নবীগঞ্জের হৃদয় এখন তার মায়ের কাছে
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুন ২০২০, ৮:৪১ পূর্বাহ্ণজাগো নিউজ ডেস্ক ::
প্রায় ৩ মাস পূর্বে নবীগঞ্জের পল্লীর হৃদয় নামের এক ৮ বছর বয়সী কিশোর মায়ের সাথে অভিমান করে ঢাকায় গিয়ে হারিয়ে যায়। তবে কিভাবে তার খোঁজ পাওয়া গেল এবং তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়ার গল্প শুনুন ‘রিলেশন টু পিপল এর সভাপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ পাপনের ফেসবুক স্ট্যাসের মাধ্যমে।’
ইমতিয়াজ মোহাম্মদ পাপনের ফেসবুক পোস্টটি জাগো নিউজের পাঠকের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো–
-
‘শেষমেশ হৃদয়কে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পারলাম।প্রথমেই অশেষ ধন্যবাদ জানাই Imran Mridha ভাইকে। হারিয়ে যাওয়া হৃদয়কে তার বাড়ি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য।হৃদয় (৮) এর বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলার ৪নং দীঘলবাক ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মাধবপুর (গাঙের পার) গ্রামে। কিছুদিন আগে তার বাবা মারা যান এবং এরপর থেকে মায়ের কাজের সুবাদে বাড়ি ছেড়ে আউশকান্দি বাজারে বাসা ভাড়া করে থাকে তারা। অভাব অনটনের মধ্যেও ছেলেকে আউশকান্দি ইউনিয়নের উলুকান্দি এতিম মাদ্রাসায় ভর্তি করান। মার্চ মাসের শুরুর দিকে মায়ের সাথে অভিমান করে ঢাকাগামী গাড়িতে চড়ে রাজধানীতে পাড়ি দেয় হৃদয়। সেদিন থেকেই নিখোঁজ।কিছুদিন আগে ঢাকায় হৃদয়কে খোঁজে পান তেঁতুলিয়া পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা ইমরান মৃধা ভাই। হৃদয়ের সাথে কথা বলে জানতে পারেন সে হারিয়ে গেছে এবং বাড়ি ফিরে যেতে চায়। কিন্তু ৮ বছর বয়সী হৃদয় তার বাড়ির ঠিকানা বলতে শুধু নবীগঞ্জ মাধবপুর (গাঙের পার) এবং বাবা মায়ের নাম বলতে পারে। কোন ফোন নাম্বার বা যোগাযোগের মাধ্যম বলতে পারেনি। গত ২৯শে মে ইমরান ভাই আমাকে ফোন দিয়ে হৃদয়ের বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলে এবং তার মায়ের কোন খোঁজ পাওয়া যায় কি না দেখতে বলে। কিন্তু ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে ঘটিত এতো বড় উপজেলায় তার ঠিকানা খোঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। আরেকটা সমস্যা ছিল নবীগঞ্জ উপজেলায় একাধিক গ্রামের নাম মাধবপুর হওয়ায়। পরবর্তীতে আমি সাংবাদিক ছোট ভাই মতিউর রহমান মুন্নার সাহায্যে নবীগঞ্জ থানার ওসি স্যার এবং মাধবপুর গ্রামের ওয়ার্ড মেম্বার জিল্লুর সাহেবের সাথে যোগাযোগ করি এবং অনেক খোঁজাখুঁজির পরে হৃদয়ের পরিবারের সন্ধ্যান পাই। তার চাচা মধু মিয়ার ফোন নম্বর মুন্নার মাধ্যমে যোগাড় করে উনার সাথে যোগাযোগ করি এবং উনার কাছ থেকে জানতে পারি যে তার বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা স্বামীর বাড়ি ছেড়ে উনার ৩ সন্তান নিয়ে আউশকান্দি চলে আসেন। তার চাচার কাছ থেকে মায়ের নাম্বার যোগাড় করি এবং উনার সাথে কথা বলে তাকে ফিরিয়ে আনার কথা বলি। কিন্তু মহিলা অসুস্থ এবং আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল থাকায় তাকে ঢাকা গিয়ে নিয়ে আসার কোন সুযোগ ছিল না। নবীগঞ্জ থানা বা ওসমানীনগর ফাঁড়িতে কোন জিডি না থাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোন সহযোগিতা পাচ্ছিলাম না।তাই পরবর্তীতে অন্য কোন রাস্তা না পেয়ে আজ ইমরান ভাইয়ের মাধ্যমেই তাকে নবীগঞ্জে নিয়ে আসি এবং তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেই। ছেলেটার মুখের অমায়িক হাসি যেন সকল কষ্ট নিমিশেই মাটি করে দিলো….
- আবারো ধন্যবাদ জানাই ইমরান ভাইকে। দেশের এমন পরিস্থিতিতেও ছেলেটাকে নিজের কাছে রেখে এতোদিন দেখাশোনা করার জন্য।
-
ছেলেটা ওয়াদা করেছে আর তার মাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না, তার অসুস্থ মায়ের পাশে থাকবে সবসময় এবং দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হলে আমি চেষ্টা করবো তাকে তার মাদ্রাসায় পুনরায় ভর্তি করিয়ে দিতে। ‘
এ প্রসঙ্গে উপরোল্লিখিত পোষ্টদাতা রিলেশন টু পিপল এর সভাপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ পাপন জাগো নিউজকে বলেন- আমরা সব সময় মানব সেবায় নিয়োজিত থাকতে চাই। খুব কষ্ট লাগছিল এই হৃদয়ের খবর পেয়ে। ঢাকা থেকে হৃদয়কে পাঠানোর পর, আমারা তাকে রিসিভ করার জন্য আগে থেকেই আউশকান্দি অপেক্ষায় ছিলাম। সার্বক্ষণিক গাড়ীর সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে অবশেষে হৃদয়কে পেয়ে তার মায়ের কাছে তুলে দিতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। আমি চেষ্টা করবো থাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয়ার।