াজ নেই বললেই চলে। শুধু কি তাই? এ প্রজন্মের অনেকেই লুঙ্গি পরাকে ‘খ্যাত’ বলে টিপ্পনি কাটে। অথচ এটি উপকারী এবং আরামদায়ক একটি পোশাক।
লুঙ্গি পরিচিতি
লুঙ্গি একটি ড্রাম বা সিলিন্ডার আকৃতির পোশাক। বুক বা পেট থেকে নিচের দিকের অংশ ঢাকতে এই পোশাক পরা হয়। এই পোশাকের রয়েছে দুটি প্রান্ত। দুই প্রান্তই গোল এবং আকারে সমান। দুই দিকেই এর মুখ থাকে। যেকোনো এক পাশে পরলেই চলে। লুঙ্গিকে অনেক সময় হাঁটুর কাছে গিট্টু/ কাছা মেরে এর আকৃতি ছোট করে পরা যায়। সেই ক্ষেত্রে সেটা আধুনিক হাফ প্যান্টের মতো কাজ করে!
লুঙ্গির উপকারিতা
লুঙ্গির উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। তারপরও কিছু উপকারিতা দেওয়া হলো-
এই গরমে লুঙ্গির চেয়ে উপকারি পোশাক খুব অল্পই আছে। বদ্ধ ঘরে যেমন বাতাস ঢোকার জন্য ভেন্টিলেটর থাকে তেমনি শরীরে বাতাসের প্রবাহ বজায় রাখতে লুঙ্গির বিকল্প নেই। লুঙ্গি হচ্ছে গরমে শরীরের ভেন্টিলেটর!
ধরুন কেউ থ্রি কোয়ার্টার/ হাফ প্যান্ট পরে আছে। হুট করে খুব জরুরি একটা ফোন এলো যে তাকে এখনই বের হতে হবে। এমতাবস্থায় বাইরে বের হওয়ার জন্য প্রথমে লুঙ্গি/ গামছা পরে হাফ প্যান্ট খুলে জিন্স কিংবা বাইরে বেরুনোর পোশাক পরতে হবে। এটা বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আপনি যদি লুঙ্গি পরে থাকেন তাহলে হঠাৎ জরুরি কাজে বাইরে বের হতে হলেও সমস্যা নেই। জাস্ট যেটা পরে বের হবেন ওটা খুঁজে পেলেই খেল খতম। পোশাক চেঞ্জের জন্য লুঙ্গি খুঁজে সময় নষ্ট হবে না। কারণ লুঙ্গি তো পরাই আছে!
গরমে ফ্যান ছেড়ে ঘুমিয়েছেন। বিছানায় কোনো কাঁথাও রাখেন নাই। এদিকে ভোরবেলা অটোমেটিক কিছুটা শীত শীত লাগে! তখন কী করবেন? ঘুম থেকে উঠে কাঁথা খুঁজবেন? আরে ভাই লুঙ্গি থাকতে কাঁথার কী প্রয়োজন? শীত শীত লাগলে পরনের লুঙ্গির গিট্টু খুলে সেটাই কাঁথার মতো করে সারা গায়ে পেঁচিয়ে নিন। খেল খতম, শীত হজম!
খাবারের সমস্যার কারণে অনেক সময় লুজ মোশন হয়। এ সময় সিটিং সার্ভিস বাসের মতো বেশ কয়েকবার টয়লেট টু রুম যাতায়াত করতে হয়। সেটা কোনো ব্যাপার না। সমস্যা বাধে চাপ একটু বেশি হলে। যারা ট্রাউজার পরে থাকেন তাঁরা অধিক চাপে ট্রাউজারের গিট্টু খুলতে গিয়ে আরো পেঁচিয়ে ফেলেন। ফলাফল ভয়াবহ! এই ভয়াবহতা এড়াতে সব সময় লুঙ্গি পরুন। গিট্টু খোলার ঝামেলা নেই। নেই গিট্টুতে প্যাঁচ বেঁধে যাওয়ার ঝামেলা!
প্যান্টে চেইন/ জিপার ঝামেলায় পড়েননি এমন পুরুষ খুব কমই আছে! অনেকের কাছে এই স্মৃতি এক ধরনের বিভীষিকা। জিপার লেগে যাওয়ার ভয়ে অনেকেই প্যান্ট পরিহার করেন! তাদের জন্য লুঙ্গির কোনো বিকল্প নেই। কারণ লুঙ্গিতে কোনো জিপার সিস্টেমের দরকার নেই।
ভুঁড়ি নিয়ে অনেকেই অস্বস্তিতে থাকেন। প্যান্ট পরলে ভুঁড়ির একটা অংশ পাম বেশি হয়ে যাওয়া ফুটবলের মতো ফুলে থাকে। এই লজ্জা ঢাকতে লুঙ্গির চেয়ে ভালো কোনো বস্ত্র নেই। লুঙ্গি পরলে ভুঁড়ি তো দূরের কথা আপনার যে পেট আছে এটাই মানুষ বুঝতে পারবে না!
প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল/মানিব্যাগ মার হয়ে যাওয়ার ঘটনা অহরহই ঘটে। বিশেষ করে ভিড়ে, বাজারে, বাসে। লুঙ্গিতে পকেট না থাকায় বাধ্য হয়েই মোবাইল/ মানিব্যাগ আপনাকে হাতে রাখতে হবে। সেই ক্ষেত্রে আর যাই ঘটুক না কেন মোবাইল/ মানিব্যাগ হারানোর কোনো ভয় নেই।
লুঙ্গির অপকারিতা
লুঙ্গির তেমন কোনো অপকারিতা নেই। তবে ঝামেলা এড়াতে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা যেতে পারে।
সাবধানতা
লুঙ্গিতে একটাই গিঁট থাকে। এটা যেন খুলে না যায় সেজন্য সাবধান থাকতে হবে। ব্যবহারকারী নতুন হলে গিঁটের পাশাপাশি বেল্টও ব্যবহার করতে পারেন। মনে রাখবেন গিঁট খুলে গেলেই কিন্তু চিচিং ফাঁক!
বলা হয়, লুঙ্গি ও কপাল কার কখন খুলে যাবে সেটা কেউ জানে না। সুতরাং খেয়াল রাখুন কপাল খুলুক আর না খুলুক, লুঙ্গি যেন না খোলে!
ঘুমানোর সময় অনেকেরই লুঙ্গি খুলে যাওয়ার নজির আছে। এই ক্ষেত্রে ঘুমন্ত ব্যক্তি কিছু টের না পেলেও তার আশপাশে যারা থাকে তারা বেশ অসুবিধায় থাকে। এই অসুবিধা এড়াতে ঘুমানোর সময় সাবধানে থাকবেন। ব্যাকআপ হিসেবে লুঙ্গির নিচে পাতলা হাফ প্যান্ট পরতে পারেন!
সব শেষে বলা যায়, লুঙ্গি আমাদের দেশে গ্রাম থেকে শুরু করে শহরে সব খানেই অনেক জনপ্রিয় একটা পোশাক। সব শ্রেণীর মানুষ নিশ্চিন্তে এই পোশাক পরতে পারেন। এই গরমে বিদেশি থ্রি কোয়ার্টার, হাফপ্যান্ট পরিহার করে দেশীয় এই পোশাকের প্রতি মনযোগী হওয়া এখন সময়ের দাবি। তরুণ প্রজন্মের স্লোগান হওয়া উচিত-
পরব মোরা দেশি লুঙ্গি, ইচ্ছেমতো দেব ভঙ্গি (পোজ)!