গ্রিসে ১৫ হাজার অনিয়মিত বাংলাদেশি যেভাবে পাবেন বৈধতা!
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জুলাই ২০২২, ১০:৫০ অপরাহ্ণনানা জল্পনা কল্পনার পর অবশেষে বাংলাদেশ ও প্রাচীণ সভ্যতার দেশ গ্রিসের সমঝোতা চুক্তিটি গ্রিক সংসদে অনুমোদন হয়েছে। এ চুক্তি অনুযায়ী দেশটিতে পাঁচ বছরের জন্য ১৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মীকে ভিসা দেওয়া হবে। প্রতি বছরে ৪ হাজার কর্মী করে মৌসুমি কর্মভিসায় আনা হবে।
এ ছাড়াও গ্রিসে থাকা অবৈধ ১৫ হাজার অভিবাসীদের ৫ বছরের ভিসা প্রদান করে একই আইনে বৈধতার আওতায় আনা হবে বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে অবৈধ অভিবাসীরা বৈধ হয়ে কৃষি শ্রমিক হিসেবে বছরে নয় মাস কাজ করার সুযোগ পাবেন এবং নিজ দেশে তিন মাস বাধ্যতামূলক যাতায়াতের জন্য সুযোগও থাকবে। তবে কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং কারা এই বৈধতার আওতায় আসবে সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু এখনো জানা যায়নি। অনিয়মিত অভিবাসীরা কি শুধু কৃষিখাতেই বৈধ হতে পারবেন না এথেন্সে কর্মরত অনিয়মিত বাংলাদেশিরা অন্যান্য খাতেও বৈধতার সুযোগ পাবেন এ বিষয়টি এখনো স্পষ্ট হয়নি। গেজেট আকারে প্রকাশ হলে জানা যাবে সবকিছু।
এদিকে অনিয়মিত বাংলাদেশীদের নিয়মিতকরন বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস এথেন্স কর্তৃক বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ এবং গ্রিসের মধ্যে স্বাক্ষরিত জনশক্তি রপ্তানি এবং অনিয়মিত বাংলাদেশীদের নিয়মিতকরন বিষয়ক সমঝোতা স্মারকটি গত ২২ জুলাই ২০২২ তারিখে গ্রিক পার্লামেন্ট কর্তৃক অনুমোদিত হয়ে আইন নম্বর ৪৯৫৯ হিসাবে প্রকাশিত হয়েছে।
সমঝোতা স্মারকটি বাস্তবায়িত হলে গ্রিসে বাংলাদেশিদের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে, মানসম্মত জীবন যাপন ও ন্যায্য বেতন ভাতাদি প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে এবং বাংলাদেশ হতে নতুন কর্মীরা নিরাপদে গ্রিসে এসে বৈধভাবে কাজ করতে পারবে, মানবপাচারকারী ও দালাল দৌরাত্ম বন্ধ হবে ।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে-
১) এই চুক্তি অনুযায়ী গ্রিসে অনিয়মিতভাবে বসবাসরত ১৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশীকে নিয়মিতকরণ করা হবে। নিয়মিতকরণের এই প্রক্রিয়াটি অত্যান্ত স্বচ্ছভাবে একটি অনলাইন প্লাটফর্মে সংঘটিত হবে বিধায় এতে কোন এজেন্সির সহায়তার প্রয়োজন হবে না। এছাড়া প্রয়োজনে দূতাবাস হতেও অনলাইন প্লাটফর্মে আবেদনের জন্য সহায়তা প্রদান করা হবে। একজন অনিয়মিতভাবে বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিককে এই প্রক্রিয়ায় আবেদন করার জন্য পাসপোর্ট (অন্তত দুই বছরের মেয়াদ থাকতে হবে), ২০২২ সালের ৯ ই ফেব্রুয়ারির আগে গ্রিসে বসবাসের কোন প্রামাণ্য দলিল এবং একজন সম্ভাব্য চাকরিদাতার নিকট হতে নিয়মিতকরনের পর চাকরি দেয়া হবে মর্মে একটি নিশ্চয়তা পত্র থাকতে হবে । এই তিনটি প্রমাণক দলিল অনলাইন প্লাটফর্মে রেজিস্ট্রেশনের সময় দাখিল করতে হবে। যেহেতু আইনটিতে নিয়মিতকরনের জন্য কোন নির্দিষ্ট খাতের উল্লেখ নেই তাই যেকোনো খাতেই চাকরির নিশ্চয়তাপত্র গ্রহণযোগ্য হবে বলে প্রতীয়মান হয়।
২) অনলাইন প্লাটফর্মে আবেদন গ্রহনের তারিখ, আবেদনের প্রক্রিয়া এবং ফি’র পরিমান অচিরেই গ্রিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জানানো হবে। এছাড়া, এই আইন অনুযায়ী অনিয়মিতদের বৈধতা দেয়ার লক্ষ্যে ৫ বছর মেয়াদি অস্থায়ী রেসিডেন্স পারমিটের ধরন এবং এ সংক্রান্ত বিস্তারিত বিষয়াবলী গ্রিক অভিবাসন ও আশ্রয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনাপূর্বক জানানো হবে।
৩) যেহেতু আইনটি কার্যকর হওয়ার ৬ মাসের মধ্যেই অনিয়মিতদের অনলাইন প্লাটফর্মে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে, তাই সংশ্লিষ্ট সকলকে দূতাবাস হতে যথাসম্ভব দ্রুত পাসপোর্ট সংগ্রহ (যাদের পাসপোর্ট নেই বা মেয়াদ দুই বছরের কম) ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ এর পূর্বে গ্রিসে অবস্থানের প্রমাণক দলিল এবং একজন সম্ভাব্য চাকরিদাতার কাছ থেকে চাকরির নিশ্চয়তা পত্র সংগ্রহের করতে হবে । প্রবাসীদের সুবিধার্থে চাকরির নিশ্চয়তা পত্রের একটি ফরম্যাট গ্রিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাপূর্বক যথাসময়ে প্রকাশ করা হবে ।
৪) এই প্রক্রিয়ায় নিয়মিতকরনের সাথে ২০১৪ সালের অভিবাসন ও আশ্রয়ণ আইনের আওতায় ৭ বছরের বৈধতা দানের প্রক্রিয়ার কোন সম্পর্ক নেই। যারা ২০১৪ সালের অভিবাসন ও আশ্রয়ণ আইনের আওতায় গ্রিসে ৭ বছরের বেশি বসবাসের ফলে বৈধতা লাভের উপযুক্ত তারা সেই অনুযায়ী আবেদন করবেন। ২০১৪ সালের আইনটি যতদিন কার্যকর থাকবে ততদিন বাংলাদেশীরাও এই সুযোগ পাবেন।
৫) এছাড়া এই সমঝোতা স্মারকের কল্যাণে প্রতিবছর ৪ হাজার বাংলাদেশীর জন্য গ্রিসের কৃষিখাতসহ অন্যান্য খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে । এর ফলে বাংলাদেশী শ্রমিকরা পাঁচ বছর মেয়াদি অস্থায়ী ভিসায় গ্রিসে আসবেন এবং প্রতি নয় মাস কাজের পর তিন মাসের জন্য ছুটিতে বাংলাদেশ যেতে পারবেন। এই ভিসা নবায়নযোগ্য। এই ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (পাসপোর্ট, কাজের চুক্তি পত্র, স্বাস্থ্য বীমা ইত্যাদি) ও ফি’র পরিমানসহ পুর্নাঙ্গ নির্দেশনা পরবর্তীতে জানানো হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন- এই প্রক্রিয়ায় কৃষি শ্রমিক নিয়োগ সরকারী ব্যবস্থাপনায় হবে নাকি বেসরকারি রিক্রটিং এজেন্সির মাধ্যমে হবে তা এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় আগ্রহি আবেদনকারীদের পুর্নাঙ্গ নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করতে হবে। এমতাবস্তায় সংশ্লিষ্ট সকলকে এই বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা এবং প্রতারক চক্রের প্ররোচনার বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস এথেন্সের কর্তৃক আহবান জানানো হয়েছে।
গত ২১ জুলাই বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক বিল পাসের সময় গ্রিসের অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী নোতিস মিতারাচি আরো উল্লেখ করেছেন, এই মুহূর্তে গ্রিক অর্থনীতিতে বিপুল সংখ্যক জনবল প্রয়োজন। বিশেষত কৃষি খাতে, গার্হস্থ্য কাজ, পর্যটন এবং নির্মাণে খাতে প্রচুর কর্মীর প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, মানবসম্পদ নিয়োগ অবশ্যই আইনিভাবে হওয়া উচিত। মানবপাচার চক্র যেন কোনোভাবেই সুযোগ নিতে না পারে সেক্ষেত্রে নজর রাখতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে এই সমঝোতা স্মারক চুক্তিটি বৈধ অভিবাসন পদ্ধতির সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে আরো একটি বড় পদক্ষেপ এবং দেশের শ্রমিক সংকটের চাহিদা পূরণ করবে। সংসদে মন্ত্রী বলেন, আমাদের শ্রম বাজারে প্রত্যেক বছরে ১ লক্ষ ৪৪ হাজার শ্রমিকের প্রয়োজন তাই আমরা বৈধভাবে মৌসুমি ভিসা প্রদান করে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শ্রমিক আনবো।
চুক্তি অনুযায়ী বছরে নয় মাস কাজ ও তিন মাস দেশে কাটানোর শর্তে ৫ বছরের মৌসুমি ভিসায় বাংলাদেশ থেকে শিগগিরই এ কার্যক্রম শুরু হবে। প্রতিবছর ৪ হাজার করে মোট ১৫ হাজার কৃষি শ্রমিক আনা হবে। বাংলাদেশ থেকে কৃষি ও পশুপালনের জন্য মৌসুমি ভিসায় এসব শ্রমিক নিয়োগ হবে।
মন্ত্রী বলেন, এখন থেকে কৃষি মালিকরা চাহিদা অনুসারে একাধিক কৃষি শ্রমিক আনার জন্য আবেদন করতে পারবেন। প্রত্যেক কর্মী একজন মালিকের আওতায় কাজের চুক্তি অনুযায়ী নয়াদিল্লির গ্রিক দূতাবাস থেকে ৫ বছরের ভিসা নিয়ে গ্রিসে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে নির্দিষ্ট মালিকের অধীনেই তিনি শুধুমাত্র কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশ থেকে ভিসায় আসা কর্মীদের প্রতি বছর ৯ মাস কাজ করার পরেই পরবর্তী ৩ মাস বাধ্যতামূলক বাংলাদেশে যেতে হবে। যাতে তারা পরিবারের সাথে মিলিত হতে পারেন। যদি কেউ নয় মাস কাজ করে পরবর্তী তিন মাস দেশে না যান তাহলে তাদের ভিসা পরবর্তী বছরের জন্য নবায়ন হবেনা। এছাড়াও এ ভিসায় সেঙ্গেনভূক্ত দেশ গ্রিসে আসার পরও তারা ইউরোপের অন্য কোন দেশে যেতে পারবেন না। এমনকি গ্রিসেও আজীবন থাকার জন্য তাদেরকে কোন স্থায়ী বৈধতা দেওয়া হবেনা। কোন কর্মীর দেশ থেকে নিজ পরিবার আনার কোন ধরনের সুযোগ থাকছে না এই ভিসায়। ৫ বছর শেষে তাদের গ্রিস থেকে চলে যেতে হবে। তবে পরবর্তীতে নির্দিষ্ট মালিকে অধীনে আবারো ভিসা নিয়ে গ্রিসে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে বলে জানান নোতিস মিতারাচি।