রহস্যের অবসান : সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর হত্যাকারীর নাম প্রকাশ
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জুন ২০২০, ৩:৩৯ অপরাহ্ণকয়েক দশকের রহস্যের অবসান ঘটিয়ে ১৯৮৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ওলোফ পামের হত্যাকারীর নাম প্রকাশ করেছেন সুইডেনের প্রসিকিউটররা। তারা হত্যাকারী হিসেবে ‘স্ক্যান্ডিয়া ম্যান’ নামে পরিচিত গ্রাফিক ডিজাইনার স্টিগ এংস্টর্মকে চিহ্নিত করেছেন।
এই ব্যক্তি ২০০০ সালে আত্মহত্যা করায় পাম হত্যাকাণ্ডের তদন্ত বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন দেশটির চিফ প্রসিকিউটর ক্রিসটার পিটারসন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ওলোফ পাম ১৯৮৬ সালে খুন হন
১৯৮৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দেহরক্ষীদের বিদায় দিয়ে স্ত্রী লিসবেট, ছেলে মার্টিন ও তার বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে সিনেমা দেখতে যান সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী ওলোফ পাম। সিনেমা শেষে স্টকহোমের ব্যস্ত রাস্তা ধরে স্ত্রীর সঙ্গে হেঁটে ফিরছিলেন তিনি। সেই সময় পিছন থেকে তাদের ওপর হামলা চালায় এক বন্দুকধারী। পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়ে তাৎক্ষনিকভাবে মারা যান ৫৯ বছর বয়সী পাম। ঘটনাস্থলে .৩৫৭ ম্যাগনাম হ্যান্ডগানের বুলেট পাওয়া গেলেও অস্ত্রটি কোনওদিনই পাওয়া যায়নি।
ব্যস্ততম রাজপথে ওই হত্যাকাণ্ডের পর বহু মানুষ এক ব্যক্তিকে পালিয়ে যাওয়ার আগে গুলি ছুঁড়তে দেখে। পরে হত্যাকাণ্ড নিয়ে হাজার হাজার মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের জন্য ছোটখাটো এক অপরাধীকে দণ্ডিত করা হলেও পরে তা বাতিল করে দেওয়া হয়।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে সুইডেনের চিফ প্রসিকিউটর ক্রিসটার পিটারসন বলেন, ‘হত্যাকারী ব্যক্তি হলো স্টিগ এংস্টর্ম। ওই ব্যক্তি মারা যাওয়ায়, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যাচ্ছে না আর সেকারণেই তদন্ত বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র পাওয়া যায়নি এবং নতুন কোনও ফরেনসিক প্রমাণও আবিষ্কৃত হয়নি। তবে পুলিশের কাছে দেওয়া এংস্টর্মের স্বাক্ষ্য পরীক্ষা করে দেখছেন প্রসিকিউটররা। পিটারসন বলেন, ‘সে যে বর্ণনা দিয়েছে তাকেই আমরা হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা বলেই বিশ্বাস করছি।’
সুইডেনের প্রসিকিউটররা বলছেন, প্রথমে তাদের তদন্তের কেন্দ্রে ছিলেন না স্টিগ এংস্টর্ম। কিন্তু পরে যখন তদন্তকারীরা ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে দেখতে পান ওই ব্যক্তি অস্ত্র ব্যবহারে অভ্যস্ত ছিল, সেনাবাহিনীতে কাজ করেছে আর একটি শ্যুটিং ক্লাবের সদস্যও ছিল। নিজ এলাকায় প্রধানমন্ত্রী ওলোফ পামের নীতির সমালোচনাকারী একটি দলের সদস্যও ছিল এংস্টর্ম। তার আত্মীয়রাও জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব ছিল তার। ওই সময়ে অতিরিক্ত অ্যালকোহল আসক্তির কারণে আর্থিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে তদন্তকারীরা প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার নেপথ্যে তার কোনও পরিষ্কার উদ্দেশ্য এখনও দেখতে পায়নি বলে জানান পিটারসন।
উল্লেখ্য, ক্যারিশমাটিক প্রধানমন্ত্রী ওলোফ পাম সুইডেনের সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা ছিলেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতেও সরব ছিলেন তিনি। নিজ দেশে সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছিলেন তিনি। কথা বলেছেন পারমাণবিক শক্তির বিরুদ্ধেও। ১৯৬৮ সারে চেকোস্লোভেকিয়ায় সোভিয়েত আগ্রাসনের সমালোচনার পাশাপাশি ওলোফ পাম উত্তর ভিয়েতনামে মার্কিন বোমা বর্ষণের কঠোর সমালোচনা করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার মারাত্মক বর্ণবিদ্বেষকেও আক্রমণ করেছেন তিনি।