নবীগঞ্জের দু‘টি স্কুলের নাম নিয়ে বিব্রত শিক্ষক-শিক্ষার্থী
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ আগস্ট ২০২০, ৭:৩০ অপরাহ্ণনবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম খনকারিপাড়া। গ্রামের নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ হওয়ার কথা থাকলেও সরকারের তালিকায় ‘ঋণখারীপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে অর্ন্তভূক্ত করা হয়। এরপর থেকেই এ নামেই চলছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। বিদ্যালয়টি ১৯৭৯ সালে স্থাপিত।
একই হাল নবীগঞ্জ পৌর এলাকার গন্ধা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। ১৯৮১ সালে স্থাপিত এই বিদ্যালয়টি গ্রামের নামে নামকরণ করা হলেও টাইপিং মিস্টেকে গন্ধার স্থলে লেখা হয় গনজা। সরকারীভাবে বিদ্যালয়টি নামকরণ করা হয় গনজা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বারবার চেষ্টা করেও নাম করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যালয়গুলোর এমন নাম শুনে হাসাহাসি করে অনেকেই।
শিক্ষার্থীরা জানান- নিজেদের স্কুলের নাম উচ্চারণ করতে তারা লজ্জাবোধ করেন। নাম নিয়ে ওই বিদ্যালয় গুলোর ছাত্র-ছাত্রীরা বিব্রত পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন বলে জানান শিক্ষকরাও।
শুধু নবীগঞ্জের এই দু বিদ্যালয়ের নামেই ভূল নয় এমন আরও নানা উদ্ভট নামের বিদ্যালয় সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে আছে। তবে এবার শ্রুতিমধুর নয়, এমন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এ প্রসঙ্গে গনজা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিনুর আক্তার চৌধুরী পান্না জাগো.নিউজকে জানান, “গ্রামের নামে স্কুল, কিন্তু টাইপিং এ যুক্তবর্ণ লিখতে এই ভুল হয়েছে, গনজা শব্দের কোন ভিত্তি নেই। কিন্তু গন্ধা ওই গ্রামের নাম। আর প্রত্যেক জায়গায় গ্রামের নামে স্কুল হয়। এমন নাম নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিব্রতবোধ করে। তিনি আরো বলেন, ইতিপূর্বেও রেজুলেশন করে স্কুলের নাম গ্রামের নামে সঠিক নামকরণ করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।”
এ প্রসঙ্গে ঋণকারীপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক লিটন দাশ জাগো.নিউজকে জানান, “মূলত গ্রামের নামেই বিদ্যালয়ের নাম কিন্তু ভূলবসত খনকারীপাড়া না লেখে লেখা হয়েছে ঋনখারীপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের এ নাম উচ্চারন করতে শিক্ষার্থীরা বিব্রতবোধ করেন। অনেকে আবার হাসাহাসি করে নাম নিয়ে। নাম পরিবর্তনের জন্য গত বছর একটি আবেদনও করা হয়েছিল কিন্তু কোন সমাধাণ হয়নি।”
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ রুবেল মিয়া জাগো.নিউজকে বলেন, “শ্রুতিকটু নামগুলি পরিবর্তন, সংশোধনের যে উদ্যোগটি সরকারিভাবে নেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। বর্তমান আধুনিক যুগে এসে নাকফাটা, চুমাচুনি বগাডুবি নামগুলি বেমানান। এতে এই স্কুলগুলির নাম উচ্চারন করতে বিব্রতবোধ হতে হয়।
শিক্ষকদের পক্ষ থেকে নাম সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহনের সুযোগ করে দেওয়ায় সচিব মহোদয় সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। সংশোধনের ধারাবাহিকতায় আমাদের নবীগঞ্জেও যে দু একটি স্কুলের নামে ভুল রয়েছে তা সংশোধিত হবে এই প্রত্যাশা করছি।”
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন জাগো.নিউজকে বলেন- “শ্রুতিমধুর নয় এমন বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে চিঠি এসেছে শিক্ষা অফিসে। এ নিয়ে আমরা উপজেলা শিক্ষা কমিটির মিটিং করবো। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট যে তালিকা রয়েছে এটা যাচাই বাচাই করে যদি দেখা যায় কোন বিদ্যালয়ের নাম শ্রুতিমধুর নয় বা টাইপিং মিস্টেক রয়েছে সেক্ষেত্রে আমরা নাম পরিবর্তন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেব।”
এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গত ০৬ আগস্ট এমন সব বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের জন্য সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, সারাদেশে এমন কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম আছে যা শ্রুতিমধুর নয় এবং ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে শোভন নয়। যা নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে হাস্যরসের সৃষ্টি হচ্ছে। ‘এরূপ বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে শোভনীয় নামকরণের প্রস্তাব যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে অধিদপ্তরে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। ‘
সারাদেশে অনেক স্কুলের নাম নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে সরকার। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ‘মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’র নাম পরিবর্তন করে ‘মানুষগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামকরণ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।