‘দেওয়ান ফরিদ গাজী জনদরদী জননেতা’ – পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুল মোমেন
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ নভেম্বর ২০২০, ৮:৫৯ অপরাহ্ণসিলেটের কৃতি সন্তান দেওয়ান ফরিদ গাজীর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ লেখকের হয়েছিল এবং আলোচ্য প্রবন্ধে ব্যক্তিগত আলোকে দু’চার টি ঘটনার উল্লেখ করবো। এসব ঘটনা তাঁর বিশাল ব্যক্তিত্ব এবং দরিদ্র ও সাধারণ লোকের প্রতি অগাধ ভালবাসার পরিচয় বহন করে।
গরিবের বন্ধু ফরিদ গাজী: ১৯৭১ সাল বাংলাদেশ সবেমাত্র স্বাধীন হয়েছে। জনাব দেওয়ান ফরিদ গাজী আঞ্চলিক বেসামরিক প্রধান। নিজের ঘর-দুয়ার নেই,তাই শিবগঞ্জের টেনু মিঞার বাড়িতে উঠেছেন। শীতের সকাল একজন লোক এসেছে সাধারণ লোক। অত্যান্ত দরিদ্র সে গাজী সাহেবের পাঞ্জাবির পকেটে কোনো টাকা নেই, কিন্তু লোকটির দুঃখে তিনি কাতর। বললেন টাকা আছে- যেই টাকা বের করা হলো তা তাকিয়ে না দেখে সাথে সাথে গরীব লোকটিকে দিয়ে দিলেন। এমনি ধরনের ঘটনা একবার নয় অনেকবার হয়েছে এমনকি বাংলাদেশের মাননীয় মন্ত্রী থাকাবস্থাও এমন ঘটনা হরহামেশা হত। তিনি যেমন উদার হৃদয়ের লোক তাঁর মরহুমা স্ত্রীও ছিলেন অনুরূপ বিরাট হৃদয়ের প্রতিভূ। ঘরে যতেষ্ট খাবার নেই নিজের ছোট ছোট বাচ্চাগুলো খাবারের জন্যে এদিক-ওদিক করছে, কিন্তু কাজের লোকের বাচ্চাটি কিংবা অন্য কোনো গরিব এসেছে, কথা নেই বার্তা নেই, নিজের যৎকিঞ্চিত আহার অন্যের সাথে ভাগ করেছেন এমন দৃশ্য হরহামেশা দেখেছি। ‘সকল মানুষ সমান’ এই শাশ্বত সত্যটি দেওয়ান ফরিদ গাজী ও বেগম ফরিদ গাজীর জীবনে সদা পরিলক্ষিত হয়েছে।
অল্পতে সন্তুষ্ট ফরিদ গাজী:
অল্পতে সন্তুষ্ট ফরিদ গাজী। এমন চরিত্রের পরিচয় পাওয়া যায় একাধিকবার। ১৯৭৫ সাল। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতা হিসাবে নয়াদিল্লিতে আন্তর্জাতিক ‘এসকাপ’ কনফারেন্সে যাবেন দেওয়ান ফরিদ গাজী। সঙ্গে রয়েছেন পাঁচজন সরকারি কর্মচারী। তাঁর একান্ত সচিব হিসেবে দলের সদস্য সচিব হিসাবে আমিও যাচ্ছি নয়াদিল্লিতে। উপনেতা পরিকল্পনা কমিশনের অতিরিক্ত সচিব ডঃ আশরাফুজ্জামান। সরকারি দৈনিক ভাতা অতি সামান্য। সুতরাং প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য পরিকল্পনা কমিশনের জনাব মহিউদ্দিন সাহেব প্রস্তাব করলেন যে এশিয়া ফাউন্ডেশন থেকে দৈনিক ভাতা নিতে। তাতে চারগুণ বেশি ভাতা পাওয়া যাবে, প্লেন ভাড়া ও প্রথম শ্রেণীর হবে। তৎকালীন সময়ে মন্ত্রীরাও ‘ইকোনোমীতে’ যাতায়াত করতেন। তবে বিশেষ অনুরোধ করলে বিশেষ করে। প্রতিনিধি করে প্রতিনিধি দলের নেতা হলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে প্রথম শ্রেণীতে যাওয়া যেত। মন্ত্রণালয় প্রথম শ্রেণীতে যাওয়ার জন্যে খসরা তৈরি করলে এবং তা অনুমোদিতও হলো কিন্তু মাননীয় মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজী বললেন, ‘সারা জীবন ইকোনোমীতে ভ্রমণ করেছি — ফাস্ট ক্লাশ টাশ বাদ দাও। নয়া দিল্লিতে পৌঁছলে পর ভারতের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ডি.পি. চট্টোপাধ্যায় তাকে রিসিভ করতে আসেন। দূতাবাসের লোকজনরা প্রথম শ্রেণীর সিঁড়ি দিয়ে যারা নামেছেন তাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। এদিকে মাননীয় মন্ত্রী নামছেন পেছনের সিঁড়ি দিয়ে অবস্থা দেখে সবার আক্কেল-গুড়ুম কিংকর্তব্য বিমূঢ় তবে ভারতীয় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর অধ্যাপক ডি.পি. চট্টোপাধ্যায় তাতে গভীরভাবে অভিভূত হন। বলেন– দেশ স্বাধীন হয় না এমনিতে / আপনাদের মত মন্ত্রী যথার্থ শ্রদ্ধার পাত্র। এখানে উল্লেখ্য যে, ভারতীয় মন্ত্রীর আদিবাসী ছিল ঢাকা জেলায়।
জনদরদি ফরিদ গাজী: দেওয়ান ফরিদ গাজীর মন অত্যন্ত উদার প্রকৃতির, স্থান-কাল-পাত্রভেদে সকলের সেবায় তিনি সর্বদা মুক্তহস্ত। তিনি যেমন উদার এবং সহজ সরল প্রকৃতির তার মরহুমা স্ত্রীও ছিলেন অনুরূপ উদার প্রকৃতির, বিশাল হৃদয়ের। জন-মন-প্রাণ দেওয়ান ফরিদ গাজী আনন্দ জনগণের সেবা মাঝে। বাংলাদেশের মোটামুটি প্রত্যেক মন্ত্রী মিনিষ্টার সম্পর্কে দুর্নীতির অভিযোগ আছে কিন্তু জনাব ফরিদ গাজী এর ব্যতিক্রম। অত্যন্ত সৎ ভাবে তিনি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, ঐ সময়ে সুতা,টেলিভিশন,রেফ্রিজারেটর মাছের ঝাল ইত্যাদি সকল কিছুর দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন মাননীয় মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজী- কিন্তু আমার জানামতে এসব বিলি বন্টনে কখনো দুর্নীতি করার মনো বৃত্তি আমি কখনো দেখিনি। আমার সৌভাগ্য যে, এমন সৎ মন্ত্রীর সাথে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাংলাদেশে দেওয়ান ফরিদ গাজী বিশাল ব্যক্তিত্বের লোকের খুবই অভাব — এধরনের নিষ্ঠাবান সংগঠক এবং জনদরদি সৎ নেতৃত্বের প্রয়োজন আমাদের জাতীয় জীবনে সবচেয়ে বেশি।
লেখক: ডঃ এ.কে. আব্দুল মোমেন
পররাষ্ট্র মন্ত্রী