দেশে কী কারফিউ জারি হবে ?
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মে ২০২০, ২:৩৭ অপরাহ্ণন্যাশনাল ডেস্ক,জাগো নিউজ :
দেশে আলোচনায় কারফিউ। বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল সরকারের কাছে পরামর্শ রেখেছে। তারা বলেছেন, ঈদের আগে ও পরে ঢাকায় সান্ধ্য আইন জারি করা যেতে পারে। আট সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির দেওয়া এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বর্তমানে সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। তবে দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, শুধু ঢাকাতেই নয়, ওই প্রতিবেদনে ইঙ্গিত আছে যে, সিটি কর্পোরেশনগুলোকে বাগে রাখতে যা করা দরকার তাই করতে হবে। যে তিনটি বিভাগ রেড জোনে আছে, তার অন্যতম সিলেট। সিলেটের জনগণ ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছেন,তারা ঢিলেঢালা লকডাউনে বিশ্বাসী।
শর্ত না মেনে তারা ঈদের শপিং তাদের বেজায় ভাল্লাগে। যদিও প্রতিদিনই তারা জানছেন যে, করোনার সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা চার ডিজিটের নিচে আর নামছেই না। উপরন্তু আইইডিসিআর–এর উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত ড. মুশতাক হোসেনের বক্তব্যের পরে এটা এখন বিশ্বাসযোগ্য যে, সরকারি পরিসংখ্যান আর বাস্তব চিত্র তুলে ধরছে না। ড. মুশতাক বলেছেন, সরকারি ভাষ্যে যা বলা হচ্ছে তার থেকে ২৫ থেকে ৪০ ভাগ বেশি হবে আক্রান্তের সংখ্যা।
তাহলে সিলেটে যা বলা হয়, তার সঙ্গে অন্তত ৩০ ভাগ বেশি ধরে হিসেব করলে সংখ্যাটা উদ্বিগ্ন হওয়ার জন্য যথেষ্ট। পঞ্চম সপ্তাহ থেকেই তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে সংক্রমণ। এখন আর সন্দেহ সামান্যই যে, টেস্ট বাড়ালেই পজিটিভ রোগীর সংখ্যা বাড়বে। সুতরাং টেস্ট এবং পজিটিভ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান সিলেটসহ দেশের কোথাও বাস্তবতা নির্দেশ করে না। কারণ দৈনিক টেস্টের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত প্রতিনিধিত্বশীল নয়। প্রথম আক্রান্তের পরে একাদশ সপ্তাহে এসেই উল্লম্ফন। প্রথম চার দিনের পরিসংখ্যান সামনে আরও খারাপ পরিস্থিতির ভয় জাগাচ্ছে। এরমধ্যে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে। নতুন পরীক্ষাও হয়েছে সর্বোচ্চ সংখ্যক। এই সময়ে ১০ হাজার ২০৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১ হাজার ৬১৭ জনের দেহে সংক্রমণ বা কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। সুতরাং যদি প্রতিদিন এক লাখ টেস্ট করানো হয়, তাহলে প্রায় ১৫ হাজার ব্যক্তির পজিটিভ হওয়ার একটা আশঙ্কা এখন আর তুরি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। কয়েক সপ্তাহ আগেও একটা ধারণা ছিল এবং এখনও পর্যন্ত সরকারি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একটি বড় অংশ বিশ্বাস করেন, ইউরোপের মতো অবস্থা দক্ষিণ এশিয়ায় হবে না। কিন্তু ভারত ও পাকিস্তান ঢিলেঢালা লকডাউনেই ছিল। তাই এখন তারা মাশুল দিচ্ছেন। সাবেক ব্রিটিশ-ইণ্ডিয়া জুড়ে শুরু হয়ে গেছে উহান দৈত্যের তাণ্ডব। আট সদস্যের ওই প্যানেল বলেছিল, ১৬ থেকে ১৮ মের মধ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমণের পর্যায় (পিক) শুরু হবে। চলবে ঈদুল ফিতর পর্যন্ত। এর সত্যতা ফলেছে। তবে প্রশ্ন হলো, পিক মানে কি? যত কম টেস্ট ততো পিকের জোরটা কম হবে। সুতরাং পিক নির্ভর করছে মূলত সরকারি নীতির ওপর। তবে লক্ষণীয় সরকারি বিশেষজ্ঞরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, সচেতনতার অস্ত্রে এই দানব রুখতে হবে। মানুষ বিধিনিষেধে কান না দিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীকে কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনে কারফিউ বা সান্ধ্যআইন জারি করতে হবে।
রাজনীতিকদের মধ্যেও অনেকে সুর মেলাচ্ছেন। কর্নেল অলি আহমেদ বলেছেন, কারফিউ বা জরুরি অবস্থা দিতে হবে। দেশে মোট আক্রান্তের ৫৭ ভাগের বাস ঢাকা। আর সিলেটের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ কেউ বন্ধ করেনি। বিভিন্নভাবে মানুষ সিলেটের সঙ্গে আন্তঃজেলা যাতায়াত অব্যাহত রেখেছে। এসব কেউ মনিটর করছে না। সিলেট ও হবিগঞ্জ শনাক্তের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে তিন ডিজিট ছুয়েছে। অর্থাৎ ১০০ ছাড়ালো। বাকি দু্ জেলাও কাছাকাছি। চার জেলার কোনোটির রেখাই আর নিচে নামছে না। উঠছে তো উঠছেই। প্রশ্নসর্বত্র একটাই। জীবিকা নাকি জীবন? বাংলাদেশ এত উন্নতি করলেও আজ বিপদের দিনে তাকে যেকোনো একটি বেছে নেওয়ার মতো বাস্তবতায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
লক্ষণীয় যে, শিথিল লকডাউন যে সংক্রমণ রোধ করে না, বরং অধিকতর বিস্তার ঘটায় প্রতিবেশী ভারতে সেটা প্রমাণিত। ভারতও কড়া ব্যবস্থায় যেতে রাজি ছিল না। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যায় চীনকেও ছাড়িয়ে যাওয়ায় ভারতে গত সোমবার থেকে চতুর্থ দফায় লকডাউন শুরু করেছে। ৩১ মে পর্যন্ত চলবে । এ দফার লকডাউনে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে ছাড় নয় আরো কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। তবে ভারতে চতুর্থ দফার লকডাউনে উল্লেখযাগ্য ঘোষণা হলো, সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত গোটা ভারতে কার্যকর থাকবে কারফিউ। ভারতে কারফিউর ফলে সন্ধ্যা ৭টার পর কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারবে না। সন্ধ্যায় বন্ধ হয়ে যাবে পরিবহন–ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব দোকানপাট। ভারতীয় কারফিউর প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়বে। জনগণের যাতায়াত ছাড়াও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল যা শুরু হয়েছিল, তাতে নতুন করে বাধা আসবে। অবশ্য বাংলাদেশে রাতের বেলায় এখন যে কড়াকড়ি কাগজে–কলমে চলছে, সেটাকে বিদেশী মিডিয়া কিন্তু রাত্রিকালীন কারফিউ হিসেবেই দেখেছে। তারা সেভাবেই রিপাের্ট করেছে। কিন্তু বাংলাদেশীরা কারফিউ তাদের জীবনে দেখেছেন। সুতরাং কারফিউ কি জিনিস সেটা তাদের ধারণার বাইরে নয়। সেই তুলনায় তারা রাতের বেলায় যাতায়াত সীমিত রাখেন, নিতান্ত ঠেকায় পড়ে। কোনো কারণে গণপরিবহন চালু থাকলে দেখা যেত তারা কতোটা সংযম করেন।
বিশেষজ্ঞ দলের অন্যতম সদস্য ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শাহ মুনির বলেন, সিটি করপোরেশনগুলোতে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। বড় শহরগুলোতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে সারা দেশে তা কমানো যাবে। সুতরাং এই মন্তব্যের আলোকে কারফিউ–র মতো পদক্ষেপ নিলে তাতে লকডাউনে থাকা বিভাগীয় শহর হিসেবে সিলেট যে একেবারেই বাদ থাকবে, সেটা নাও হতে পারে।