রেড জোন : গরিবের খাবারের ব্যবস্থা করবে সরকার
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুন ২০২০, ১১:৪৯ অপরাহ্ণকরোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা জোনভিত্তিক ভাগ করে ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত লকডাউনে রাখা হবে। এই সময়ের মধ্যে তিন থেকে চারবার ওই এলাকায় থাকা করোনা আক্রান্ত রোগীদের উন্নতি-অবনতির তথ্য বিশ্লেষণ করা হবে। যদি দেখা যায় অবস্থার উন্নতি হচ্ছে তাহলে লকডাউনের সীমা বাড়ানো হবে না। সংক্রমণ যদি ঊর্ধ্বগামী হয় তাহলে লকডাউনের সীমা বাড়তে পারে। পরীক্ষামূলকভাবে এমন লকডাউন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের কয়েকটি এলাকায় করা হচ্ছে। শহরে এর কার্যকারিতা দেখে দেশব্যাপী প্রয়োগের চিন্তা করবে সরকার।
লকডাউন কার্যকর করতে বিস্তারিত প্রস্তাব গত রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা পড়ে। ওই দিন রাতেই প্রধানমন্ত্রী তাতে সম্মতি জানান। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটা অ্যাপ্রিশিয়েট করেছেন।’ প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে তিনি জানান, আইটি ব্যবহার করে সারা পৃথিবীতে জোনিং হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। সংক্রামক ব্যাধি আইন অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দায়িত্বপ্রাপ্ত। এরই মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পূর্ব রাজাবাজার এলাকা আজ মঙ্গলবার রাত থেকে লকডাউনে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কমিশনার ফরিদুর রহমান খান। তিনি বলেন, প্রথম দিকে ১৪ দিনের জন্য লকডাউন হচ্ছে। পরে প্রয়োজন হলে আরো সাত দিন বাড়ানো হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারী এলাকাও লকডাউন করার কথা। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
যেসব ব্যবস্থা থাকছে
সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রেড জোনে যদি কোনো বস্তি থাকে তাহলে বস্তিবাসীদের লকডাউন সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা দেবে সরকার। এ ছাড়া লকডাউনের কারণে হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকদের জন্যও খাবার সংস্থান করা হবে। এই দায়িত্ব পালন করবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। রেড জোনে থাকা বাসিন্দাদের কঠোরভাবে বাড়ির মধ্যে থাকতে বাধ্য করা হবে। অফিস, কলকারখানা একবারে বন্ধ থাকবে। তাদের প্রয়োজনীয় মনিহারি দ্রব্য, ওষুধসহ অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বাসায় বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এর জন্য স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করা হবে প্রতিটি ওয়ার্ডে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে এই কাজ সম্পন্ন হবে।
কোনো যানবাহন চলবে না। তবে রাতের বেলায় পণ্যবাহী যান চলাচল করতে পারবে। এক কথায় রেড জোনে যারা পড়বে তারা ঘর থেকে বের হতে পারবে না। এই এলাকা থেকে বের হয়ে অফিসও করা যাবে না। রেড জোনে থাকার কারণে কোনো চাকরিজীবী ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ এটি সরকারের ঘোষিত সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবে।
ইয়েলো জোনে কলকারখানা, অফিস অর্ধেক জনবল নিয়ে খোলা রাখা যাবে। এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার লকডাউন কার্যকরের সঙ্গে যুক্ত থাকা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। ইয়েলো জোনে মুদি, ওষুধ ও খাবারের দোকান খোলা থাকবে। খাবারের দোকানে ভিড় জমানো যাবে না। খাবার নিয়ে বাসায় খেতে হবে। এই এলাকায় গণপরিবহন চলবে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে। রিকশা, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে একজন করে চড়তে হবে।
জোনভিত্তিক লকডাউন কার্যকর করার ক্ষেত্রে জনসম্পৃক্ততার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। স্থানীয় রাজনীতিকদের কিভাবে যুক্ত করা যায় তার নির্দেশনাও থাকছে। মেয়ররা স্থানীয় সংসদ সদস্যদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো অবহিত করবেন। আর কাউন্সিলররা সংসদ সদস্যের মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেবেন।
মেয়র কমিশনারদের নেতৃত্বে দুই কমিটি
জোনভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনায় দুটি কমিটি হবে। মহানগরগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনার ১০ সদস্যের কমিটিতে নেতৃত্ব দেবেন সংশ্লিষ্ট সিটি মেয়র। সদস্যসচিব থাকবেন সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ডিএমপি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, এটুআই, সিটি করপোরেশনের সিস্টেম এনালিস্ট, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর, এনজিওর উপযুক্ত প্রতিনিধিরা কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন।
কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে থাকছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিহ্নিত জোনগুলো থেকে অগ্রাধিকার ও পারিপার্শ্বিক সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে জোন বা স্পট বাছাই করা। নির্ধারিত জোনের লকডাউনসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য নিজ নিজ কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান। জোন ব্যবস্থাপনা কমিটিকে প্রয়োজনীয় গাইডলাইন প্রদান।
অন্যদিকে ৯ সদস্যের জোন বা স্পট ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিশনার। এ ছাড়া আঞ্চলিক নির্বাহী অফিসার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, এলাকার রাজনৈতিক প্রতিনিধি (এমপি নির্ধারিত), ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন, এলাকার কল্যাণ সমিতি, স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং একজন এনজিও প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে থাকবেন। জোনভিত্তিক কমিটির কার্যপরিধিতে রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী লকডাউন বাস্তবায়ন করা, লকডাউন কার্যকর করার স্বার্থে জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা, জনসচেতনতামূলক প্রচারণা বৃদ্ধি করা এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করা।