কী হবে টিকা না পাওয়া শিশুদের ?
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুন ২০২০, ১২:১০ অপরাহ্ণমাহমুদ দম্পতির ১৫ মাসের শিশুর এপ্রিলে টিকার নির্ধারিত ডেট ছিল। করোনার সাধারণ ছুটি চলার কারণে টিকাদানের জায়গায় যেতে পারেননি তারা। বেশিরভাগ টিকাদান কেন্দ্র খোলা থাকলেও সংক্রমণের ভয়ে অনেক মা শিশুকে নিয়ে কেন্দ্রে যাননি। যেখানে টিকা দেন সেখানে ফোন করেও যথাযথ তথ্য না পেয়ে তাদের শিশুর কোন সমস্যা হবে কিনা সেই চিন্তায় পড়েছেন তারা।
শিশু চিকিৎসকরা বলছেন, টিকার ডোজ পুরোটা দিলে শিশু নিরাপদ হয় ঠিকই কিন্তু যদি তিনটি ডোজের দুটি সম্পন্ন হওয়ার পরে একটা মিস করে তাহলে হুট করেই খুব বড় সমস্যায় পড়বে তা নয়। পরবর্তীকালে দ্রুত সেই টিকা নিয়ে নিলে কোন ভয় থাকবে না। এদিকে মা, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচি কর্তৃপক্ষ বলছে, যদি টিকা না দেওয়ার এই সময়টা দীর্ঘমেয়াদি হতো তাহলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তো। ইতোমধ্যে আমরা প্রত্যেকটা টিকাদান কেন্দ্র চালু করেছি। ভয় পাওয়ার কিছু নেই, যারা গত তিন মাসে শিশুদের টিকা দেননি তারা এখনই কেন্দ্রে আসুন।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) বলছে, কেবল এপ্রিল মাসে নিয়মিত টিকাদান থেকে প্রায় অর্ধেক শিশু বাদ পড়ে। করোনা প্রতিরোধে দেওয়া সাধারণ ছুটির সময় বাসায় অবরুদ্ধ থাকার কারণে শিশুরা টিকা পায়নি। ইউনিসেফের হিসাবে এপ্রিল মাসে প্রায় ১ লাখ ৪১ হাজার শিশু টিকা পায়নি। টিকাকেন্দ্রগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গত তিনমাসে অনেক শিশু টিকা নেওয়ার ধারাবাহিকতা থেকে ঝরে গেছে। আবার অনেক শিশুর পরিবার এলাকা ত্যাগ করায় তাদের কেন্দ্র পরিবর্তন হয়েছে।
গত তিন মাসে নিয়মিত টিকা নেওয়া শিশু যেমন কমেছে তেমনই নতুন শিশু যুক্ত হয়েছে। স্থান পরিবর্তনসহ বেশকিছু কারণে শিশুরা নিয়মিত যে কেন্দ্রে টিকা নিতেন সেখানে যেতে পারেনি বলে মনে করেন তিনি। গ্রিনরোডের সূর্যের হাসি ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক মাহবুবা শারমীন বলেন, আমরা নিয়মিত খোলা রাখলেও টিকা নিতে আসেননি অনেকে। এই পিছিয়ে পড়াদের তালিকা আছে আমাদের কাছে। এখন তারা চাইলেই কেন্দ্রে এসে টিকাটা নিয়ে নিতে পারবেন।
এই কেন্দ্র থেকে ভ্যাক্সিন যায় দুটি বেসরকারি হাসপাতালে। গত তিন মাসের মধ্যে দুই মাস সেখানে নিয়মিত পাঠানো সম্ভব হয়নি বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। কেন সম্ভব হয়নি প্রশ্নে শারমীন বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত টিকা রয়েছে। দেড় মাসের মতো তারা কার্যক্রম চালায়নি, এমাসে আবারও তারা স্বাভাবিকভাবে কাজ শুরু করেছে।
শিশু চিকিৎসক রকিবুল ইসলাম বলেন, শিশুর টিকার নির্ধারিত তারিখের আগে টিকা নেওয়া যায় না। কিন্তু পরবর্তী মাসে যে কোনও সময় নিয়ে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হলে সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। একটি টিকার যদি তিনটা ডোজ হয়। তাহলে দুটো ডোজের পরে কোন কারণে নিতে না পারলে সমস্যা তৈরি হবে তা নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভয় না পেয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মা, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর মো. শামসুল হক বলছেন টিকা নেওয়া দশ শতাংশ কমেছে। যদি টিকা কর্মসূচি ভেঙে পড়ে তাহলে নিউমোনিয়া হামের মতো রোগগুলোর কারণে শিশুমৃত্যু বাড়বে। কিন্তু সেটা তখনই ভয়ের হতো যখন কিনা বছরের পর বছর টিকা দিতে পারা যাবে না। আমাদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এপ্রিল-মে এই দুই মাসে প্রায় আড়াই লাখ শিশু নিয়মিত টিকা পায়নি কিন্তু চলতি মাসে তা আবারও চালু করা গেছে। তিনি আরও বলেন, দুই মাসে যেসব শিশু বাদ পড়েছে তাদের তালিকা আমাদের কাছে আছে।
মাকে সচেতন হতে হবে উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, অনেকে ঢাকা শহর ছেড়ে চলে গেছে। তারা চলে যাওয়ার সময় টিকার কাগজটিও হয়তো নিয়ে যাননি। ফলে তারা ফিরে এলেই আবারও তাদের নিয়মিত করে নেওয়া যাবে। কেন্দ্রের পরামর্শকদের কাছে গেলেই সেটি সম্ভব হবে। আমাদের ভ্যকসিনের কমতি নেই। আগামী তিন মাসের স্টক আমাদের আছে।