করোনা যুদ্ধে নিজেকে নিয়ে আমি গর্বিত
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মে ২০২০, ১১:২৫ পূর্বাহ্ণসবাই হয়তো এরই মধ্যে জেনে গেছেন যে, এবার আমাদের র্যাব-৯ পরিবারেও হানা দিয়েছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। মোট ২০ জনকে টেস্ট করিয়ে এর মধ্যে ১৩ জনই কোভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ আমাদের সামনে, পেছনে, ডানে,বাঁয়ের অনেকেই আজ আক্রান্ত। এভাবে প্রতিদিন ২০ জন করে টেস্ট করার পর আগামী কয়েকদিন পর হয়তো জানা যাবে, আমাদের মোট আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যাটা আসলে কতো।
এ পর্যন্ত পড়েই যারা আমার জন্য মহাচিন্তিত হয়ে পড়ছেন, তাদেরকে আরও বেশি খারাপ একটা খবর দেই। এই ১৩ জনসহ ভবিষ্যতে পুরো র্যাব-৯ ব্যাটালিয়নে যত জন করোনা পজিটিভ রোগী পাওয়া যাবে, অফিসার হিসেবে তাদের দেখভালের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি আমি ও আমার টিম। শ্রীমঙ্গল অধ্যায় শেষে এখন থেকে সিলেটের ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টারে আমার নেতৃত্বে ৬ সদস্যের ছোট্ট টিম পুরো র্যাব-৯ ব্যাটালিয়নের সকল করোনা আক্রান্ত রোগীর দেখাশোনা করা, হাসপাতালে ভর্তি করা, তাদের কাছে খাবার পৌঁছানো, ঔষধ-পথ্য গ্রহণ নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করব। যেহেতু সারাক্ষণ করোনা রোগীদের নিয়েই পড়ে থাকব, করোনা রোগীদের নিয়েই হবে ওঠাবসা, অলৌকিক কিছু না ঘটলে ধরেই নেওয়া যায়, আজ হোক বা দু-দিন পরে হোক, নিশ্চিত করোনা আক্রান্ত হবার রাস্তাতেই পা রাখছি। সম্পূর্ণ বুঝেশুনে, সজ্ঞানে। যত গরম, আর অস্বস্তি লাগুক, পিপিই-ই হতে যাচ্ছে সারাদিনের একমাত্র পোশাক। আমার জানামতে, খাগড়াছড়ি জেলার উত্তর বড়বিল (সিংহপাড়া) গ্রামে জন্ম হবার পর এই নগণ্য মানুষটির জীবনে এমন মহান, বিরাট, গর্ব করার মতো কাজ করার সুযোগ কখনোই আসেনি। আলহামদুলিল্লাহ, আমি সেই সুযোগ দুই হাত ভরে গ্রহণ করছি।
দুঃখ একটাই, যেহেতু এখন শুধু করোনা রোগী নিয়েই আমার কারবার, তাই আপাতত আর হয়তো অসহায় মানুষের দুয়ারে চালডালের বস্তা নিয়ে হাজির হতে দেখা যাবে না আমাকে, সামান্য খাদ্যসামগ্রী পেয়ে ঝলমল করে ওঠা ক্ষুধার্ত মানুষের মুখগুলি দেখে স্বর্গসুখ লাভের সুযোগও হয়তো আপাতত আর হচ্ছে না। মিস করব, ভীষণ মিস করব। আর আমার ভিডিও না দেখলে আপনাদের যাদের পেটের ভাত হজম হতো না। কী হবে তাদের এখন! বেচারারা! মায়াই লাগছে!!
সবশেষে বলব, যদি ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় কখনো কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, দয়া করে ক্ষমা করে দিবেন। সত্যিই নিজেকে নিয়ে আজ আমার প্রচণ্ড গর্ব অনুভব হচ্ছে যে, আমি পৃথিবীর জন্য, মানবজাতির জন্য, দেশের জন্য এই প্রথম সত্যিকারার্থে উল্লেখ করার মতো মতো কোন কাজ করতে যাচ্ছি। যদি বেঁচে যাই, বৃদ্ধ বয়সে নাতিপুতিদেরকে বলতে পারব, এক কালে পৃথিবীতে করোনা ভাইরাস নামক এক ভাইরাসের প্রকোপ হয়েছিলো। মানবজাতির সেই ভরা দুর্যোগের দিনে আমি শুধু নিজের বেতন ও অতীতের সব সঞ্চয় অসহায় মানুষদের পেছনে ব্যয় করে, খাদ্যদ্রব্য বহন করে দুর্গত মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিয়ে, কোয়ারেন্টাইন – আইসোলেশন নিশ্চিতে দিনরাত ভূমিকা পালন করেই নিজের দায়িত্ব শেষ করে ফেলিনি, বরং করোনা প্রতিরোধ যুদ্ধে আমি বেছে নিয়েছিলাম ভয়ঙ্করতম ঝুঁকির পথটিই। আর হ্যাঁ,আমি ভয় পাইনি। সুনির্মল হাওয়াবাহী এক নিরাপদ পৃথিবীর প্রত্যাশায়।
মো. আনোয়ার হোসেন (শামীম আনোয়ার):
এএসপি (টিম লিডার), করোনা রেসপন্স টিম, র্যাব-৯,সিলেট।