Logo

তন্ত্র মন্ত্র ও ঝাড়ফুঁক দিয়েই চলে জীবন সংসার

জাগো নিউজ
জাগো নিউজ : মঙ্গলবার, মে ১৯, ২০২০

image_pdfimage_print

নবীগঞ্জের বেদে সম্প্রদায়ের লোকদের দুঃখ কষ্টের কথা

মতিউর রহমান মুন্না : দেশে ভাসমান অবস্থায় যাদুবিদ্যা তন্ত্রমন্ত্র ও ঝাড়ফুক দিয়ে লোকজনকে আকৃষ্ট করে যাদের জীবন চলে সমাজের চোখে তারাই হল বেদে। তাদের জীবন কাটে ছোট্ট ছোট্ট বহর তৈরী করে দেশের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত ছুটে চলে যারা তারাও তো এদেশের নাগরিক। তাদের জীবন কাহিনী আমাদের সমাজের আরো দশ জনের মত নয়। ব্যতিক্রমধর্মী জীবন কাহিনী এ দেশের বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনের।

তাদের স্বপ্ন শুধু এ কর্ম করে একমুঠো অন্ন যোগানো আর ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসারের ভরন পোষণ করা। তাদের নেই কোন নিজস্ব সহায় সম্পত্তি। তাই জায়গা জমি নিয়ে নেই কোন দাঙ্গা হাঙ্গামা, নেই রাজনৈতিক কোন মাথাব্যাথা, নেই কোন হিংসা প্রতিহিংসা বাড়তি টেনশন। তাদের চিন্তা একটাই যাদুবিদ্যার এই কর্ম করে কোন রকমে জীবন গাড়ী চালিয়ে যাওয়া। তাদের সমাজের ছেলে মেয়েদের অনেক সময় সমাজের চিরায়ত নিয়মের কারণে বাধ্য হয়েই কিশোর বয়সে অনেক স্থানে বিয়ে দিতে দেখা যায়। তবে এ বাস্তবতার ব্যতিক্রমধর্মী মানুষ মোঃ আব্দুল ওয়াহাব সর্দার নামের ব্যক্তি। বাল্য বিবাহ ও যৌতুকের বিরুদ্ধে অনেক সময় ওই বেদে সর্দার প্রতিবাদ করেন। তবে তার বেদের বহরগুলোতে বাল্য বিবাহ যৌতুক এসব কাজ নিষিদ্ধ বলে এ প্রতিবেদককে জানান তিনি। তার পিতার নাম আনছার আলী, জন্মস্থান দিনাজপুর জেলার লৌহজং উপজেলা সদরে। নবীগঞ্জ উপজেলা আউশকান্দি বিশ্ব রোড পাশে মিঠাপুর সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত বেদের বহর ঘুরে শোনা যায় ওই সমাজের লোকজনের নানান দুঃখ কষ্টের কথা। ঝড় তুফান ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ যতই আসুক না কেন এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করেই বেচেঁ থাকার জন্য তাদের জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়। তাদের ছেলে-মেয়েরা জন্মের পর থেকেই তাদের পূর্ব পুরুষের আদি শিল্প পেশা টিকিয়ে রাখতে অনেকেই যাদুবিদ্যা ও তন্ত্র মন্ত্র করে পরিবার পরিজনের ভরন পোষন করতে হয়। তবে যাদুবিদ্যা যে শুধুই হাতের চালাকি ও অভিজ্ঞতা বলে জানান আব্দুল ওয়াহাব সর্দার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিলেট অঞ্চলেই আমরা স্বাধীনভাবে ব্যবসা চালিয়ে নিজেদের বাড়ীঘরের মত চলাফেরা করতে পারি। এ অঞ্চলের মানুষজন খুব ভাল, তারা আমাদের খুব ভালবাসে। তাই আমরা প্রতি বছর ৩/৪ বার বের হইলে ২/১ বার সিলেট অঞ্চলে আসি। আমাদের সমাজে অনেক বৃত্তবান লোক আছেন কিন্তু কেউই আমাদের দিকে থাকায় না। আমাদের নিয়ে কেই ভাবেনও না। নবীগঞ্জ শহরের জে কে মডেল উচ্চ বিদ্যালয় গেইটে, নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের মিঠাপুর গ্রামের গেইট সংলগ্ন স্থানে, শেরপুর নবীগঞ্জ সড়কের পাশ্ববর্তী স্থানে ও নবীগঞ্জ-হবিগঞ্জ সড়কের শিবগঞ্জ নামক স্থানে প্রায় ৮/১০টি বেদের বহর অবস্থান করছে।

হবিগঞ্জ জেলা সমাজ সেবা অফিস সুত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলার ৮ টি উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে বেদে সম্পদায়ের নারী পুরুষ মিলে মোট ৫৭৫ জন লোক এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় পুরুষ ১৯৮ জন এবং নারী ১৪৩ জন, চুনারুঘাটে পুরুষ ৩৬ জন এবং নারী ২০ জন, বাহুবলে পুরুষ ১৫ জন এবং নারী ১১ জন, নবীগঞ্জে পুরুষ ৪৬ জন এবং নারী ৫৪জন, বানিয়াচুং পুরুষ ৩২ জন এবং নারী ১৪জন, আজমিরীগঞ্জ পুরুষ ৪ জন এবং নারী ২ জন। এছাড়া হবিগঞ্জ জেলায় হরিজন সম্প্রদায়ের মোট ১৭ হাজার ৬ শত ৭৭ জন যার মধ্যে ৮ হাজার ২ শত ১৩ জন পুরুষ এবং ৯ হাজার ৪ শত ৬৪ জন মহিলা এবং দলিত সম্প্রদায়ের ৬৭ হাজার ৩শ ৫৮ জন যার মধ্যে ৪০ হাজার ৪ শত ২৫ জন পুরুষ এবং ৩২ হাজার ৫শ ৭৬ জন মহিলা বসবাস করছেন। শত প্রতিকুলতার মাঝেও এই আদি পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন দেশের হাজার হাজার বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন। সরকারী ভাবে যদি এই সম্প্রদায়ের লোকজনদের পূর্ণবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয় তাহলে তারাও একদিন সমাজে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

অন্যান্য সংবাদ
Theme Created By ThemesDealer.Com
x
error: কপি করা নিষেধ !
x
error: কপি করা নিষেধ !