ঘূর্ণিঝড় আম্পান, আজ ঢুকছে উত্তর বঙ্গোপসাগরে
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মে ২০২০, ৮:০৮ পূর্বাহ্ণনিজস্ব প্রতিবেদক,জাগো নিউজ:
ঘূর্ণিঝড় আম্পান আরও ঘনীভূত হয়ে শক্তি সঞ্চয় করে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়েছে। এখন এই সাইক্লোনের বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ মঙ্গলবারের মধ্যে এই ঝড় উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় প্রবেশ করবে। ১৯ মে রাত থেকে ২০ মে বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যে এটি বাংলাদেশের উপকূলে অতিক্রম করবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
এর প্রভাবে সাগর বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ায় মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। একই কারণে উপকূলীয় জেলাগুলো, দ্বীপ ও চরগুলোতে জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। সেই সাথে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
সোমবার (১৮ মে) পৌনে ৮টায় আবহাওয়া অধিদফতরের অনলাইনে এসে আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
রাশেদুজ্জামান বলেন, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান আরও ঘনীভূত হয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়েছে। এই সাইক্লোনের গতিবেগ ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাইক্লোনটি উত্তর দিকে অগ্রসর হয়েছে এবং এটি আরও কিছুটা উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বাঁক নিয়ে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে। সেক্ষেত্রে আগামীকালকের (মঙ্গলবার) মধ্যে এটি উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় প্রবেশ করবে।
তিনি জানান, আম্পান এখন বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরগুলো থেকে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার দূরে আছে। এর প্রভাবে সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের আওতায় যেসব জেলা আছে সেগুলোও এই সংকেতের আওতায় পড়বে। এছাড়া৷ মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এরসঙ্গে আশেপাশের জেলাগুলোও এই সংকেতের আওতায় পড়বে।
তিনি জানান, এর প্রভাবে স্থানীয় উপকূলবতী দ্বীপ ও চরগুলোতে স্বাভাবিক জোয়ারের ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। এরসঙ্গে ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম করার সময় ওই জেলাগুলো, অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর ওপর দিয়ে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ এখনকার গতির চেয়ে গতি কিছুটা কমে যেতে পারে।
তিনি বলেন, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
তিনি জানান, আম্পান ১৯ মে রাত থেকে ২০ মে বিকেল বা সন্ধ্যা, এই সময়ের মধ্যে খুলনা ও চট্টগ্রাম উপকূল দিয়ে বাংলাদেশ অতিক্রম করে যাবে। এই সময় সুপার সাইক্লোনের গতিবেগ কিছুটা কম হতে পারে বলে তিনি জানান।
এদিকে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আম্পান সোমবার (১৮ মে) সন্ধ্যা ৬টার দিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এ কারণে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। একইভাবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলাগুলো এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এদিকে সোমবার রাত ১ টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়ার ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আম্পানের প্রভাবে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের দু এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়া ও বিজলি চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।