বানের জলে ভেসে গেছে তাঁদের ঈদ
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুলাই ২০২২, ২:১০ পূর্বাহ্ণসিলেটের কোম্পানীগঞ্জের রণিখাই এলাকার কৃষক আবদুস সবুর। প্রতিবছর তিনি ঈদুল আযহাকে টার্গেট করে গরু লালন পালন করেন। কোরবানির পশুর হাটে তোলেন ১৫-২০টি গরু। গরু বিক্রির টাকা দিয়েই তার সারাবছর সংসার চলে। এবারও পরিচর্যা করে ২১টি গরু প্রস্তুত করেছিলেন। কিন্তু সর্বনাশা বন্যা আবদুস সবুরকে সর্বহারা করে গেছে। বানের পানিতে মারা গেছে তাঁর ৯টি গরু। বন্যার মধ্যে পানির দামে বিক্রি করেছেন ৬টি। আর বন্যার মধ্যে খবার ও যত্মের অভাবে বাকি ৬টি গরু হাড্ডিসার। তাই গরু বিক্রি করে পরিবার নিয়ে ঈদ উদযাপন আর সারা বছরের সংসার চালানোর স্বপ্ন ভেসে গেছে বন্যার পানিতে।
গোয়াইনঘাটের নন্দিরগাঁওয়ের আবদুল মতিনের ভিটেশূণ্য করে ঘরবাড়ি ভেসে গেছে বন্যার পানির স্রোতে। কয়েকটি টিন জোগাড় করে একচালা তৈরি করে কোনরকম মাথার উপর আকাশ ঢেকে রেখেছেন তিনি। ঈদের দিন কোরবানি দেয়া তো দূরের কথা চুলোয় আগুন জ¦লবে কি-না সেই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন মতিন।
এমন চিত্র কেবল আবদুস সবুর কিংবা আবদুল মতিনের নয়। সিলেটে বন্যাকবলিত প্রতিটি এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার ও আশ্রয় সংকট। যেসব কৃষক গরু ও ধান বিক্রি করে ঈদ উদযাপন করতেন, তাদের ঘরে এখন আনন্দের পরিবর্তে বিষাদ। বন্যায় তছনছ হয়ে গেছে তাদের জীবন। বসতঘর, গোয়ালঘর, গুদামের ধান, ঘরের আসবাবপত্র সবকিছু ভেসে গেছে বন্যার পানিতে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে সর্বহারা মানুষ যেন এখন যেন সঙ্গী করে নিয়েছেন খোলা আকাশকে। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তার ধারে, কিছুটা স্বস্তিতে থাকা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। ফলে এবার ঈদুল আযহা বানভাসী এসব মানুষের ঘরে কোন আনন্দের বার্তা নিয়ে আসতে পারেনি।
জকিগঞ্জ উপজেলার বিপক গ্রামের মজনু মিয়া জানান, এখনো তার বাড়িতে পানি। পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে আছেন। কেউ ত্রাণ দিয়ে গেলে দুমুঠো ভাত কিংবা শুকনো খাবারের সংস্থান হয়। আর না মিললে উপোস করতে হয় পরিবার নিয়ে। গেল বছর ঈদেও তিনি অন্যদের সাথে ভাগে কোরবানী দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার কোরবানী তো দূরের কথা ঈদের দিন ভাতের ব্যবস্থা করতে পারবেন কি-না এ নিয়ে শঙ্কা আছেন মজনু মিয়া।
সিলেটে এবার কোরবানীর পশুর হাটেও প্রচুর পরিমাণ গরু ওঠেছে। ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু নিয়ে এসেছেন। কিন্তু গরুর তুলনায় ক্রেতা সমাগম কম। খোঁজ নিয়ে জানা গেেছ, গেল বছর ঈদে যেসব নি¤œ ও মধ্যবিত্ত লোকজন ভাগে কোরবানী দিয়েছিলেন, এবার তারা কোরবানী দিচ্ছেন না। বন্যায় তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা তছনছ করে দিয়ে যাওয়ায় কোরবানী দেওয়ার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছেন তারা।
সিলেটের সর্ববৃহৎ পশুর হাট কাজিরবাজারের ব্যবসায়ী লতিফ আহমদ জানান, ঈদের আর মাত্র তিনদিন বাকি। কিন্তু এখনো বাজারে ক্রেতাদের দেখা নেই। আগে যেখানে এক সপ্তাহে আগে থেকে কাজিরবাজারে কোরবানির পশু বিক্রি জমে ওঠতো সেখানে এবছর গরু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।