অজানায় ছুটে চলেছে প্রিয় সিলেট
জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জুন ২০২০, ১২:১৮ পূর্বাহ্ণমানুষ মারা যাচ্ছে। দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। সিলেটেই মারা গেছেন ২৬ জন। বিভাগে এ সংখ্যা ৩৫। উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়াদের হিসেব নেই। মুখে বললেও দরোজা বন্ধ করে রেখেছেন সিলেটের অধিকাংশ বেসরকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সরকারী হাসপাতাল শামসুদ্দিনে ঠাঁই নেই। অক্সিজেন সংকট প্রকট হচ্ছে। টাকায়ও মিলছে না অক্সিজেন। ফরিয়ারা অক্সিজেন সংকটে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ায় ধান্ধায় ব্যস্ত। আক্রান্তে সংখ্যা পনেরশ’ পাড়ি দিয়েছে। এই সংখ্যা আগামী ১০ দিনে দিগুন হবে। দেশে দেশে করোনার পরিসংখ্যান এই আভাসই দিচ্ছে। হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন কামরান। করোনা আক্রান্ত স্ত্রী আসমা কামরান বাসায় উৎকন্ঠায়।
মন ভালো নেই মেয়র আরিফের। ইতিমধ্যে নিজ ঘরে আঘাত হেনেছে মহামারী করোনা। স্ত্রী শ্যামা হক করোনা আক্রান্ত। বৃদ্ধা মাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না। সিলেট শহরের প্রতিটি পাড়া পাড়ায় করোনা ছোবল বসিয়েছে। গ্রামে গ্রামে ছুটছে করোনার পাগলা ঘোড়া। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও স্বস্তিতে নেই। একেক করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। পুলিশ বাহিনীতে সবচেয়ে বেশি।
সব বাহিনীতেই আক্রান্তের হার বাড়ছে। নিরাপদ নয় ডাক্তার সহ ফ্রন্ট লাইনের যুদ্ধারা। সেবা দিতে গিয়ে তারা করোনার কাছে কাবু হয়ে পড়েছেন। বলতে গেলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সিলেটে। তিন মাস ধরে করোনার সঙ্গে লড়াই করে করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এ ক্লান্তির শেষ নেই। সামনে নেই কোনো আশার আলো। কবে পাবো মুক্তি বলতে পারছেন না কেউ। সিলেটের গত ১০ দিনের পরিসংখ্যান ভয়াবহ। নমুনা পরীক্ষায় গড়ে ২৫ ভাগ মানুষের মিলছে করোনা। স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে- সিলেটে করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে।
করোনা উপসর্গরা পাচ্ছে না চিকিৎসা। ভয়ে সরকারী হাসপাতালে যাচ্ছেন না অনেকেই। ছুটছেন বেসরকারী হাসপাতালে। রোগীকে দরোজা থেকে বিদায় করে দিচ্ছেন ডাক্তাররা। প্রতিদিন সকাল হলেই মাইকের ঘোষনা কানে আসছে। একাধি মৃত্যুর ঘোষনা। অবিরাম মারা যাচ্ছে মানুষ। যেনো মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছে। এই মিছিলের গন্তব্য কোথায় কেউ জানি না। ক্রমশ: বিবেকহীন হয়ে পড়েছি আমরা। ‘মানবতা’ শব্দটিও উঠে গেছে। মানুষ বিপর্যস্ত। প্রাণ বাচাতে ছুটছে। অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে না। আইসিইউতেও জায়গা নেই। এরপরও একবারের জন্য হলেও বিবেককে জাগ্রত করছে না কেউ। চিয়ারত নিয়মে ফিরেছে সিলেট। রাস্তায় যানবাহনের চাপে যানজট তীব্র। মার্কেট, দোকান সব খোলা।
ফুটপাতেও হাঁটার জায়গা নেই। মানুষ আর মানুষ। করোনার লাল বার্তায়ও দিশে ফিরছে না কারো। যেনো মৃত্যুর মিছিলে সবাই শরীক হচ্ছেন দল বেধে। কোনো সুস্থ বিবেকের মানুষ এভাবে রাস্তায় নামতে পারে না। মৃত্যুর মিছিলে শরীক হতে পারে না। তবু ছুটছে মানুষ। আমরা সবাই বিবেকহীন হয়ে গেলাম। শাহজালালের দেশ সিলেট। আউলিয়ার শহর সিলেট। আত্মাধিক রাজধানী সিলেট। সিলেটের মানুষ শান্তি প্রিয়। এমনটি জানেন সবাই। বুর্জুগানের এলাকা সিলেট। কমে আসছে বুর্জুগাণের সংখ্যা। দোয়ার দরোজা বন্ধ হয়ে পড়ছে। অনেকেই বলেন- এতিম হয়ে গেছে সিলেটবাসী। শুধু বুর্জুগানই নয়, সিলেটকে নিয়ে যুগে যুগে স্বপ্নের ঢালি সাজিয়েছেন আমাদের রাজনীতিকরা। তারাও আজ অনেকেই বেচে নেই। চাইলে তারা উন্নত দেশে গিয়ে সুখী জীবন যাপন করতে পারতেন। কিন্তু করেননি। মাটির টানে রাজনীতি করেছেন। সংকটময় মূহূর্তে সিলেটে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বার বার এক টেবিলে বসেছেন সবাই। উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতি করেননি। এ কারনে এখন প্রিয় সিলেট উন্নত জনপদ হয়ে উঠছে। সিলেট সম্প্রতি শহর। আগে আসে রাজনৈতিক সম্প্রতি। পরে ধর্মীয়। সংকটে, দুর্বিপাকে সিলেটের রাজনীতিকরা সব সময় এক কাতারে এসেছেন। পেশাজীবিরা দমে থাকেননি। ঝাপিয়ে পড়েন সংকটে। করোনায় সব যেনো তছনছ করে দিয়েছে। ঘরে বন্দি থেকে সবাই যার যার প্রাণ বাচাতে ব্যস্ত। আরিফ, নাদেল সক্রিয় ছিলেন। শুরুতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চালিয়েছেন। শেষে নিজেরাই পরাস্থ হলেন করোনার কাছে। পারলেন না। করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন নাদেল। একাই এখন চিৎকার করছেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা। প্রশাসনের কর্মকর্তারা শাসক নয়, সেবক। প্রশাসনের অনেক উচ্চ পদস্থের ভালো ভুমিকা চোখে পড়ছে না। হয়তো মোট আক্রান্তের হিসাব ধরে ঢাকায় রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন সিলেটের আক্রান্তের হার ১০ থেকে ১২ ভাগ। বাসা কিংবা অফিসে বসেই রিপোর্ট করছেন। বাস্তবতা দেখছেন না। না দেখারও ভান করছেন কেউ কেউ।
এখনই প্রয়োজন মাঠের নামার। এখনই প্রয়োজন যুদ্ধের নামার। এই প্রিয় সিলেট আমার, আপনার জীবন, প্রাণ সবকিছু। সব মত, পথ ভুলে এই যুদ্ধে সবাইকে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। এক সঙ্গে নিতে হবে সিদ্বান্ত। কীভাবে চলবো আমরা, আগামীর গতিপথ কী- সেটি খুজ করতে হবে এখনই। লাগাম টেনে ধরতে হবে মহামারী করোনার পাগলা ঘোড়ার। প্রয়োজনে কিছুটা অমানবিক হতে হবে। তা না হলে হয়তো বিদেশে বসে উত্তরসূরীদের কেউ অদূর ভবিষ্যতে লিখবে- সুরমার তীরের প্রিয় শহর সিলেটে একদিন মানব সভ্যতার ইতিহাস ছিলো। মহামারী করোনায় সতর্ক না হওয়ায় তারা হারিয়ে গেছে মহাকালের অতল গহীনে।
লেখক: ওয়েছ খছরু, সংবাদকর্মী, সিলেট।