গজনাইপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ছড়াছড়ি : আলোচনায় যারা
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:৫৫ অপরাহ্ণদেশে সময় ঘনিয়ে আসছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের। আইন অনুযায়ী আগামী বছরের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের আগে ইউপি নির্বাচন শুরু করতে হবে, আর শেষ করতে হবে জুনের আগেই। ২০১৬ সালের ২২ মার্চ শুরু হয়ে কয়েক ধাপে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ হয় ঐ বছরের ৪ জুন। আইন অনুযায়ী কোনো ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।
এই হিসাব অনুযায়ী, আগামী বছরের মার্চে যেসব ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচ বছর মেয়াদ হবে, সেসব ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে এ বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আগামী বছরের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে। আর যেসব ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ আগামী বছরের জুনের প্রথম দিকেই শেষ হবে, সেসব ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ করতে হবে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আগামী বছরের মে মাসের মধ্যে। ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ শেষ ও নির্বাচন শুরুর সম্ভাব্য হিসাব করলে ভোটের এখনো ২ থেকে ১০ মাস বাকি থাকলেও এখন থেকেই তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও সদস্য (মেম্বার) প্রার্থীরা।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনী হালচাল নিয়ে ‘জাগো.নিউজ’ এর ধারাবাহিক প্রতিবেদন এর অংশ হিসেবে নবীগঞ্জ উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের মধ্যে আজ তুলে ধরা হলো ১১ নং গজনাইপুর ইউনিয়ন এর হালচাল।
প্রথমেই ইউনিয়ন পরিষদের পরিচিতি: ৩৬০ আউলিয়ার পূণ্যভূমি বৃহত্তর সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার অন্যতম উপজেলার নাম নবীগঞ্জ। নবীর নামানুসারে ঐতিহ্যবাহী এ উপজেলার নাম নবীগঞ্জ করা হয়েছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে আড়মোড়া দিয়ে ওঠা এই নবীগঞ্জ সুন্দর্যের যেন কোনো অংশে কম নেই এর কোন এলাকা। এ উপজেলার অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দূর্গম পাহাড়ী অঞ্চল দিনারপুর পরগনা। দিনারপুরে রয়েছে দর্শনীয় স্থান যেখানে পর্যটকরা একবার হলেও ঘুরতে আসেন এই জনপদে। অসংখ্য বাঁশ ও গাছ ঘেরা এ পরগনার অন্যতম ইউনিয়ন গজনাইপুর। এই ইউনিয়নে রয়েছে হরেক রকমের পাহাড় টিলাসহ অনেক ঐহিত্যবাহী স্থান।
সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপকালে ও ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেন মোঃ রাজা কাজী। এর আগে চেয়ারম্যান ছিলেন দেওয়ান আলতাবুর রহমান, তবে উনার কার্যকাল জানাযায়নি। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেন মোঃ আব্দুল আলী। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান ছিলেন আলতাব মিয়া চৌঃ। পরে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেন দেওয়ান অলি আহমদ চৌধুরী। ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত টানা ২ বার ১০ বছর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেন শাহ নওয়াজ। ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান ছিলেন ইমদাদুর রহমান মুকুল। পরে ফের নির্বাচিত হয়ে শাহ নওয়াজ ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেন। পরে ২০০৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুই দফায় অর্থাৎ ১৩ বছর একটানা নির্বাচিত হয়ে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেন আবুল খায়ের গোলাপ। সর্বশেষ ২০১৬ সালের নির্বাচিত নৌকা প্রতীকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ইমদাদুর রহমান মুকুল চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়ীত্ব পাল করছেন।
নানা কারণে আলোচনায় ইউনিয়নঃ গেল নির্বাচনের পর থেকে যোদ্ধাপরাধ মামলায় কারাগারে রয়েছেন আবুল খায়ের গোলাপ। এনিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা চলছে। তিনি ওই ইউনিয়নের হেভিওয়েট একজন প্রার্থী ছিলেন। ওই এলাকার ঐহিত্য হচ্ছে পাহাড়-টিলা। কিছুদিন পরপরই বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটার মহোৎসব শুরু হয়। তখনও জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। মিডিয়ায় প্রকাশ হলে, প্রশাসন চালায় অভিযান। সবশেষ আলোচনা ছিল ‘ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত’ ইস্যূ। করোনা পরিস্থিতিতে গজনাইপুর ইউনিয়নে বিগত চার বছর ধরে ২২৯ জন লোকের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর (১০টাকা) কেজির চাল আত্মসাতের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে চাল চুরির আত্মসাতের অভিযোগে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গত ৭ জুলাই ইমদাদুর রহমান মুকুলকে সাময়িক বরখাস্ত সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তিনি হাই কোর্টে রীট করেন। ২ মাস ১৫ দিন পর পরে সাময়িক বহিষ্কারাদেশ সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। ওই ২ মাস ১৫ দিন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেন প্যানেল চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুব আলী নুরু। এ ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে।
এবার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আলোচনায় রয়েছেন: সাবেক চেয়ারম্যান শাহ নওয়াজ, বর্তমান চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল, মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন (বীর প্রতীক), সাবেক চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপের এর স্ত্রী মিনারা খাতুন, সাবেক ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা জমশেদ আলী, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামীলীগ নেতা শাহ তোফায়েল আহমেদ, যুক্তরাজ্য প্রবাসী হারুন আখঞ্জী, ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সমাজ সেবক আবুল খায়ের খায়েদ,আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল কাইয়ুম সেলিম, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শফিউল আলম বজলু, উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা সাবের আহমেদ চৌধুরী, বর্তমান ইউপি সদস্য মোঃ জাহেদ আহমদ,যুক্তরাজ্য প্রবাসী শেখ মাসুদুর রহমান মাসুদ, নবীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য রুহেল আহমেদ।
এছাড়াও আরো বিভিন্ন জনের কথা শুনা যাচ্ছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীতা ঘোষনা দেননি কেউই। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন তাদের মাঝে অনেকেই বিভিন্নভাবে নিজেদের প্রার্থীতার কথা জানান দিচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন ওই ইউনিয়নের সকল সমস্যা সমাধানে নিরলশভাবে কাজ করবেন বলে আশ্বাস দিচ্ছেন ভোটারদের।
অপর দিকে, বর্তমান চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল যদি আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পান তবেই তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহন করবেন বলেও লোকমূখে শুনা যাচ্ছে, তিনি ব্যস্ত থাকায় তার কোন মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
গেল নির্বাচনে ওই ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন আবুল খায়ের গোলাপ। পরে কেন্দ্র থেকে তা পরির্বতন হয়ে পরে মনোনয়ন পান ইমদাদুর রহমান মুকুল। গত নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোয়ন পেয়েছিলেন শাহ মুস্তাকিম আলী। তিনি প্রায় ৪শত ৩১ ভোট পেয়েছিলেন ওই নির্বাচনে বিএনপির চরম ভরাডুবি হয়।
এর আগেও বিএনপির বিভিন্ন প্রার্থী নির্বাচন করলেও এ ইউনিয়নে জয়ী হতে পারেনি।