চুনারুঘাটে বৃদ্ধি পাচ্ছে মাল্টা-পেঁপেসহ মিশ্র ফলের বাগান
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ আগস্ট ২০২০, ৮:০১ অপরাহ্ণঅধিক পুষ্টিগুন সম্পন্ন ফল মাল্টা, সাথে রয়েছে সাথী ফসল হিসেবে সুইট লেডি পেঁপেসহ বিভিন্ন যাতের ফসল। বর্তমানে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বিভিন্ন বাগানে উৎপাদিত মাল্টা, পেঁপেসহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর ফল চাষ হচ্ছে। তাই দিন দিন এ অঞ্চলে অত্যন্ত লাভজনক এই ফল বাগানের পরিসর বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাল্টা মিনারেল ও ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ একটি সুস্বাদু ফল। বিদেশী মাল্টার চেয়ে স্থানীয় বাগানে উৎপাদিত মাল্টা খেতে বেশ মিষ্টি, মুখরোচক ও রসালো। মাল্টা ও পেঁপেসহ বিভিন্ন মিশ্র ফল চাষে ঝুঁকছেন চুনারুঘাট উপজেলার কৃষকরা। সাথে সাথী ফসল হিসেবে রয়েছে নিরাপদ ও বিষমুক্ত বিভিন্ন মিশ্র ফল যেমন- নাগা মরিছ, জিংগা ও তিত করলা। বর্তমানে বিভিন্ন দেশের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও এখন এসব ফল অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রধান খাবারের অংশে স্থান করে নিয়েছে। যে কেউ এই ফলের বাগান স্থাপন করতে পারবেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব ফল চাষে আগ্রহী বেড়েছে কয়েকগুন। চুনারুঘাটের একটি পেঁপে ফলের বাগান থেকে বাজারে প্রতি সপ্তাহে ফল বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৭ মন পর্যন্ত। একটি পেঁপে ফলের গাছ ৪ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে এবং বছরে ২ বার ফল আসে। সাধারণত মার্চ ও জুলাই মাসে গাছে ফুল আসে এবং ফুল আসার ৬০ দিনের মধ্যেই এই ফল খাওয়ার উপযোগি হয়। উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে অধিক পরিমানে বাগান স্থাপনের মাধ্যমে প্রচুর পরিমানের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব।উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় দিন দিন মাল্টা ও পেঁপেসহ বিভিন্ন ফল চাষের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে চুনারুঘাট উপজেলার ১২ শত হেক্টর জমিতে বিভিন্ন রকমের ফল চাষ হচ্ছে। শুধুমাত্র পেঁপে ২০ হেক্টর ও মাল্টা ১৫ হেক্টর ফলের বাগান স্থাপন করা হয়েছে। আগ্রহী কৃষকদের উপজেলা কৃষি অফিস চুনারুঘাট থেকে প্রদর্শণী স্থাপনের জন্য মাল্টা, পেঁপে, আম, লিচু ও বিভিন্ন ফল গাছের চারা, সার, বালাইনাশকসহ বিভিন্ন উপকরণ দেওয়ার মাধ্যমে প্রদর্শণী বাস্তাবায়ন করা হয়। পাশাপাশি ব্যাক্তি উদ্যোগে বাগান করতে আগ্রহী কৃষকদেরকে পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। জমিতে ধান ফসল চাষ করার অভ্যাস থেকে কৃষকদের ফিরিয়ে এনে অধিক লাভজনক অর্থকরি ফসল ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি অফিস কাজ করে আসছে। এই ফসলগুলো চাষ করলে একদিকে কৃষকরা যেমন কম খরচে ও কম পরিশ্রমে অধিক লাভ করতে পারেন অপরদিকে জমির উর্বরতা শক্তিও রক্ষা হয়। উপজেলার অনেক বেকার তরুনরা অন্যান্য কাজের পাশাপাশি বর্তমানে মাল্টা ও পেঁপের বাগানসহ বিভিন্ন মিশ্র ফলের বাগান করার দিকে ঝুঁকছেন। এদিকে বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আরিফুর রহমান অপু। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে স্থাপিত প্রতিটি ইউনিয়নে ৩২টি করে চুনারুঘাট উপজেলায় মোট ৩শত ২০টি পারিবারিক পুষ্টি বাগানের একটি বাগান এবং চুনারুঘাট কৃষি অফিসের সহযোগীতায় ব্যাক্তি উদ্যোগে স্থাপিত ৬ বিঘা জমির মাল্টা, পেঁপে ও নাগা মরিছের মিশ্র ফল ও সবজির বাগানসহ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বাগবাড়ী গ্রামের কৃষক উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম রিপনের ছাদ বাগান পরিদর্শন করেন। এসময় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় কৃষকদেরকে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন এবং সার্বিক কার্যক্রম দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। বাগানগুলো পরিদর্শনকালে সঙ্গে ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জালাল উদ্দিন সরকার ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দসহ বাগান মালিকরা। চুনারুঘাটের ৩ নং দেওরগাছ ইউনিয়নের মাল্টা চাষী মোঃ আকবর আলী জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে সিলেট অঞ্চলের শষ্যের নিবীরতা বৃদ্ধি করণ প্রকল্পের আওতায় আমি আমার ৩৬ শতাংশ জমিতে একটি মাল্টা বাগান প্রদর্শনী স্থাপন করি। আমার বাগান থেকে চলতি বছর ৩৫ থেকে ৩৬ মন মাল্টা উঠানো সম্ভব হবে, যার বাজারমূল্য ধারনা করা হচ্ছে ১ লক্ষ ৩০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। মাল্টা চাষে সফলতা ও লাভের আশা করছেন তিনি। অপরদিকে চুনারুঘাট পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে বাগবাড়ী গ্রামের এন হক এগ্রিকালচার ফার্মের কৃষক উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম রিপন জানান, আমি উপজেলা কৃষি অফিস চুনারুঘাটের পরামর্শক্রমে আমি আমার ৬ বিঘা জমিতে মিশ্র ফলের বাগান করি। আমার বাগানে বারি মাল্টা-১, সুইট লেডি পেঁপে, সাতকরা, ডালিম, জাম্বুরা, নাগা-মরিচসহ দেশি-বিদেশী বিভিন্ন ফলের চারা এনে চাষ শুরু করি। আমার বাগানের প্রতিটি ফলের গাছে ফসলও এসেছে ভালো। তিনিও আশা করছেন সফলতা ও লাভের। তিনি বলেন, স্থানীয় অনেকেই আমার বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে আমার বাগান থেকে ৫ থেকে ৭ মন পেঁপে বিক্রি করছি। আগামীতে আমি এই বাগানের পরিসর আরোও বৃদ্ধি করবো। আগামী বছর আশা করছি আমার বাগান থেকে প্রায় ৫ লক্ষ টাকার মিশ্র ফল বিক্রি হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সমিরন চন্দ্র পাল বলেন, আমার দেওরগাছ ইউনিয়নের একটি ব্লকে ৩৬ শতাংশ জমিতে ১টি মাল্টা প্রদর্শনী স্থাপন করি। বাগানটি নতুন হিসেবে ফলনও ভালো হয়েছে। তিনি তার ব্লকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে আরো নতুন নতুন মাল্টার বাগানসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের বাগান করতে চান। চুনারুঘাট উপজেলা কৃষি অফিসার জালাল উদ্দিন সরকার জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে স্থাপিত উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ৩২টি করে চুনারুঘাট উপজেলায় এক শতক জমিতে মোট ৩শত ২০টি পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হয়। এবং প্রতি পুষ্টি বাগানে ১৪ জাতের সবজি বীজ ও ৪টি করে সুইট লেডি পেঁপের চারা বিতরণ করা হয়। এছাড়াও বেড়া, আন্ত-পরিচর্যা, লেবার খরচ ভাবদ প্রতি কৃষককে ১৯ শত ৩৫ টাকা করে বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ২০১৫ সাল থেকে এ উপজেলাতে মাল্টা ও পেঁপে ফল চাষের নিরব বিপ্লব শুরু হয়। এখন মাল্টা ও পেঁপে উপজেলার কৃষকদের কাছে একটি লাভজনক ফলের নাম। প্রতিদিনই কৃষকরা কৃষি অফিসে এসে মাল্টা ও পেঁপে ফল সম্পর্কে জেনে যাচ্ছেন। এছাড়াও বাগান মালিকদের সার্বক্ষনিক পরামর্শ প্রদান ও খোঁজখবর রাখছি। আশা রাখি একদিন দেশের মধ্যে চুনারুঘাট উপজেলায় মাল্টা ও পেঁপে ফল চাষে দৃষ্টান্তর স্থাপন করবে। কৃষি মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আরিফুর রহমান অপু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এক ইন্সি জমিও যেন খালি না থাকে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং কৃষি মন্ত্রনালয়, সারাদেশে বিভিন্ন ব্যাক্তিদেরকে তাদের পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটানোর জন্য আমরা পুষ্টি বাগান ও সবজির বাগানের জন্য উৎসাহীত করছি এবং সহযোগীতা করছি। এছাড়াও আমাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য আমরা মিশ্র ফলের বাগান করছি। তিনি বলেন, এন হক নামক মিশ্র ফলের বাগানটি পরিদর্শনকালে এখানে দেখতে পেলাম প্রচুর পরিমানের পেঁপের ভালো ফলন হয়েছে। অতি বৃষ্টির কারনে এ বাগানটিতে মরিছ গাছের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে তারা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পরামর্শে নতুন করে চারা রোপন করলে, কিছুটা হলেও ক্ষতিটা পুশিয়ে নিতে পারবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে প্রণোদনা এবং বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের পাশে আমরা থাকবো এবং সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসবো।