ভেস্তে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক উদ্যোগ : কোর্টের নিষেধাজ্ঞায় থমকে আছে গৃহ নির্মাণ

জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ মে ২০২১, ৩:৪২ পূর্বাহ্ণ
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছেনা ভূমিহীন ও গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ কাজ। মুজিববর্ষে হতদরিদ্র, ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে গৃহায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক এ উদ্যোগ স্থানীয় প্রভাবশালীদের দাপটে ও সংশ্লীষ্টদের তদারকির অভাবে থমকে আছে । যার কারণে ঘর নির্মাণ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ঘর নির্মাণে ব্যবহৃত কাঠসহ বিভিন্ন গুরুত্ব নির্মাণ সামগ্রী। এরফলে সুবিধাভোগীদের মাথা গুজার ঠাঁই পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ভূমি নিজের লীজপ্রাপ্ত দাবী করে বিজ্ঞ হবিগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে একটি স্বত্ব মামলা দায়ের করেছেন আবুল কালাম আজাদ নামের এক ব্যক্তি। ফলে আদালত নিমার্ণ কাজের উপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেন । সেই সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নবীগঞ্জকে এ বিষয়ে কারন দর্শানোর নোটিশ প্রদান কনে। এতে ৮টি ঘরের চলমান নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে ইনাতগঞ্জের দীঘিরপাড় এলাকায় সরকারী ভূমি বন্দোবস্ত প্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার স্বপ্নের ঘরে উঠতে পারছেন না ওই ভূমিহীন ও গৃহহীন ৮টি পরিবার। এদিকে দেরীতে হলেও নির্বাহী কর্মকর্তা বিজ্ঞ আদালতে কারন দর্শানোর জবাব দাখিল করেছেন।
জানা যায়, সারা দেশের ন্যায় নবীগঞ্জ উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র মানবিক উদ্যোগ ভূমিহীন ও গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। উপজেলায় ৩৯০ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের তালিকা প্রণয়ন করলে প্রথম পর্যায়ে ১১০টি গৃহের মধ্যে অধিকাংশ ঘরের কাজ প্রায় শেষ। এর মধ্যে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে ৮টি ঘরের কাজ অল্পের জন্য থমকে আছে। অপরদিকে দ্বিতীয় ধাপে ৪০ গৃহ নির্মাণের বরাদ্দ আসে যার কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। পরবর্তীতে আরও ২০টি ঘর বরাদ্দ আসলেও অর্থ না আসায় কাজ শুরু হয়নি। প্রথম ধাপে ১১০টি ঘরের মধ্যে জেলা প্রশাসক পর্যায়ক্রমে ৮৭টি নির্মিত গৃহ ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে হস্তান্তর করেন।
প্রথম ধাপের বরাদ্দ’র অংশ হিসেবে ইনাতগঞ্জ বাজার সংলগ্ন দীঘিরপাড় এলাকায় সরকারের খাস খতিয়ানের ২২.৭১ শতক ভূমির মধ্যে ৮ জন ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে ১৬ শতক ভূমি বন্দোবস্ত দিয়ে ৮টি গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে একেকটি গৃহ নির্মাণে বরাদ্দ রয়েছে। নির্মাণ কাজ শুরু করলে আহমদ আবুল কালাম আজাদ নামের এক ব্যক্তি ভূমি তার নামে বন্দোবস্ত দাবী করে নির্মাণ কাজে বাঁধা দেন। ফলে সহকারী কমিশনার ভূমি সুমাইয়া মুমিন তাকে একাধিকবার নোটিশ করলে সে উপযুক্ত কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়। গত ২৩ জানুয়ারী প্রথম ধাপের ১১০টির মধ্যে ২৫টি ঘর সমঝিয়ে দেয়া হয় উপকার ভোগীদের মাঝে। যার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে ১ম ধাপের ৮৭টি নির্মিত গৃহ ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু কাজ শেষ পর্যায়ে আসলেও ২০ জানুয়ারী হবিগঞ্জ সহকারী জজ আদালতের নিষেধাজ্ঞার আদেশের কারণে ইনাগঞ্জের ৮টি ঘরের শেষ পর্যায়ের কাজ আটকা পড়ে। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ওই ৮টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। ফলে কপাল ভাঙ্গে ভূমিহীন ও গৃহহীন ৮টি পরিবারের। তবে এরমধ্যে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ প্রদান নীতি মালা ২০২০ এর আওতায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা মোতাবেক ১৯/২০২০-২০২১ইং নং স্থায়ী বন্দোবস্ত মোকদ্দমায় ইনাতগঞ্জে মোঃ আলফু মিয়া গং, হারুন মিয়া গং, মোঃ ইছব আলী গং, মোঃ ফরাস উদ্দিন গং, মোঃ আব্দুল নুর গং, মোঃ ছমির উদ্দিন গং, অধীর চন্দ্র দাশ গং, মোঃ জিলু মিয়া গং দের মাঝে বন্দোবস্ত প্রদান পূর্বক নবীগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার অফিসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি সম্পাদন করে দেয়া হয়েছে। যা পরবর্তীতে তাদের নামে নামজারি করা হয়েছে।
নবীগঞ্জ উপজেলায় ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত প্রথম ধাপে ১১০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ খাস জমি প্রদান করে ঘর নির্মাণ করে দেয়া কথা রয়েছে। দুই কক্ষ বিশিষ্ট প্রতিটি আধাপাকা ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। একই ডিজাইনে বাড়িগুলো নির্মাণ করা হবে। রান্নাঘর, সংযুক্ত টয়লেট ও ইউলিটি স্পেসসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া নির্মিত ঘরের মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন ।
এ ব্যাপারে আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, অনুমান ৭৩/৭৪ সালে স্থায়ী বন্দোবস্ত নেন। এছাড়া তিনি আর কোন তথ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করে বলেন যা বলার আদালতে বলবো।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া মমিন বলেছেন, উল্লেখিত ভূমি টুকু সরকারী খাস ভূমি। বিধি মোতাবেক মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ৮ জন ভুমিহীনদের মাঝে ১৬ শতক ভুমি বন্দোবস্ত প্রদান করে আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেয়া হয়েছে। আবুল কালাম আজাদের দাবী অবৈধ ও অযৌক্তিক। এই জায়গা সরকার কাহারো নামে স্থায়ী বা অস্থায়ী বন্দোবস্ত বা লীজ প্রদান করেন নি। তবে একাধিকবার উনাকে ডাকার পরও তিনি বৈধ কোন কাগজপত্র নিয়ে হাজির হন নি। বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালতে জবাব প্রদান করা হয়েছে। আদালতের পরবর্তী আদেশ প্রাপ্তি সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোঃ মহি উদ্দিন বলেন, আবুল কালাম আজাদের কোন প্রকার বৈধ কাগজ পর্যন্ত নাই। যা তিনি ইতিপুর্বে দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ভূমি প্রকৃত অর্থে সরকারের ১নং খাস খতিয়ান ভুক্ত। যা এসএ ও আর এস বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ড বিদ্যমান রয়েছে। উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের মোস্তাফাপুর মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের ১২৪/১২০০ দাগে মোট ২২.৭১ শতক ভূমি নদী শ্রেণী হিসেবে এসএ রেকর্ডে বিদ্যমান ছিল। বিগত আরএস জরিপে উল্লেখিত ভূমি ৬৩২ দাগে আউশ শ্রেণী হিসেবে ০.০৩০০ একর, ৬৩৫ দাগে লায়েক পতিত শ্রেণী হিসেবে ০.০৬০০ একর, ৬৩৬ দাগে চারা শ্রেণী হিসেবে ০.৩৬০০ একর, ৬৩৭ দাগে আউশ শ্রেণী হিসেবে ০.২৮০০ একর ভূমি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ড হয়।

