‘অন্তরঙ্গ আলোকে দেওয়ান ফরিদ গাজী’
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ নভেম্বর ২০২০, ৯:১০ অপরাহ্ণ১৯৪০ সালে পাকিস্তান আন্দোলন শুরু হলে ক্রমে ক্রমে মুসলিম ছাত্র সমাজ মোটামুটি ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে নপড়ে। বৃহত্তর ছাত্র ঐক্য থাকলেও প্রায় সর্বত্র দুইটি বিপরীত মুখী ধারা বজায় ছিল। আমরা বলতাম একটি প্রগতিশীল গোষ্ঠীর বিপরীতে আছে একটি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি। প্রগতিশীল গোষ্টী মুক্ত বুদ্ধির ধারক এবং মোটামুটিভাবে অসাম্প্রদায়িক।
নানা অবস্থার বিপাকে দুই ধর্মাবলম্বীরা দূরে সরে গেছে এবং রেষারেষিতে লিপ্ত । এক গোষ্ঠীর পশ্চাদপদ আর অন্য গোষ্ঠী এই সুযোগে তাদের শোষণ ও বঞ্চিত করছে। কিন্তু এই রেষারেষি চিরস্থায়ী নয়। সুযোগ এবং উপযুক্তি পদক্ষেপে এর বিহিত হবে। প্রতিবেশী হিসেবে এই দুই গোষ্টীর সুখে শান্তিতে থাকতে পারবে। সমাজে যে বৃহত্তর বৈষম্য রয়েছে ধনী ও নির্ধনের মধ্যে তার সমাদানের দুই গোষ্ঠীই কাধে কাধে কাধ মিলিয়ে এগুতে পারবে। প্রগতিশীল চিন্তা ধারার এই ছিল মুল কথা। সমাজতন্ত্র নিয়ে অতি নির্দিষ্ট সংখ্যক যুবককেরই মাথা ব্যথা ছিল। তবে জনহিতে নিবেদিত রাষ্ট্রার্দশে সব প্রগতিশীলরা আস্থাবান ছিলেন। দেওয়ান ফরিদ গাজী এই প্রগতিশীল ছাত্রগোষ্টীর একজন ছিলেন। তিনি যখন কলেজে লেখাপড়া শেষ করেন আমি তখন প্রবেশীকা পরীক্ষার্থী। কিন্তু তার সঙ্গে পরিচয় আরোও আগে। ছাত্র রাজনীতিতে তার সক্রিয় ভূমিকার সুবাদে। আমার আব্বা আবু আহমদ আব্দুল হাফিজ ছিলেন মুসলিমলীগের নেতা। আব্দুল মতিন চৌধুরী তাকে শুরুতে মুসলীম লীগে যোগ দিতে উদ্ভুদ্ধ করেন। তখন মাত্র ১৯৩৯ সাল শিক্ষাঙ্গনে আমার আব্বা সক্রিয় ছিলেন
গাজী সাহেব সম্পর্কে আমার ছেলে বেলার ধারণা ছিল যে তিনি তার মতামত প্রকাশে খুব শক্ত এবং অনেকটা জেদি প্রকৃতির। তবে এই জেদ ছিল রাজনীতি মতবাদ বা আদর্শ নিয়ে, মানুষটি ছিলেন খোলামেলা যার সঙ্গে বয়সের ব্যবধান সত্তেও আড্ডা জমাতে অসুবিধা ছিলনা। তিনি পারিবারিক সম্পর্কে আমার গুরুজন ছিলেন। তিনি সামাজিক বা রাজনৈতিক অঙ্গনে সেই সম্পর্ক সম্বন্দে বহুদিন অবহিতই ছিলাম না। বাংলাদেশে প্রথমে তিনি প্রতিমন্ত্রী ও পরে মন্ত্রীর পদ অলংকৃত করেন। তিনি প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। প্রতিমন্ত্রী বা মন্ত্রী হলে পরে প্রায় সবক্ষেত্রেই নেতার কার্যক্রমে কিছুটা পরিবর্তন আসে। এবং তার জন্য মূলত দায়ি দায়িত্বের চাপ। আমার মনে হয়না তার ক্ষেত্রে সেইরকম কোনো পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছিল। মানুষের সঙ্গে এবং পরিচিত গোষ্টীর সঙ্গে তার কোনো ব্যবধান কখনো লক্ষ করিনি। ক্ষমতা তার চরিত্রকে কখনো বদলিয়েছে বলে মনে হয়না। তার আচরণে জনগণের স্বার্থ সবসময় সর্বোচ্চ অগ্রাধীকার পেয়েছে। এবং তাকে দলের স্বার্থও সমুন্নত রাখতে দেখেছি। ১৯৪৭ সালে ছাত্র রাজনীতিতে যারা নেতৃত্বের ভুমিকায় ছিলেন তারা অনেকে ঢাকায় উচ্চ শিক্ষায় চলে যান। রাজনীতিতেও মোড় ফেরে। ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান আন্দোলন আর ছিলনা। এবং দেশ গঠনের পন্থা নিয়ে ছিল অনেক বিতর্ক। রাষ্ট্রভাষা সমস্যা সামনে এসে দাঁড়ালো ১৯৪৮ সালে। সাম্প্রদায়িক ধাঙ্গায় কলংকিত হল ১৯৯৫ সাল। বিরোধী রাজনৈতিক দলের উন্মোষ হল ১৯৪৯ সালে প্রথমে যুবলীগ পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ। এসময়ে প্রগতিশীল গোষ্টীর নেতৃত্বে সিলেটে যারা এগিয়ে আসলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দেওয়ান ফরিদ গাজী। গাজী সাহেব দৃঢ় হাতে হাল টেনে থাকেন এবং তাকে সিলেট কখনো অনুপস্থিত দেখিনি।