‘জুনার মিথ্যাচারের জন্য জীবন শেষ করলাম’। ধারনা করা হচ্ছে, মৃত্যুর আগ মুহুর্তে ৬ শব্দের এই বাক্য লিখে পৃথিবীকে চিরবিদায় জানিয়ে পরপারে পাড়ি জমান গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা শেখর কান্তি পাল।
নবীগঞ্জ পৌর এলাকার একটি বাসা থেকে শেখর কান্তি পাল (৪৫) নামে গ্রামীণ ব্যাংক কর্মকর্তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার (২৭আগস্ট) সকালে মামলার প্রেক্ষিতে জুনা আক্তার নামে ওই পরকীয়া প্রেমিকা গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ পৌর এলাকার হলিমপুরের একটি বাসা থেকে ওই ব্যাংক কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
শেখের কান্তি পাল মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার বরমচানপুর গ্রামের মৃত শংকর লাল পালের পুত্র। তিনি ১ বছর ধরে গ্রামীণ ব্যাংক নবীগঞ্জ শাখায় ব্যাপস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মামলার এজাহার সূত্রে ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, চাকরীর সুবাদে ইতিপূর্বে চুনারুঘাট শাখা কর্মরত ছিলেন শেখর কান্তি পাল। স্ত্রী সন্তান থাকা সত্ত্বেও চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা গ্রামের জুনা আক্তার (৩০) নামে এক মাদকাসক্ত নারীর সাথে তার পরিচয় হয়। এই পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে ওই ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রী সুকলা রাণী পাল পারিবারিক কলহ দেখা দেয়। পরকীয়ার ঘটনা নিয়ে চুনারুঘাটে তোলপাড় শুরু হলে তিনি বদলী হয়ে নবীগঞ্জ শাখায় চলে যান। তারপরও ওই নারী তার পিছু ছাড়েনি। প্রায়ই টাকা পয়সার জন্য তাকে চাপ দিতো। বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্যাংক কর্মকর্তার শেখর কান্তি পালের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশকে খবর দিলে নবীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে। এসময় লাশের পাশ থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ। চিরকুটে লিখা ছিল- ‘জুনার মিথ্যাচারের জন্য জীবন শেষ করলাম’। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
পরকীয়ার সম্পর্কে হতাশ হয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রী সুকলা রাণী পাল।
এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার রাতে নবীগঞ্জ থানায় শেখর কান্তি পালের স্ত্রী সুকলা রাণী পাল বাদী হয়ে পরকীয়া প্রেমিকা জুনা আক্তার (৩০) কে আসামী করে আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা দায়ের করা হয়।
শুক্রবার সকালে নবীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ ডালিম আহমেদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে নবীগঞ্জ পৌর এলাকার হলিমপুরের একটি বাসা থেকে জুনা আক্তার (৩০) গ্রেফতার করা হয়।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ডালিম আহমেদ বলেন, পরকীয়ার কারণে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এঘটনায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে জুনা আক্তার নামে এক নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জুনার সাথে ওই ব্যাংক কর্মকর্তার পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। শুক্রবার দুপুরে জুনা আক্তারকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।