গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত কিট আসতে আরও একমাস
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ মে ২০২০, ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণকরেসপন্ডেন্ট,জাগো নিউজ : গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস শনাক্তে ‘জিআর র্যাপিড ডট ব্লট’ কিটের কার্যকারিতা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সিদ্ধান্ত জানানোর কথা আজ রবিবার (২৪ মে)। সিদ্ধান্তের কথা লিখিত প্রতিবেদন আকারে প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার কাছে জমা হবে। এরপর তিনি প্রতিবেদন পাঠাবেন ওষুধ অধিদফতরে। সেখান থেকে অনুমোদন মিললেই নিজেদের তৈরি কিটে করোনা পরীক্ষা শুরু করবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। তবে, এ দুটো ধাপের কাজ শেষ হতে অন্তত একমাস সময় লাগতে পারে বলে এমন আশঙ্কা থেকে আপাতত নিজেদের উদ্যোগেই কিটের ‘ক্লিনিকাল ট্রায়াল’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মঙ্গলবার (২৬) নাগাদ সীমিত পরিসরে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এ প্রক্রিয়া শুরু হবে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত একাধিক দায়িত্বশীলের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অন্যতম ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী শনিবার (২৩ মে) মধ্যরাতে ‘জিআর র্যাপিড ডট ব্লট’ নিয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি জানান, ইতোমধ্যে এই প্রজেক্টে চার কোটির ওপর ব্যয় হয়েছে। যেহেতু সরকারের কোনও রকম আগ্রহ ছাড়া তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছেন, সে কারণে আর্থিক বিষয়টি সামনে আনতে চান না।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি কারণে এই প্রতিষ্ঠানের কিট পরীক্ষার বিষয়টিকে দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। অন্তত ১৩ দিন আগে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কিটের ‘ইফেক্টিভনেস’ দেখতে দেওয়া হয়েছে। তারা পিসিআর-এর সঙ্গে তুলনা করে দেখছেন কিটের কার্যকরিতা। তবে, পুরো প্রক্রিয়াটিকে কেন বারবার পেছানো হচ্ছে তা নিয়ে মন্তব্য করতে কেউ রাজি হননি। যদিও কর্মকর্তাদের কেউ কেউ দাবি করেছেন, গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকবার নিজেদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত থেকে পিছেয়েছে। সর্বশেষ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল রবিবার (২৫ মে) হওয়ার কথা থাকলেও বাতিল করা হয়েছে। সোমবার (২৫ মে) ঈদুল ফিতর হওয়ায় মঙ্গলবার সীমিত পরিসরে এটি শুরু করবে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র।
পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে আইনি বাধা নেই বলে জানিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি)। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন হাসপাতাল তৈরির সময় নেওয়া হয়। এটা তো লিখিতভাবে গণস্বাস্থ্যের আছেই।’
তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত ড্রাগ কন্ট্রোলার না দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত অনুনোমোদিত, কাজ করে কিন্তু সরকারের অনুমোদন পায়নি।’
১৭ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের পরীক্ষার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণায় কিট উৎপাদনের কথা জানায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। ১৯ মার্চ কিট উৎপাদনে যায় প্রতিষ্ঠানটি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষক ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে ড. নিহাদ আদনান, ড. মোহাম্মদ রাঈদ জমিরউদ্দিন, ড. ফিরোজ আহমেদ এই কিট তৈরি করেন। ২৫ এপ্রিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের কাছে করোনা টেস্টের কিট হস্তান্তর করা হয়। বেশ কিছুদিন কিট পরীক্ষা নিয়ে বিতর্কের পর ৩০ এপ্রিল ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের থেকে বিএসএমএমইউ বা আইসিডিডিআর,বিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর ২ মে কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শাহীনা তাবাসসুমকে প্রধান করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
কিট নিয়ে এই জটিলতা কেন– এমন প্রশ্নে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘তা তো বলতে পারবো না। হাজার-হাজার মানুষ ঝাড়-ফুঁক দিয়ে বেড়ায় তাদের জটিলতা হয় না, আজকের দিনে বাজারের দোকানে যে প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট পাওয়া যায় সেটা ইফেক্টিভ কিনা তা কি দেখেছে? এসব শুধু আমাদের বেলাতেই করতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এরইমধ্যে কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি করোনার চিকিৎসায় রেমডেসিভি উৎপাদন এবং কোনও কোনও কোম্পানি এই ওষুধ বিনামূল্যে সরকারকে দিয়েছে। রেমডেসিভির তো ইনজেকশন। এটা মানুষকে পুশ করতে হবে। কিন্তু আমাদের কিট তো মানুষের খাইতে হবে না, পুশও করতে হবে না। আমরা সায়েন্টিফিক্যালি তৈরি করেছি কিন্তু কেউ বা কারা এটা জটিলতা তৈরি করে দেয়।’
বিষয়টি সুরাহা করতে সরকারের কোনও পর্যায়ে যোগাযোগ হয়েছে কিনা, এমন প্রসঙ্গে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘মন্ত্রণালয়কে বলেছি। কতবার চিঠি দিয়েছি, কতবার কল করেছি। আর কী জানতে চাইবো, কার কাছে চাইবো।’
ডা. জাফরুল্লাহ বলছেন, ‘বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা করে দেখে তাকে জানিয়েছেন। আমরা যে ডামিটা তৈরি করেছি, সেটি পিসিআরের সঙ্গে তুলনা করে দেখছে বিএসএমএমইউ সময় লাগবে আরেকটু। এরমধ্যে ছুটির বিষয় আছে।’
কিটের কার্যকারিতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিটের কার্যকরিতা পরীক্ষায় আমরা পাস করবো এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নাই। ফাইনাল পরীক্ষা করবে বিএসএমএমইউ’র একটি বিশেষ কমিটি। সেই কমিটির প্রতিবেদন যাবে প্রতিষ্ঠানের ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে যাবে। তিনি দেখে পাঠাবেন ড্রাগের (ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর) কাছে। ড্রাগের কমিটি যদি অ্যাপ্রুভ করে- সব মিলে আরও একমাস তো ধরতে হচ্ছে। এখনো আরও দুটি ধাপ বাকি আছে। আমরা বিএসএমএমইউ’র কতৃর্পক্ষকে আগে অনুরোধ করেছিলাম যেন, ঈদের ছুটিতে আমরা পরীক্ষা চালাতে পারি, কিন্তু সেটার সম্ভাবনা আর নেই মনে হয়।’
তবে, বিএসএমএমইউ’র একটি প্রভাবশালী সূত্র জানায়, অন্তত ৫-৬ দিন আগেই ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে ইতিবাচকভাবে গণস্বাস্থ্যে কিট উত্তীর্ণ হয়েছে, এমন সম্ভাবনার কথাও জানায় এই সূত্রটি। সূত্রের দাবি, এই বিষয়টি এখনও দৃশ্যমান করতে চায় না কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে এই সূত্রের ভাষ্য, সিডিসি যেহেতু গণস্বাস্থ্যের কিট গ্রহণ করেছে, এরইমধ্যে যদি তাদের প্রতিবেদন গণস্বাস্থ্য পেয়ে যায়, সেক্ষেত্রে চাপ তৈরি হতে পারে।
এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি ঠিক এখনও জানি না, বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কিনা। তারা যদি ট্রায়াল করে থাকেন, সেক্ষেত্রে কমিটি প্রতিবেদনে কমেন্ট করবে, সেই কমেন্টসহ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ঔষধ অধিদফতরে আবেদন জমা দেবে।’
এ নিয়ে রবিবার জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমার কাছে বিএসএমএমইউ’র প্রতিবেদন জমা হওয়ার কোনও খবর আসেনি এখনও। আসরে প্রক্রিয়া মেইনটেন করে অ্যাপ্লাই করবো।’