‘তথ্য নেই’ নবীগঞ্জ উপজেলা তথ্য বাতায়নে
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৮:৪৬ অপরাহ্ণদায়সারাভাবে চলছে সরকারি এই ওয়েবসাইট
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সংকল্প নিয়ে বর্তমান সরকার একের পর এক ডিজিটাল কার্যক্রম শুরু করেছেন। ইন্টারনেট সুবিধা গ্রামীণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে ই-তথ্য সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সরকারের ডিজিটাল কার্যক্রমে অন্যতম একটি হলো ‘জেলা তথ্য বাতায়ন’। তথ্য জানার অধিকার সবার। জেলার- উপজেলার কোথায় কি আছে, কি সেবা কিভাবে পাওয়া যাবে? তথ্য নিয়ে স্থান-কাল-পাত্র জেনে সেবা গ্রহণ করলেই সঠিক সেবা পাওয়া সম্ভব। (http://nabiganj.habiganj.gov.bd/) নবীগঞ্জ উপজেলার তথ্য বাতায়নে এই উপজেলার পরিচিতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ভৌগোলিক ও অর্থনীতিসহ অনেক অজানা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য রয়েছে। কিন্তু অনেক তথ্যের অভাবও রয়েছে এই পোর্টালে। নবীগঞ্জ উপজেলা তথ্য বাতায়ন যে নিয়মিত হালনাগাদ করা হয় না তা এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করলেই বোঝা যায়। দায়সারাভাবে সরকারি এই ওয়েবসাইটটি পরিচালিত হওয়ায় তথ্য বাতায়নটি আজ তথ্য বিভ্রাটে পরিণত হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে- জাতীয় তথ্য বাতায়নে নবীগঞ্জ উপজেলার তেমন কোনো তথ্যই মিলছে না। তথ্যের মধ্যে মিলছে কেবল সরকারি বিভিন্ন দফতরে কর্মরতদের পরিচিতি। সেটিও সীমিত পরিসরে। তাও আবার অধিকাংশ সরকারি অফিসগুলো পরিচিতি তথ্যটিও হালনাগাদ করা নেই। তিন/চার বছর আগে চলে যাওয়া কর্মকর্তার ছবি ও নম্বর এখনো দেখাচ্ছে সেখানে। তথ্য বাতায়নে নবীগঞ্জের এই হাল সচেতন মহলে প্রশ্ন তুলেছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন- সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের উদাসীনতা আর অদক্ষতার জন্যই জাতীয় তথ্য বাতায়নের মতো সরকারের একটি ভাল উদ্যোগ কেবল নাম পরিচয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তথ্য বাতায়ন ঘেটে নবীগঞ্জের প্রয়োজনীয় তথ্য না পেয়ে অনেকেই শূন্য তথ্য দেখে বিস্মিত হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ের কথা যদি বাদই দেন, কিন্তু উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রোপাইলের বেহাল অবস্থা। ডিজিটাল বাংলাদেশে এমনটা কাম্য নয় বলছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।
থানার অফিসার ইনচার্জগনের নাম জানতে (http://nabiganj.habiganj.gov.bd/) প্রবেশ করে সরকারী অফিস ক্যাটাগরিতে গিয়ে থানার কর্মকর্তাগণের তালিকায় গিয়ে দেখা গেল শুধু লেয়াকত আলী নামের এক জন অফিসার ইনচার্জের নাম ও ছবি রয়েছে। অনেকেই মনে করতে পারেন এই থানায় আর কোন অফিসার ইনচার্জ যোগদান করেননি। অথচ এই লেয়াকত আলী প্রায় তিন/চার বছর আগে বদলি হয়ে চলে গেছেন অন্য থানায়। এর পর আব্দুল বাতেন খাঁন, এস এম আতাউর রহমান, ইকবাল হোসেন, সোহেল রানা যোগদান করে বদলি হয়েছেন। বর্তমানে আজিজুর রহমান অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়ীত্ব পালন করছেন। কিন্তু এসবের কোন আপডেট নেই।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ভূমি অফিসসহ অনেক অফিসেরই অনেক তথ্যই নেই। তাদের যেন ডিজিটালের কোন ছোঁয়া লাগেনি। কত কর্মকর্তার যোগদান হলো, বদলি হলো। কিন্তু দূঃখজনক হলেও সত্য যে নেই কোন কর্মকর্তারই তথ্য। এসব দেখারও যেন কেউই নেই। উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিসের দু‘তিন জন কর্মকর্তাবৃন্দের নাম থাকলেও নেই কোন মোবাইল নম্বর।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসের কর্মকর্তার তালিকায় নাম রয়েছে শুধু মীর তারিন বাশার লিমার। কিন্তু তিনি বদলি হয়েছেন বহু আগেই।
বর্তমান উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নাম কাজী সাইফুল। কিন্তু ওই ওয়েবসাইটে শিক্ষা কর্মকর্তার নাম রয়েছে আব্দুর রাজ্জাকের। তিনি বদলি হয়েছেন আরো ২-৩ বছর পূর্বেই। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার, নবীগঞ্জ হাসপাতাল, মৎস্য কর্মকর্তার র্কাযালয়সহ অনেক অফিসেরই তথ্য নেই এই পোর্টালে।
পোর্টালে ভিজিট করার পরই উপজেলা সম্পর্কিত একটি ক্যাটাগরি রয়েছে। এতে জনপ্রতিনিধি ও পত্র-পত্রিকা নামেও ক্যাটাগরি রয়েছে। কিন্তু ভূলে ভরা তথ্য রয়েছে এতে। পত্র-পত্রিকায় তালিকায় রয়েছে ৭টি পত্রিকার নাম। কিন্তু নবীগঞ্জ থেকে এতো পত্রিকা প্রকাশিত হয়না।
এছাড়া পোর্টালের হোম পেইজে ‘আমাদের সর্ম্পকে’ একটি ক্যাটাগরি রয়েছে এতে কর্মকর্তাগন নামের একটি অপশন আছে। এতে ক্লিক করলে দেখা যায় উপজেলা পরিষদ ক্যাটাগরিতে চেয়ারম্যান হিসেবে নাম রয়েছে এড. আলমগীর চৌধুরীর। অচত বর্তমান চেয়ারম্যানের নাম ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম। যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্যাটাগরিতে গেলে দেখা যায় সাবেক ইউএনও তৌহিদ-বিন-হাসানের নাম মোবাইল নম্বর রয়েছে। ডাক্তারের তালিকায় দেখা যায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তার লেখা আছে ডাঃ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম‘র নাম। কিন্তু তিনি বদলি হয়েছেন আরো দুই বছর আগেই।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী ফারহানা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা নবীগঞ্জের অনেক তথ্য জানিনা। তথ্য জানতে প্রয়োজনের সময় তথ্য বাতায়ন থেকে যে তথ্যটি পাচ্ছি তা যদি ভুল হয়, তাহলে নামকাওয়াস্তে তথ্য বাতায়ন থেকেই বা লাভ কি’। অনেক তথ্য মিলেনা এই তথ্য বাতায়নে আর যা ই আছে এর মধ্যে অনেক তথ্যই ভূল রয়েছে। এ সময় নিয়মতি আপডেটের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
প্রসঙ্গত প্রশ্ন উঠেছে তথ্য বাতায়নের তদরকির দায়ীত্ব কার? কেউই কি সংশ্লিষ্টদের হালনাগাদের জন্য তাগিদ দেননা? এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহি উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো.নিউজকে বলেন- ‘প্রত্যেকটি দপ্তরকে আলাদা আইডি ও পাসওয়ার্ড দেয়া হয়েছে। তাই তথ্য বাতায়নের কাজটি নিজ নিজ দপ্তর আপডেট করে থাকে। প্রত্যেক দপ্তরকে নিজেদের তথ্য আপডেট করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।”