ঘুরে দেখলাম সিলেটের বর্ডার হাট
ফাইজা রাফা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ আগস্ট ২০২৩, ১:৫৮ পূর্বাহ্ণপর্যটন জেলা সিলেট। পাহাড়, ঝরনা, চা বাগান সহ নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের টানে তাই এই জেলায় প্রতিদিন বহু পর্যটকের আনাগোনা। বেশ কয়েকদিন হল সিলেটে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর এলাকাতে বর্ডার হাট চালু হয়েছে। বিষয়টা বেশ ব্যতিক্রম লাগল আমার কাছে তাই হুট করে চলে গেলাম বর্ডার হাট গুলো ঘুরে বেড়াতে।
আগস্টের শুরুতে শ্রাবনের মুখ ভার করা আকাশ। এমন মেঘলা দিনে রওনা করলাম সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সীমান্তে যার ঠিক উল্টো দিকে রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া হিলস। এখানেই চালু হয়েছে সিলেট জেলার প্রথম সীমান্ত হাট। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১২৪৮/১২ এস এবং ১১ এস পিলারের কাছে দুই দেশের সমপরিমাণ ১ একর ৫০ শতক জায়গায় নির্মাণ করা হাটে সকাল সকালই প্রচুর মানুষের ভীড়।
ক্রেতা-বিক্রেতার কোলাহলে মুখর চারপাশ। চোখে পড়লো হাটে দুই দেশের স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত নানা দ্রব্য, পান-সুপারি, সবজি, বিভিন্ন জাতের মসলা, জুতা, প্রসাধনসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে।
কথা হল ক্রেতা-বিক্রেতা আর স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে। সবাই উৎসাহ নিয়ে জানালেন সীমান্ত হাট চালু হওয়ায় আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের অনেক উপকার হচ্ছে। ব্যবসা-বানিজ্য বৃদ্ধি হওয়ায় অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। পাশাপাশি দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় আমরা যারা আছি তাদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কও স্থাপিত হয়েছে।
বর্ডার হাট চালু হওয়ায় সবাই বেশ খুশি। এই হাট প্রতি সপ্তাহে শনিবার ও বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে। ফলে হাটের ৫ কিলোমিটার এলাকার বাসিন্দারা পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। এখানে বাংলাদেশের ২৬টি ও ভারতের ২৪টি মিলিয়ে মোট ৫০টি দোকান আছে। হাটে একজন ক্রেতা একদিনে সর্বোচ্চ ২০০ ডলারের সমমান বাংলাদেশি টাকায় পণ্য ক্রয় করতে পারছেন। প্রবেশ ফি বাবদ একজন ক্রেতা দৈনিক ৩০ টাকা ও বিক্রেতা দৈনিক ৭০ টাকা প্রদান করে। ওই টাকা বর্ডার হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদনক্রমে এই হাটের সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কাজেই ব্যয় করা হচ্ছে। তবে এখানে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য কার্ড নেয়া বাধ্যতামূলক। আর সেই কার্ডের জন্য বর্ডার হাট ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আবেদন করতে হয়। এর মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিকদের ভিজিটর কার্ডের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।
চলতি বছরের ৬ মে এই হাটের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। সেসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ভারতের সহকারী হাই কমিশনার নিরাজ কুমার জায়সওয়াল। এর আগে ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বর্ডার হাটের উদ্বোধন করেন। ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সীমান্তে হাট স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ওই দিন সীমান্ত-সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়েছিল। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ও মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড়ের সীমান্তে হাট চালুর সিদ্ধান্ত হয়।
বর্ডার হাটের ভিতরে গিয়ে কেউ যেন কোনো অপকর্ম করতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সজাগ রয়েছে দেখলাম।
তবে অন্যতম মজার দিক হলো যাদের আত্মীয়-স্বজন ভারতে আছেন বর্ডার হাটে তারা সহজেই দেখা করতে পারছেন। তাদের কোনো ধরণের ভিসা লাগছে না। এই হাট পর্যটনের ক্ষেত্রও প্রসারিত করছে। শুল্কমুক্ত আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন। নিয়ন্ত্রনে এসেছে চোরাচালান। জানলাম সিলেটে আরও কয়েকটি বর্ডার হাট হবে। যার মধ্যে সুনামগঞ্জে একটা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বাংলাদেশ-ভারতের বিভিন্ন সীমান্তে বর্তমান ১৩টি বর্ডার হাটের কার্যক্রম চালু রয়েছে। আরও ৩টি বর্ডার হাট চালুর অপেক্ষায় রয়েছে। এটা স্পষ্ট যে এমন হাট আরও হলে দুই দেশে অনুপ্রবেশ কমে যাবে। দুই দেশের পণ্য হাটের মাধ্যমে আদান–প্রদান হলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।
মেঘলা আবহাওয়া দুপুরের পর দিনের আলো তাই দ্রুত কমে আসছিল। তিনটার দিকে তাই সিলেট জেলার প্রথম এই সীমান্ত হাট থেকে শহরের দিকে রওনা করি।
সীমান্ত এলাকায় সবুজ শ্যামল রুপ, স্থানীয় বাসিন্দাদের বন্ধুত্বপূর্ন ব্যবহার আর হাট সংক্রান্ত নতুন অভিজ্ঞতা হওয়ায় মনে প্রশান্তিও কাজ করছিল।