আজমিরীগঞ্জে ১৬ বছর খোঁজার পর ছেলেকে পেলেন মা, কিন্তু লাশ!
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ এপ্রিল ২০২১, ৩:০৪ পূর্বাহ্ণআজমিরীগঞ্জে দীর্ঘ ১৬ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া সন্তানকে খুঁজে ফিরছিলেন তার মা। এতগুলো বছর ধরে খুঁজতে-খুঁজতে হতাশ হয়ে পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন।
অবশেষে মায়ের কাছে সন্তানের খোঁজ এনে দিল পুলিশ।
কিন্তু জীবিত না- ১৬ বছর পর মা ফিরে পাচ্ছেন তার ছেলের রক্তাক্ত লাশ। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর পুলিশ মো. ইমদাদুল হক ইমন (৩৫) নামে ওই ব্যক্তির লাশ শনাক্ত করেছে।
লাশটি এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমাগারে রয়েছে।
ইমন হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শরীফনগর গ্রামের মৃত শামছুদ্দিনের ছেলে। তার স্বজনরা লাশটি আনার জন্য মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সেখানে গেছেন।
সূত্রে জানা গেছে, ইমন প্রায় ১৬ বছর আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। এরপর দীর্ঘদিন ধরে তার মা আয়েশা আক্তার ও ভাই জিয়াউল হক দেশজুড়ে ইমনকে খোঁজাখুজি করেছেন, কিন্তু সন্ধান পাননি। খুঁজতে-খুঁজতে আয়েশা আক্তার তার ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন।
এদিকে, কয়েকদিন আগে রাজধানীর কাফরুল থানা পুলিশ একটি রক্তাক্ত মরদেহ পায় এবং মরদেহের সঙ্গে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তারা ইমনকে শনাক্ত করেন। পরে আজমিরীগঞ্জ থানায় ছবি পাঠালে ইমনের পরিবারের সদস্যরাও থানায় এসে লাশটি শনাক্ত করেন।
দীর্ঘ ১৬ বছর খুঁজে ফেরা ছেলের রক্তাক্ত মরদেহের খবর পাওয়ার পর ইমনের মা ভেঙে পড়েছেন। তিনি কান্নাকাটি করে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় লাশটি নিয়ে আসার খরচও তাদের ছিল না। খবর পেয়ে পাড়া-প্রতিবেশীরা টাকা দিয়ে সাহায্য করে ইমনের বড় ভাই জিয়াউল হককে লাশ আনার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছেন।
এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জ থানার ওসি মো. নূরুল ইসলাম জানান, প্রায় এক সপ্তাহ আগে ইমন ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। কাফরুল থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গের হিমাগারে রেখেছে। জাতীয় পরিচয় পত্রের ঠিকানা অনুযায়ী তারাই আজমিরীগঞ্জ থানায় খবর দিয়েছে।
ইমনের পরিবারের বরাত দিয়ে ওসি বলেন, তিনি প্রায় ১৬ বছর আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন। এতদিন পর রক্তাক্ত লাশ শনাক্তের খবর পাওয়ায় মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা ভেঙে পড়েছেন। পুলিশ লাশটি আজমিরীগঞ্জ পাঠানোর জন্য কাজ করছে।
ইমনের সহপাঠী মো. আবু হেনা বলেন, আমি ইমনের সঙ্গে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। ইমনের বাবা মারা গেছেন আরও আগেই। এখন সংসারে মা, আরেক ভাই ও বোন রয়েছেন। ইমন প্রায় ১৬ বছর আগে অভিমান করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়ে আর ফেরেনি। এরপর তার মা ছেলেকে খুঁজে ফিরেছেন অনেক জায়গায়। এখন লাশ পাওয়ার খবর পাওয়ায় তিনি শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন।
ইমনের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তিনি ঢাকার মিরপুরে পল্লবী আবাসিক এলাকায় বসবাস করতেন।