Logo

‘আমি সরকার দলের লোক, তরে বাইন্ধা পিঠাইমু’ (ভিডিওসহ)

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
জাগো নিউজ : বুধবার, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২

image_pdfimage_print

মঙ্গলবার রাতে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ক্লিপ পোষ্ট করেন। তা মুহুর্তেই হয়ে যায় ভাইরাল। ভিডিওতে দেখা ক্ষমতা দেখানোর দৃশ্য। লড়াইয়ে আওয়ামীলীগ নেতা বনাম সরকারি কর্মচারি। আওয়ামীলীগ নেতার বাড়ি বিল বকেয়া থাকায়  বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চান বিদ্যুৎকর্মী। আওয়ামীলীগ নেতা কল দিয়ে ৫ মিনিট সময় চান, কিন্তু তা দিতে রাজি নয় বিদ্যুৎকর্মী। করে দেন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। বাড়িতে দৌড়ে আসেন আওয়ামীলীগ নেতা এসে দেখেন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এতেই ঘটে বিপত্তি। চরম ক্ষিপ্ত হন আওয়ামীলীগ নেতা। গালিগালাজে বিদ্যুৎ কর্মীরা ভয় না পাওয়ায় তাদের মারতে হাতে নেন ক্রিকেট খেলার ব্যাট।

৯ মাসের বকেয়া বিল আদায় করতে গিয়ে এক আওয়ামীলীগ নেতার হাতে এমনভাবেই লাঞ্ছিত হয়েছেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা। বকেয়া বিলের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের মারতে ক্রিকেট খেলার ব্যাট নিয়েও তেড়ে আসেন আওয়ামীলীগ নেতা রুহুল আমীন। এসময় তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে পেটানোর হুমকিও দেন।

মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের দত্তগ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত রুহুল আমীন নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ওই গ্রামের রজব উল্লার ছেলে।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নবীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম আলীবর্দী খান সুজন বাদী হয়ে রুহুল আমীনকে আসামী করে নবীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ভিডিওতে দেখা যায়, রুহুল আমীন ক্রিকেট খেলার ব্যাট নিয়েও পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের মারতে বার বার তেড়ে যান । ‘আমি সরকার দলের লোক’ দাবী করে ভিডিওতে শুনা যায় তার মুখে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ। পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের দা দিয়ে কুপানোর হুমকিও দেন। একবার তাকে বলতে শুনা যায়, ‘আমি ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। তরে বাইন্ধাঁ রাখমু (বেঁধে রাখবো), পুলিশ আইয়া নিবো (পুলিশ এসে উদ্ধার করবে)। পুনরায় সংযোগ চালু না করলে বেঁধে পেটানোর হুমকিও দেন।
পল্লী বিদ্যুতের সূত্র বলছে, ৩৫০/১২৪০ হিসাব নম্বরের মিটারটি রুহুল আমীনের পিতা রজব উল্লার নামে রয়েছে। বতর্মান রুহুল আমীন ওই মিটারটি ব্যবহার করছেন। তাদের হিসাবে ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ১ শত ৮৪ টাকা বকেয়া বিল রয়েছে। উক্ত বিল পরিশোধের জন্য বার বার তাগিদ দেয়া হলেও কর্ণপাত করেননি আওয়ামীলীগ নেতা রুহুল আমীন।

মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বকেয়া বিল আদায়ের জন্য নবীগঞ্জ উপজেলার দত্তগ্রামস্থ রুহুলের বাড়িতে হাজির হন নবীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের সহকারী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার পলাশ মাহমুদ, সহকারী এনফোর্সমেন্ট কো-অডিনেটর মাকসুদ আহমেদসহ ৬-৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ সময় বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন বিদ্যুৎকর্মীরা। এতে চরমভাবে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামীলীগ নেতা রুহুল আমীন। পরে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মচারীদের মারতে বার বার তেড়ে যান।

বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নবীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম আলীবর্দী খান সুজন বাদী হয়ে রুহুল আমীনকে আসামী করে নবীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন বলেন, আমার কিছু বকেয়া বিল ছিল, এজন্য পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা আমার বাড়িতে যান, আমি বাড়িতে না থাকায় মোবাইল ফোনে তাদের কাছে কিছুক্ষণ সময় চাই, কিন্তু কোনো ধরণের সময় না দিয়ে তারা আমার সংযোগটি কেটে ফেলেন, এরপর উনাদের সাথে আমার বাকবিতণ্ডা হয়। আমি পরে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে বকেয়া বিল পরিশোধও করেছি।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নবীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম আলীবর্দী খান সুজন জাগো.নিউজকে বলেন, ৯ মাস বকেয়া বিল আদায় করার জন্য আমার অফিস থেকে কয়েকজন লোক রুহুল আমীনের বাড়িতে যায়। এসময় বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় তার বিদ্যুৎ সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের লোকজনকে মারতে ক্রিকেট খেলার ব্যাট নিয়ে তেড়ে আসেন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, পরে তিনি বকেয়া বিল পরিশোধ করেছেন তবে তার বিদ্যুৎ সংযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে, রুহুল আমীনকে আসামী করে ইতিমধ্যে নবীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ডালিম আহমেদ বলেন, অভিযোগ দেয়ার বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের লোকজনের সাথে কথা হয়েছে, তারা অভিযোগ দিবে বলেছে, এখনো অভিযোগ পাইনি পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন জাগো.নিউজকে বলেন, বকেয়া বিল চাইতে গিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের যেভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বিষয়টি দুঃখজনক।

উল্লেখ্য, অভিযুক্ত রুহুল আমীন ইতিপূর্বেও নানা কারণে আলোচনায় ছিলেন। ২০১৬ সালে নবীগঞ্জ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর দুই ছাত্রীর শরীর স্পর্শসহ শ্লীলতাহানী করে আটক হন। পরে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

অন্যান্য সংবাদ
Theme Created By ThemesDealer.Com
x
error: কপি করা নিষেধ !
x
error: কপি করা নিষেধ !