সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় ভাড়াটে খুনি দিয়ে ছেলে জাহাঙ্গীরকে হত্যা করিয়ে ফেঁসে গেলেন পিতা মোহাম্মদ আলী। এ ঘটনায় তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ ওই বাবা ও দুই ভাড়াটে খুনিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হল-উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়নের চাঁনপুর রজনীলাইন গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে সেকান্দর আলী ওরফে সেকান্দর ডাকাত, মাহারাম দক্ষিণপাড়ার মৃত নবী হোসেনের ছেলে সুরুজ মিয়া ও মাহারাম উত্তরপাড়ার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে পাষণ্ড বাবা মোহাম্মদ আলী। পুলিশ বুধবার আটক করে মোহাম্মদ আলীকে । বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সুনামগঞ্জ বিচারালয়ের তাহিরপুরের আমল গ্রহণকারী আদালতে হাজির করলে বিচারক খালেদ মিয়া ছেলেকে খুনের দায়ে গ্রেপ্তারকৃত বাবা মোহাম্মদ আলীকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের এক প্রেস নোটে বিষয়টি জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিপিএম।
জানা যায়,গত ২১ মে ২০২১ তারিখ গভীর রাতে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলীর পুত্র জাহাঙ্গীর আলম (২৮) কে মাহারাম নদীর তীরে কে বা কারা খুন করে। এ ঘটনায় নিহত জাহাঙ্গীর আলমের পিতা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে একই এলাকার আহসান হাবিব (২২) মোঃ সোলাইমান (২২) ও তৌফিকুল ইসলাম ভূইয়া (২৮) নামে তিন ব্যক্তির নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তাহিরপুর থানার মামলা নং ১৪। তারিখ ২২/৫/২০২১ ধারা ৩০২/ ৩৪ পেনাল কোড।
পুলিশ অভিযুক্ত তিনজন কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সন্দেহ ঘনীভূত হয়। তাহিরপুর থানা পুলিশ গোপনে ঘটনার তদন্ত করতে শুরু করে। এরপরেই কেচোঁ খুড়তে শাপ বের হয়ে আসে। বিভিন্ন তথ্য ও প্রমাণের উপর ভিত্তি করে একই এলাকার সুরুজ মিয়া (৫৫) কে আটক করে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে সুরুজ মিয়া স্বীকার করেন তিনি এবং সেকানদার আলী (৫৫) মিলে জাহাঙ্গীর আলম কে খুন করার লোম হর্ষক কাহিনী।
সুরুজ মিয়া পুলিশ কে জানান, মোহাম্মদ আলীর পুত্র জাহাঙ্গীর আলম মাদকাসক্ত ছিল , তার অত্যাচারের কারণে তার পরিবারের নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিল। কোন উপায় না দেখে মোহাম্মদ আলী সুরুজ মিয়া ও সেকানদার আলীর শরণাপন্ন হয়ে তাদের ২০ হাজার টাকা দিয়ে তার পুত্র কে খুন করতে বলে। কথামতো সুরুজ মিয়া ২১ মে রাতে জাহাঙ্গীর আলম কে মোবাইল ফোনে ৫শ টাকা দেয়ার কথা বলে মাহারাম নদীর তীরে নিয়ে গিয়ে পেশাদার খুনী সেকানদার ও সে মিলে নৃশংস ভাবে খুন করে। পরে আবার মোবাইল ফোনে জাহাঙ্গীর আলমের পিতাকে খুনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিপিএম জানান, সেকানদার আলী কে পুলিশ গাজীপুর জেলার শ্রীপুর এলাকা থেকে আটক করে। আটককৃত দুই ব্যক্তিই স্বীকার করে তারা খুন করেছে। দুজনেই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে খুনের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত দা ও উদ্ধার করা হয়। ভাড়াটে খুনী সেকানদার ১৯৯৬ সালে একটি হত্যা মামলার ১৪ বছরের সাজা প্রাপ্ত হয়। পরবর্তীতে ২০১২সালে উচ্চ আদালতে আপীল করে জেল থেকে বের হয়ে আসে এবং এই খুনের ঘটনা ঘটায়।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ তরফদার জানান,২০ হাজার টাকায় ভাড়া করা পেশাদার অপরাধী দিয়ে ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে খুন করিয়ে মোহাম্মদ আলী তার প্রতিবেশী মাহারাম গ্রামের আহসান হাবিব ও মো. সোলাইমান এবং পাশের করইতলা গ্রামের তৌফিকুলকে ফাঁসাতে চেয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে মোহাম্মদ আলীর জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিপিএম জানান,ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলমের পিতা হত্যা মামলার বাদী মোহাম্মদ আলী খুনের ঘটনায় জড়িত বিধায় তার বিরুদ্ধেই খুনের মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন এবং মোহাম্মদ আলীর দায়ের করা মামলার অভিযুক্ত দের অব্যাহতি ও আইনী প্রক্রিয়াধীন।