Logo

বিদেশী বন্ধুর উপহারের ফাঁদে নবীগঞ্জের সামিহা!

মতিউর রহমান মুন্না
জাগো নিউজ : শুক্রবার, জুলাই ৩১, ২০২০

image_pdfimage_print

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের পরিচয়ের মাধ্যমে একের পর প্রতারণা করে যাচ্ছে প্রতারক চক্র। সচেতনতার অভাবে ডলার-পাউন্ডের লোভে পড়ে অনেকেই খোয়াচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। প্রতারণার এ চক্রে জড়িত দেশি-বিদেশি নাগরিকরা। তাদের কৌশল ইংল্যান্ড-আমেরিকার নাগরিক পরিচয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে চলা বন্ধুত্বের একপর্যায়ে বিদেশি বন্ধুটি দামি উপহার পাঠান বাংলাদেশি বন্ধুকে। ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় সেই উপহারের পার্সেল। বিমানবন্দরের কাস্টমসে শুল্ক বাবদ টাকা পরিশোধ করলেই উপহারগুলো কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পৌঁছে যাবে বাড়িতে। কিন্তু টাকা পরিশোধ করার পরও উপহার বাড়িতে যায় না। বরং কাস্টমসের নামে নানা কৌশলে চাওয়া হয় শুল্ক ও ঘুষ বাবদ টাকা। এত কিছুর পরও বিদেশি বন্ধুর উপহার পান না বাংলাদেশি বন্ধু। কেউ কেউ বিশ্বাস করতে চান না তিনি প্রতারিত হয়েছেন।
বিমানবন্দর ও কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে কমপক্ষে শতাধিক মানুষ এ প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছেন। দামি উপহারের লোভে পড়ে অনেকেই কাস্টমসের নামে চাওয়া ‘শুল্ক ও ঘুষ’ বাবদ লাখ লাখ টাকা খরচ করলেও কোথাও কোনও অভিযোগ দেননি। বরং উল্টো উপহারের আশায় থেকে দুষেছেন বিমানবন্দর ও কাস্টমসকে।

এমনই এক প্রতারনার শিকার হয়েছেন নবীগঞ্জের এক তরুনী। নাম সামিহা আক্তার। প্রতারণার শিকার হয়ে লজ্জায় তিনি নিজের নাম-ঠিকানা গোপন রেখে শুধু মানুষকে সর্তক করতে সংবাদটি প্রচারের অনুরোধ জানান জাগো.নিউজকে।
সামিহা আক্তারের বাড়ী নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের এক গ্রামে। তিনি একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন। সম্প্রতি ‘জেক’ নামের ব্যক্তি ফেসবুকে ফেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায় সামিহাকে। এর কিছু দিনপর তাদের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। জেক নামের ওই প্রতারক সামিহাকে জানায় সে ফ্রান্সের একজন ব্যবসায়ী। এমনকি সামিহাকে বোন বলে ইংরেজিতে কথা বার্তা বলে জেক। গত ১ সপ্তাহ আগে জেক সামিহার কাছে জানতে চায় বাংলাদেশের অবস্থা কেমন আছে। এক পর্যায়ে সে সামিহাকে জানায় করোনা ও বন্যা কবলিতদের কিছু সাহায্য করতে চায় সামিহার মাধ্যমে। কিছু ডলার ও সোনার গয়না, কসমেটিকস পাঠাতে চায় সামিহার কাছে। এসব বলে সে কিছু সোনার গয়না, কসমেটিকক্সের ছবি তুলে পাঠায় সামিহাকে। পরে জেক এসব উপহার পার্সেল পাঠায়। এবং সামিহাকে জানায় পার্সেলটি বাড়িতে পৌছে দেওয়া হবে। আর এই ডলার দিয়ে মানুষকে সাহায্য করার জন্য বলে সামিহাকে। গত ২৯ জুলাই ০১৭৭৮০৭১০৭৪ নং থেকে এক ব্যক্তি কল দিয়ে জানায় সে কাস্টমস থেকে কল দিয়েছে। সামিহার নামে একটি জরুরী পার্সেল এসেছে, স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়েছে এটার ভিতরে ৩টা বক্স আছে, এক বক্সে ৪০ হাজার ডলার আছে, বিপুল পরিমান সোনা আছে। যিনি পাঠিয়েছেন তিনি বিদেশী নাগরীক এ কারণে প্রায় ২০ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হবে। শুল্ক না দিলে পার্সেলটি ফেরত চলে যাবে। বিকাশ নম্বর দিয়ে প্রতারক বলে দ্রুত ওই নম্বরে টাকা পাঠানোর জন্য। তার কথা মতো সামিহাও উপহারের লোভে বিকাশে ০১৭৯৭০০৭১৮৯ নম্বরে ১৭ হাজার ৬ শত ১৯ টাকা পাঠায়। এর পর থেকেই নম্বর দুটি বন্ধ। এরপর অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েন সামিহা। পরে তিনি বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
সামিহা আক্রার জাগো.নিউজকে জানান- তার মতো এভাবে যাতে আর কেউ এসব প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা না দেয়, সবাইকে সর্তক থাকতে হবে।

এ প্রসঙ্গে কাস্টমস ও পুলিশ জানিয়েছে, প্রতারকচক্র বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীদের টার্গেট করে। প্রায় সব নারীর ক্ষেত্রেই কাস্টমস থেকে দামি উপহার ছাড়িয়ে নেওয়ার ফাঁদে ফেলে টাকা নেওয়া হয়। তবে পুরুষরাও এ চক্রের খপ্পরে পড়েছেন। যদিও পুরুষকে ফাঁদে ফেলার গল্পটা একটু ভিন্ন।

গত ১৪ জুলাই বিদেশি ডলার পাবার লোভে পড়ে এক লাখ ৬৩ হাজার টাকা হারিয়েছেন তানজিলা আক্তার হাসনা নামের শায়েস্তাগঞ্জের এক গৃহবধূ।
এমন অভিজ্ঞতা শুধু এক-দুজনেরই নয়। গত কয়েকবছরে এ ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন অনেক মানুষ। কেউ দুই লাখ, কেউ পাঁচ লাখ, আবার কেউবা আরও বেশি টাকা খুইয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়, তারপর কথোপকথন, উপহার, বিদেশ নিয়ে যাওয়া, মূল্যবান উপহার পাঠানোসহ নানা কৌশলে প্রতারণার ফাঁদে ফেলা হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে বিদেশে চাকরি দেওয়ার নাম করেও প্রতারণা করা হয়।

বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন্স অ্যান্ড মিডিয়া) আলমগীর হোসেন এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘একটি প্রতারকচক্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছে। তারা যুক্তরাজ্যের নাগরিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। দীর্ঘ সময় আলাপের পর নারীদের কাছে দামি উপহার পাঠানোর কথা বলে। কাস্টমস থেকে উপহার ছাড়ানোর নামে টার্গেট ব্যক্তিকে টাকা পাঠাতে বলে। এভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল চক্রটি। সম্প্রতি আমরা এমন একটি চক্রের সদস্যকে আটক করেছি।’ আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সমাজের প্রতিষ্ঠিত অনেকেই এই প্রতারকচক্রের ফাঁদে পড়েছেন। কোনও উপহারের লোভে না পড়ে, সর্তক থাকা প্রয়োজন।’

গত ২২ জুলাই এমন সাইবার প্রতারণা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে দুই নাইজেরিয়ান নাগরিকসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাদের আটক করে ডিএমপি’র সাইবার অপরাধ তদন্ত বিভাগ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

অন্যান্য সংবাদ
Theme Created By ThemesDealer.Com
x
error: কপি করা নিষেধ !
x
error: কপি করা নিষেধ !