ডিসেম্বরে নবীগঞ্জ পৌর নির্বাচন: সরব সম্ভাব্য প্রার্থীরা
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৩:২০ অপরাহ্ণভার্চুয়াল প্রচারণায় প্রার্থীরা
আগামী ডিসেম্বরে পৌরসভার ভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ওই সময়ে ভোট করার প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে। নবীগঞ্জ পৌরসভাসহ প্রায় আড়াইশ’র মতো পৌরসভায় ভোট হতে পারে। এই লক্ষ্যে ইসি সচিবালয়কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।
এ ঘোষনার পর থেকেই নবীগঞ্জ পৌরসভায় আগাম মাঠে সরব মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। কেউ কেউ নীরবে জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ও আবার অনেকেই ভার্চুয়াল প্রচারণায় সরব। প্রার্থীদের কর্মী ও সর্মথকরা তাদের নেতার বিভিন্ন ছবিসহ উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পোস্ট দিতে সক্রিয় রয়েছেন। এবারের নির্বাচনে সরকারী দল আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়নে প্রত্যাশী। এতে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি।
নবীগঞ্জ পৌরসভায় সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর। সে হিসেব অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। মিডিয়াতে এমন এ খবর শুনেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখনই মাঠে নেমে পড়েছেন।
তবে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেতে অনেকেই দৌড়ঝাঁপ করছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তারা জেলা-কেন্দ্রে নানা লবিং তদবির করছেন বলেও জানা গেছে।
স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, এবার আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন- সাবেক মেয়র আওয়ামীলীগ নেতা অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী, নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী, নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ মিলু, নবীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম রসুল চৌধুরী রাহেল। গেল নির্বাচনেও তারা নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। অবেশেষে নৌকার মাঝি হয়েছিলেন ৩ বারের নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী।
তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরীর সমর্থকরা বলছেন- একটানা ৩ বারের নির্বাচিত মেয়র তিনি ও সিনিয়র হিসেবে তাকেই দল মূল্যায়ন করবে। পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে যা উন্নয়ন হয়েছে সবই তোফাজ্জল ইসলামের আমলের। এবারও পৌরবাসী তোফাজ্জল ইসলামকেই চায়। বলছেন সমর্থকরা।
এবার নতুন চমক সাইফুল জাহান চৌধুরী। তিনি এবার প্রার্থী হবেন বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সাইফুল জাহান চৌধুরী ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু এখন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী এমনকি দল তাকে মূল্যায়ন করবে বলেও আশাবাদী।
গোলাম রসুল চৌধুরী রাহেল বর্তমান সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপির জামাতা। তার সমর্থকরা দাবী করছেন- উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাহেল চৌধুরী যুব সমাজের আইকন, একজন সৎ ও ক্লিন ইমেজের বঙ্গবন্ধুর আর্দশের সৈনিক। এবার দলীয় মনোনয়নে তিনি চমক দেখাতে পারেন বলেও মনে করেন তারা।
অপরদিকে মোস্তাক আহমেদ মিলুর সমর্থকরা বলছেন- তিনি বঙ্গবন্ধুর আর্দশের একজন সক্রিয় নেতা। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে শুরু করে এখন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়ীত্বে আছেন। এ হিসেবে দল তাকেই মনোনয়ন দেবে বলে আশা করছেন।
এ ছাড়াও হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য ও জেলা তাতীলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল মালিক, বর্তমান পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১, জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবিলীগের ১ম যুগ্ম সাধারন সম্পাদক তিন বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর এটিএম সালাম এর নামও শুনা যাচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে।
অপরদিকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। এখন পর্যন্ত বিএনপি থেকে আলোচনায় আছেন- বর্তমান মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি ছাবির আহমেদ চৌধুরী। কিন্তু দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহ করবে কিনা? বা নবীগঞ্জে বিএনপির আর কোন প্রার্থী আছে কিনা তা জানা যায়নি। আনুষ্ঠানিক প্রার্থীতা ঘোষনা প্রচারণায় মাঠে নামেনি কেউ।
এছাড়া মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহন নবীগঞ্জ মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মাহবুবুল আলম সুমন। এমটাই প্রচার করছেন সমর্থকরা। তাদের দাবী মাহবুবুল আলম সুমন শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। সৎ ও একজন দক্ষ প্রার্থী হিসেবে আগামী নির্বাচনে তাকে প্রয়োজন বলে জানান তার সমর্থকরা।
নির্বাচনী হাওয়া পুরোদমে শুরু না হলেও ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে চলছে প্রচারনা। অপরদিকে বসে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। স্ব স্ব ওয়ার্ডে চলছে গণসংযোগ। পুরাতন প্রার্থীর পাশাপাশি নতুন মুখও আসছে ৯টি ওয়ার্ডে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নবীগঞ্জ পৌরসভা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে টানা তিন বার মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী। গেল নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। দলীয় কোন্দলের কারণে নৌকার প্রার্থীর পরাজয় বলেও অনেকেই মনে করেন। ওই নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে দায়ীত্ব পালন করছেন ছাবির আহমেদ চৌধুরী।
নাগরিক অভিযোগঃ পৌরবাসীর দীর্ঘ দিনের দূর্ভোগ পৌছে গেছে এখন চরমে। বৃহত্তর সিলেট বিভাগের মধ্যে এ এলাকাটি উল্লেখযোগ্য হলেও থেমে আছে অবকাঠামো উন্নয়ন। বঞ্চিত রয়েছে রাস্তাঘাটসহ নানান ধরনের সুযোগ-সুবিধা। প্রবাসী অধ্যুষিত এ এলাকায় বিশাল বিশাল অট্টালিকা নির্মান হলেও অবকাঠামো উন্নয়ন তেমন নেই বল্লেই চলে। এছাড়া শহরের প্রায় সড়কই ভাংঙা চুড়া ও গর্তে ভরা। এ ছাড়া ১ম শ্রেণীর খ্যাতাব প্রাপ্ত পৌরসভার নেই কোন নিজস্ব ভবন। ভাড়া করা ভবনেই চলছে কার্যক্রম। এছাড়া যানজটের সমস্যা নিত্যসঙ্গী। পৌর শহরের প্রধান রাস্তার মধ্যস্থান দখল করে রেখেছে অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড, সবজী দোকানসহ ফুটপাতের নানা ব্যবসায়ীরা। বারবার প্রশাসন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেও বহাল তবিয়তে থেকে যায় এসব অবৈধ দখলকারীরা। প্রায় ৩৩ হাজার মানুষের বসবাস এই পৌরসভায়। এর একমাত্র পৌর শহররের মূল রাস্থায় বাস, মিনি বাস, টেম্পু, সিএনজি অটোরিকশা থামিয়ে যাত্রী উঠা নামা করছেন দীর্ঘ সময় ধরে। যার ফলে সারা শহরে যানজট লেগে থাকে। এ পৌরসভার সাধারণ নাগরিকদের দূর্ভোগ পৌছে গেছে চরমে। যে যেভাবে পারে প্রধান সড়ক দখল করে গড়ে তুলছে দোকানপাঠ।
এসব নাগরিক সমস্যা সমাধানে যারা কাজ করবে তাদেরকেই আগামীর মেয়র চান পৌরবাসী।