নবীগঞ্জে শিক্ষা কর্মকর্তার উদাসীনতায় ফেরত গেল ১কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ আগস্ট ২০২০, ২:৩৯ অপরাহ্ণঅবশেষে নবীগঞ্জ উপজেলার ৮৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কারের ১ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা ফেরত চলে গেছে। বারবার মিটিং ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদনসহ নানা তদবির করেও টাকাগুলো রাখা যায়নি। অপর দিকে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের পুরো সংস্কার/আধা সংস্কার করেও বিল তুলতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষকরা। আলোচিত এই ঘটনায় নবীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার কাজী সাইফুল ইসলামের উদাসীনতাকে দায়ী করা হচ্ছে।
এতগুলো প্রতিষ্ঠানের টাকা ফেরতের ঘটনাকে নজিরবিহীন হিসেবে আখ্যায়িত করছেন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ। এ ঘটনায় উপজেলা সমন্বয় সভায় উপজেলা শিক্ষা অফিসারের অপসারনের দাবিও তুলেছেন অনেকে। উপজেলা শিক্ষা অফিস ও দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ৫৯টি বিদ্যালয়ে ২ লক্ষ এবং ২৬টি বিদ্যালয়ে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মেরামত কাজের জন্য অনুমোদিত হয়। বিদ্যালয়গুলোর অনুকূলে বরাদ্দ নিয়ে লুকোচুরি খেলায় মেতে ওঠে উপজেলা শিক্ষা অফিস। ৬ মাস পর উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম অবগত হন।
২১ জুন এনিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষকদের অগ্রিম ভিত্তিতে কার্যসম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিধিমোতাবেক উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী কর্তৃক কাজের অগ্রগতির প্রত্যয়ন নিয়ে বিপত্তি দেখা দেয়। কাজের অগ্রগতি ও প্রত্যয়ন ছাড়া টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা নিশিকান্ত দেবনাথ। তৈরি হয় জটিলতা। এনিয়ে সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল কয়েকদফা বৈঠক করেও সমাধানে ব্যর্থ হন। মাত্র ৬টি বিদ্যালয় কার্য সম্পাদন করে অর্থ উত্তোলন করে। ৭৯টি বিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত অর্থের বরাদ্দ বাতিল হয়।
অনেক শিক্ষক পুরো ও আংশিক কাজ করে ক্ষতিগ্রস্ত হন। অনেক স্থানে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাথে শিক্ষকদের মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এছাড়া গত ডিসেম্বর মাসে আসা বরাদ্দ নিয়ে রহস্যজনক নিরবতা এবং শেষ মুহূর্তে বরাদ্দকৃত অর্থ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অনুকূলে নেয়ার প্রচেষ্টাকে কমিশন বাণিজ্যের পরিকল্পনা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা নাটকিয়তা হলেও কোন সমাধান হয়নি।
অবশেষে বিদ্যালয় সংস্কারের নামে বরাদ্দ আসা টাকাগুলো ফেরত চলে যায়। কিন্ত নিজের টাকা দিয়ে কাজ করে শেষে বিল না পেয়ে হতাশ হয়েছেন শিক্ষকবৃন্দ।
নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের বনগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নানু মিয়া বলেন ‘জাগো নিউজ-কে-‘বনগাঁও স্কুলে ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ আসে। তিনি শতভাগ কাজ সম্পন্ন করেও বিল তুলতে পারেননি। টাকা ফেরত যাওয়ায় বিল না পেয়ে তিনি বিপাকে পড়েছেন।
নবীগঞ্জ উপজেলার লক্ষীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অশেষ কুমার দাশ ‘জাগো নিউজ-কে বলেন-‘তিনি স্কুলে ছাদ ঢালাই, রংকরণ ও শহীদ মিনার নির্মাণ করেছেন। বরাদ্দকৃত ২ লক্ষ টাকার মধ্যে প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার কাজ সম্পন্ন করেও বিল না পেয়ে হতাশ তিনি। এ ঘটনাটি পুরো নবীগঞ্জ উপজেলার জন্য দুঃখজনক বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও শিক্ষা কমিটির সভাপতি ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম ‘জাগো নিউজ-কে বলেন, রহস্যজনক কারণে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেষ মুহূর্তে বরাদ্দের ঘটনা অবহিত করেন। তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিয়েও আইনি জটিলতায় টাকা ফেরত যায়।
দুরভিসন্ধিমূলক ঘটনায় দায়ভার অবশ্যই শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিতে হবে। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কাজী সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করেও না পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।