উদাসীনতায় : হবিগঞ্জ হচ্ছে করোনার রেড জোন
![](https://jago.news/images/icon.png)
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মে ২০২০, ৩:২৭ অপরাহ্ণ![](https://jago.news/wp-content/uploads/2020/05/CORONA-HABIGANJ.jpg)
নিজস্ব প্রতিবেদক জাগো নিউজ : করোনার হটস্পট নারায়ণগঞ্জ ফেরতদের শতভাগ কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত না করা, আক্রান্ত ব্যক্তির এলাকায় ঘোরাফেরা, রিপোর্ট বিলম্বে করোনা পজিটিভ ৭ কর্মচারীর অন্যদের সংস্পর্শে থেকে ১৩ দিন দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে হবিগঞ্জ জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ১১৭।
সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্ত ৩০১ জনের মধ্যে শুধু হবিগঞ্জেরই ১১৭ জন। চারটি জেলার সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্ত হওয়ায় হাওর ও চা-বাগান বেষ্টিত হবিগঞ্জকে বিবেচনা করা হচ্ছে করোনার রেড জোন হিসেবে। আক্রান্ত ১১৭ জনের মধ্যে চিকিৎসক নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীই ২৯ জন ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ২৬ জন। বাকি ৬২ জনের সবাই শ্রমজীবী। হাওরাঞ্চল এবং চা-বাগান অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় তাদের মধ্যে ছিল না তেমন একটা সচেতনতা।
জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের প্রতিদিনের রিপোর্ট পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, আক্রান্তের ৪৩ শতাংশই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সদস্য, স্বাস্থ্যকর্মী এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। করোনার সংকটে মাঠে কাজ করার কথা থাকলেও আক্রান্ত হওয়ায় তারা রয়েছেন আইসোলেশনে। যে কারণে সচেতনতামূলক কার্যক্রমেও নেমে এসেছে অনেকটা স্থবিরতা।
হবিগঞ্জের সার্বিক করোনা পরিস্থিতির পর্যালোচনায় দেখা যায়, রিপোর্ট বিলম্বের কারণে করোনা পজিটিভ হওয়া সত্ত্বেও লোকজনের সংস্পর্শে থেকে কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করেছেন ৫ পুলিশ সদস্যসহ জেলার ১৩ সরকারি কর্মচারী। করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হওয়া এলাকায় যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ১১৭ জনের প্রায় সবাই আক্রান্ত হয়েছেন করোনা রোগীর সংস্পর্শে এসে। বানিয়াচং উপজেলায় করোনা আক্রান্ত এক ব্যক্তি এলাকায় ঘুরেছেন তিনদিন। তাকে দেখতে ভিড় করেছেন এলাকাবাসী।
অন্যদিকে আক্রান্তদের এলাকার অধিকাংশই করা হয়নি লকডাউন। ঢালাওভাবে একজন যাচ্ছেন অন্য ১০ জনের সংস্পর্শে, বাজারগুলোতে রয়েছে ব্যাপক জনসমাগম। এভাবে চলতে থাকলে হাওরাঞ্চলের অসচেতন লোকজনের মাঝে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ধারণ করবে ভয়াবহ আকার। এমনটাই ভাবছেন সচেতন মহল। এসব বিষয়ে প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকায় যাওয়ার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাট-বাজারে ব্যাপক জনসমাগম। মাস্ক পরছেন না অধিকাংশই। করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে অনেকেরই নেই ন্যূনতম ধারণা। শুরুর দিকে প্রশাসন সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করলেও বর্তমানে তাদের তৎপরতা তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না মাঠ পর্যায়ে।
স্থানীয় নীতি নির্ধারকদের কয়কেজন বলেন, হবিগঞ্জবাসীর বড় একটি অংশ এ ব্যাপারে উদাসীন। রিপোর্ট বিলম্বের কারণে নমুনা সংগ্রহের পর বেশ কয়েকদিন কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করেছেন আক্রান্ত জেলা প্রশাসকও। এতে আরো কয়েকজন আক্রান্ত লোক থেকেছেন অন্যদের সংস্পর্শে। যা হয়েছে শুধু রিপোর্ট বিলম্বের কারণে। এছাড়া সিলেট বিভাগের প্রবেশদ্বার এই জেলায় আক্রান্তও সর্বোচ্চ। তাই এখানে একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন অত্যন্ত জরুরি।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের সন্তান এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. জহিরুল হক শাকিল বাংলানিউজকে বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তির এলাকায় ঘোরাফেরা, হাট-বাজারে মানুষজনের ভিড় এবং অসচেতনতাই হবিগঞ্জবাসীকে নিয়ে যাচ্ছে খারাপ পরিস্থিতির দিকে। সেজন্য প্রশাসনকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে বলে মনে করেন তিনি। অন্যদিকে আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না বিভিন্ন কারণে। ফলে তার সংস্পর্শে যাচ্ছেন অনেকে। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির আশপাশের লোকজনের শতভাগ কোয়ারেন্টিন এবং প্রকৃত লকডাউন বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, দেখা যাচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে নিয়ে যাওয়া পর্যন্তই প্রশাসনের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ। পরবর্তীতে ওই লোকের পরিবার কি করছে, কোথায় যাচ্ছে সে বিষয়টিও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে না। অথচ একজন থেকেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে যেতে পারে পুরো এলাকায়। এখনই সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ না করা হলে অসচেতন হাওরবাসীকে এর ভয়াবহ মূল্য দিতে হবে।
এসব বিষয়ে কথা বলতে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. একেএম মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে মোবাইলে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
![](https://jago.news/wp-content/uploads/2024/02/WEB.png)